পলাশ (নরসিংদী) প্রতিনিধি

  ১০ মে, ২০২২

তদন্ত কমিটি গঠন

১৬ শিক্ষার্থীকে পাইপ দিয়ে পিটিয়ে আহত করলেন অধ্যক্ষ

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

নরসিংদীর পলাশে ১৬ শিক্ষার্থীকে পাইপ দিয়ে পিটিয়ে গুরুত্বর জখম করার অভিযোগ উঠেছে পলাশ থানা সেন্ট্রাল কলেজের অধ্যক্ষ আমির হোসেন গাজীর বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তাকে সাময়িক বহিষ্কারসহ তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

এর আগে সোমবার (৯ মে) বেলা ১১টার দিকে কলেজের শ্রেণিকক্ষে ১৬ জন শিক্ষার্থীকে পাইপ দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে সেন্ট্রাল কলেজের অধ্যক্ষ আমির হোসেন গাজী। এ ঘটনায় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সোমবার রাতে অধ্যক্ষ আমির হোসেন গাজীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানা হেফাজতে নিয়ে যায় পলাশ থানা পুলিশ।

সরেজমিন গিয়ে কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগে ৬টি বিষয়ে পাঠদান হয়। গত রবিবার ৬ষ্ঠ ক্লাসের শিক্ষক পাঠদান করবে না এমন খবরে ক্লাসের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষ থেকে বেরিয়ে যায়। তবে শিক্ষক ক্লাসে এলে কয়েকজন ছাত্র এসে পাঠদানে যুক্ত হন।

পরদিন সোমবার যথারীতি সব শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত হয়ে পাঠগ্রহণ শুরু করে। বেলা ১১টার দিকে কলেজের অধ্যক্ষ আমির হোসেন গাজী অ্যালুমিনিয়ামের পাইপ নিয়ে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে ৬ষ্ঠ ক্লাস না করা শিক্ষার্থীদের দাঁড় করায়। পরে একে একে শাকিব, সিজান, আদনান, সোহেল, শিফাত, নয়ন, তাহসিন, আশরাফুল, আমিরুল ও তাসফিকসহ ১৬ শিক্ষার্থীকে পাইপ দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করেন।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আবার অনেক শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আহতের ছবি পোস্ট করে অধ্যক্ষের বিচার দাবি করেন। যা অল্প সময়ের মধ্যে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়ে যায়।

তাদের মধ্যে স্বাধীনূর রহমান নামে এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লেখেন, শিক্ষকরা গুরুজন, বাবা-মার মতো। সেখানে কলেজের প্রিন্সিপাল হয়ে এইভাবে মারছে। আমার বাবা-মা তথা কেউই কোনোদিন এভাবে মারে নাই। আমি আজ সারাটা ক্লাস শুধু ভাবছি কি হলো আমার সঙ্গে!

তিনি লেখেন, শুধু আমার সঙ্গেই নয়; ক্লাসের অধিকাংশ ছাত্র আজ এই আঘাতের শিকার হইছে কেউ কম বা কেউ বেশি। যেখানে ছাত্রদের ওপর হাত তোলাই নিষেধ, সেখানে একে তো শিক্ষাকে ব্যবসা বানাইছেই তার ওপর এইসব হইতেছে!।

আহত আরেক শিক্ষার্থী শিফাত সাংবাদিকদের বলেন, আমির হোসেন স্যার ক্লাসে তিনটি অ্যালুমিনিয়ামের পাইপ ও পানি নিয়ে ঢুকেছে। আমাদের পাইপ দিয়ে পিটিয়ে ক্লান্ত হলে সেই পানি পান করে আবার পিটিয়েছে। আমরা শিক্ষকের কাছ থেকে এই ধরণের আচরণ আশা করিনি।

কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহসিন, আশরাফুল, আমিরুলসহ একাধিক শিক্ষার্থীরা জানান, পূর্বেও অধ্যক্ষ আমীর হোসেন গাজী স্যার শিক্ষার্থীদের কারণে অকারণে লোহার রড, পাইপ দিয়ে পিটিয়েছেন। স্যারের মার খেয়ে কেউ কেউ হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়েছে। মারধরের প্রতিবাদ করতে গেলে ক্লাস পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেয় প্রতিনিয়ত।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পলাশ থানা সেন্ট্রাল কলেজের অধ্যক্ষ আমির হোসেন গাজী পিটানোর সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের শাসন করেছি। এখন কেউ কেউ এটাকে ইস্যু বানিয়ে পরিবেশ ঘোলা করার চেষ্টা করছে।

পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইলিয়াছ জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সোমবার রাতে অধ্যক্ষ আমির হোসেন গাজীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়। তবে ছাত্র বা ছাত্রদের অভিভাবকরা কেউ এখনো থানায় লিখিত অভিযোগ দেননি।

এদিকে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মিলন কৃষ্ণ হালদার জানান, শিক্ষার্থীদের এভাবে পিটানোর ঘটনা দুঃখজনক। এ ঘটনায় কলেজের অধ্যক্ষ আমীর হোসেন গাজীকে কলেজ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
নরসিংদী,পলাশ,সেন্ট্রাল কলেজ,অধ্যক্ষ,পিটিয়ে আহত,পাইপ
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close