মো. রবিউল ইসলাম, টঙ্গী (গাজীপুর)

  ০২ আগস্ট, ২০২২

টঙ্গীতে রেললাইনে অবৈধ বাজার ও বিনোদন

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

গাজীপুরের টঙ্গীতে রেললাইনে অবৈধ বাজার ও বিনোদন কেন্দ্র বসায় দুর্ঘটনা বেশি হচ্ছে। এসব স্থানে আইনের কঠোর প্রয়োগ বা জন সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে তেমন কোন কার্যক্রম গ্রহণ করছেনা রেলওয়ে প্রশাসন। ফলে ক্রমশ বারছে ট্রেনে কাটা পরে মৃত্যুর সংখ্যা। দিন দিন ভারি হচ্ছে এই তালিকা।

রেল সূত্রে জানা যায়, গত ১০ জানুয়ারি টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুর রেল ব্রিজসংলগ্ন এলাকা ও আরিচপুর গাজীবাড়ির রেললাইনে পৃথক স্থানে ট্রেনে কাটা পড়ে দুই নারী নিহত হয়। এর কয়েকদিন পর ২২ ফেব্রæয়ারি মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে টঙ্গী পূর্ব থানাধীন মধুমিতা রেল ক্রসিংয়ে অটোরিকশা যাত্রীসহ পার হওয়ার সময় ঢাকা থেকে জয়দেবপুরগামী তুরাগ ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। সে সময় অটোরিকশা যাত্রী নুরে আলম নোমান (৮) নিহত হন। এ দুর্ঘটনায় অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং অটোরিকশার চালক মফিজুল ইসলাম (৩০), আবদুল হাকিম (৩০) নাজমুল ইসলাম (১৬), অজ্ঞাত পুরুষ বয়স অনুমান (৪০) মোট ৪ জন গুরুতর আহত হন। এর কিছু দিন পর ১৩ মার্চ টঙ্গীর বর্নমালা এলাকার রেল গেট পার হওয়ার সময় সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত হন আজাহারুল ইসলাম (৬৫) নামে কৃষি ব্যাংকের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। হরহামেশাই টঙ্গীর আরিচপুর বউ বাজার, মধুমতী রেলগেট, বর্ণমালা রেলগেট ও হায়দাবাত এলাকায় ট্রেনে কাটা পরে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

টঙ্গী রেলওয়ে ফাঁড়ির তথ্য মতে, গত এক বছরে টঙ্গীর আরিচপুর বউ বাজার, মধুমতী রেলগেট, বর্ণমালা রেলগেট ও হায়দাবাত এলাকায় প্রায় ১৮ জন ট্রেনে কাঁটা পড়ে মারা গেছেন। এসব মৃত্যুর অধিকাংশ ঘটনা অসতর্কতার করণে ঘটেছে বলে জানান তারা।

সরজমিনে টঙ্গীর বর্ণমালা রেললাইন ও টঙ্গীর আরিচপুর রেললাইনে দেখা যায়, দুটি স্থানেই মানুষের উপচে পড়া ভিড় থাকে প্রতিনিয়ত। বিশেষ করে বিকেলে থেকে রাত অবধি এসব স্থানে লোকজন বেশি থাকে। আরিচপুর এলাকার রেললাইনের উপর অবৈধ বাজার থাকায় সেখানে টঙ্গী ও উত্তরার সর্বসাধারণ বাজার করতে আসেন। হুটহাট ট্রেন চলে আসলে লাইন থেকে সড়ে দাঁড়ানোর তেমন জায়গা পাশে না থাকায় ঘটে প্রাণহানির ঘটনা। একই অবস্থা টঙ্গীর হায়দ্রাবাদ রেললাইন এলাকার। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত তরুণ তরুণীরা এই এলাকায় ভিড় করেন। কেউ রেললাইনের উপর যত্রতত্র টিকটক ভিডিও বানাতে ব্যস্ত থাকেন। আবার প্রেমিকযুগলরা লাইনের উপর হাত ধরে মশগুল থাকেন। রেললাইনের থেকে একহাত পাশেই চটপটি-ফুচকার বেশ কিছু দোকান। এসব দোকানে বসে চটপটি-ফুচকা খান তারা। এসব দোকানের জন্যও মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

টঙ্গীর বর্ণমালার হয়াদ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা, ফরহাদ মিয়া বলেন, সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রেললাইনের উপর ভিড় জমান তরুণ-তরুণীরা। অনেক সময় লাইনের উপর হাটাহাটি করেন। টিকটক ভিডিও বানান। অসতর্ক সময়ে ঘটে যায় রেলে কাটা পড়ে মৃত্যু।

হায়দ্রাবাদ এলাকায় ঘুরতে আসা ইউসুফ আহমেদ নামের একজন বলেন, পড়ন্ত বিকেল আর পাশেই বিল, আর রেল লাইনের ধার ঘেসে চটপটি-ফুচকার দোকান; সব মিলিয়ে এই জায়গাটি যেনো পর্যটন কেন্দ্রের মত মনে হয় সবার কাছে। বিকেলের সুন্দর সময় উপভোগ আর সূর্যাস্ত দেখতে প্রিয় মানুষের সাথে এখানে এসেছি। সব মিলিয়ে এখানকার পরিবেশ আমাদের কাছে অনেক প্রিয়। এখানে যান্ত্রিক শহরের কোলাহলমুক্ত পরিবেশ পাই আমরা। তাই এখানে ছুটে আসা। যদিও জানি এখানে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বেশি।

সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক গাজীপুর মহানগর শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফ চৌধুরী বলেন, যেভাবে প্রতিনিয়ত হায়দ্রাবাদ রেল গেট, টঙ্গীর আরিচপুর রেলগেটে প্রাণহানির ঘটনা বাড়ছে, এখন থেকে যদি সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশাসন ও সামাজিক সংগঠনগুলো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে ক্রমশই এই তালিকা ভারী হতে থাকবে। আমাদের সকলের উচিত জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করা।

টঙ্গী রেলওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ নূর মোহাম্মদ বলেন, জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। তবুও এসব এলাকায় সাধারন জনগণের চলাফেরার ক্ষেত্রে উদাসীনতার মনোভাব কাজ করে যাচ্ছে। গণমাধ্যমের মাধ্যমে সবাইকে অনুরোধ করবো রেললাইনে চলা ফেরার ক্ষেত্রে বিশেষ সর্তকতা অবলম্বন করার জন্য।

উল্লেখ্য, শুক্রবার চট্টগ্রামের মীরসরাই লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় ১১ শিক্ষার্থী নিহত হয়। এর ঠিক পাঁচ দিন আগে গাজীপুরের শ্রীপুর লেভেল ক্রসিংয়ে রেলের ধাক্কায় প্রাণ যায় ৪ শ্রমিকসহ ৫ জনের। তার ৩ দিন আগে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী কাগদি লেভেল ক্রসিংয়ে ট্রেনের নিচে ভটভটি চলে গেলে নিহত হন ৫ দিনমজুর। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে লেভেল ক্রসিংয়ে ২১ জনের মৃত্যু। আর সেভ দ্য রোডের তথ্য মতে চলতি বছর রেলপথে ১ হাজার ৫২টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৭৮ জন এবং আহত হয়েছেন ১১৭০ জন।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
টঙ্গী,রেললাইনে অবৈধ বাজার,বিনোদন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close