গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ
যমুনার ভাঙনে ঝুঁকিতে নাটুয়াপাড়া রক্ষা বাঁধ
গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলা যমুনায় পানি বাড়তে শুরু করেছে। এর সঙ্গে নদীতে স্রোতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কাজিপুর চরাঞ্চলে দেখা দিয়েছে ভাঙন। এতে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে রয়েছে। তাছাড়াও হুমকির মুখে পড়েছে উপজেলার নাটুয়ারপাড়া রক্ষা বাঁধ। ফলে আতঙ্কে রয়েছে চরাঞ্চলের ছয়টি ইউনিয়নের মানুষ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী জানায়, বর্তমানে যমুনার পানি বাড়তে শুরু করেছে। যমুনার পূর্বে চরাঞ্চলের ছয় ইউনিয়নের প্রবেশদ্বার নাটুয়ারপাড়ায় শুরু হয়েছে ভাঙন। ফলে বাঁধের অভ্যন্তরের প্রায় ২ হাজার একর জমির ফসল যমুনায় বিলীন হবার উপক্রম হয়েছে। ঐ বাঁধে থাকা বেশ কয়েকটি বিদ্যুতের খুঁটি এরই মধ্যে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
যেকোনো মুহূর্তে নাটুয়ারপাড়া রক্ষা বাঁধ ভেঙে হাট-বাজার, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুৎ লাইন ও পাকা রাস্তা নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে চরাঞ্চলবাসী। এছাড়াও ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছে কাজিপুরের দুর্গম চরাঞ্চলের খাসরাজবাড়ী, তেকানী, নিশ্চিন্তপুর, চরগিরিশ ও মনসুর নগর ইউনিয়নের মানুষ। ভাঙন কবলিত নাটুয়াপাড়া রক্ষা বাঁধে গিয়ে দেখা যায়, বাঁধের উভয় পাশেই সমানতালে ভাঙছে।
উত্তর পানাগাড়ী গ্রামের মুদি দোকানদার আব্দুল মতিন বলেন, এর আগেও আমার বাড়ি পাঁচবার ভেঙেছে। এবারও ভাঙনের হুমকিতে রয়েছি। এবার বাড়ি আর দোকান ভাঙলে কোথায় যাব বুঝতে পারছি না। নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাজারের পশ্চিমে মাটির বাঁধটি ভেঙে গেলে চরের ছয়টি ইউনিয়নের বাণিজ্যিক অঞ্চল নাটুয়ারপাড়া হাট-বাজারটি হুমকির মুখে পড়ে যাবে।
এরই মধ্যে যমুনার ভাঙনে ধান ও ভুট্টাসহ বেশ কিছু ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, নাটুয়ারপাড়ার পশ্চিমে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে বেশ কিছুদিন ধরে। অনেক জমি জমা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
কাজিপুর উপজেলা চেযারম্যান খলিলুর রহমান সিরাজী বলেন, যমুনার ভাঙনের বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়কে জানানো হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ পাউবোর ঠিকাদার জিও ব্যাগে বালি ভরে ফেললেও তাতে ভাঙন পুরোপুরি থামানো যাচ্ছে না। সিরাজগঞ্জ পাউবোর উপ-সহকারী প্রকৌশলী হায়দার আলী জানান, বাঁধ রক্ষায় ইতোমধ্যে ৮ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। ভাঙন রোধে আজকে আরো ২ হাজার বস্তা ডাম্পিং করা হচ্ছে।
এদিকে পানি বাড়তে থাকায় ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে চরাঞ্চলের তেকানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাজলগ্রাম, ডগলাস ভেটুয়া সরকারি প্রাঃ বিদ্যালয়, দক্ষিণ চর জগন্নাথপুর সরকারি প্রাঃ বিদ্যালয়।
এলাকার সচেতন মহল মনে করেন, অতিসত্বর ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে একদিকে যেমন চরাঞ্চলের মানুষ পড়বে মহাবিপাকে অপরদিকে শিক্ষা জগৎ থেকে ছিটকে পড়বে শিশু শিক্ষার্থীরা।