গোলাম মোস্তফা, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১

বাঁধটি সোনার ডিম দেওয়া হাঁস!

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ঝিনাই নদীর শংকারপুর এলাকার বাঁধটি যেন সোনার ডিম দেওয়া হাঁসের মতো। প্রতি বছরই এটি ভাঙবে। কাঁদবে কৃষক। এরপর আবারও দেয়া হবে নতুন করে বাঁধ। আসে নতুন বরাদ্দ, তারপর আবার ভাঙন আবার বরাদ্দ। এভাবে এই বাঁধটির ভাঙা-গড়া খেলা চলছেই।

স্থানীয়রা জানান, ঝিনাই নদীর শংকারপুর বাঁধটির জন্য বছর বছরই সরকারিভাবে বরাদ্দ হয়। কিন্তু হয় না স্থায়ী সমাধান। শেষ হয় না কৃষকেরও কান্না। বরাদ্দের টাকা হয় নয়-ছয়। বছর ঘুরে ঋতু বর্ষা আসে। হয় বন্যা, না হয় অতি বর্ষায় বাঁধটি রক্ষা হয় না। ভাঙনের কবলে পড়বেই।

স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষক জানান, মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরাদ্দ থেকে শুরু করে দেওয়া হয় কাবিখার বরাদ্দ, তবুও বাঁধটি ভাঙে প্রতি বছরই।

এলাকাবাসী জানায়, ঝিনাই নদীর বাঁধটি প্রতি বছর একই স্থানে ভাঙে। অন্যান্য বছরের তুলনায় চলতি বছর বাঁধটি ভেঙে কৃষকের ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি হয়েছে। কোনাবাড়ি, শংকরপুর, হেলনাপাড়া মৌজার প্রায় ২৫০ বিঘা জমির আমন ধান সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে।

কোনাবাড়ি গ্রামের কৃষক মফিজ উদ্দিন জানান, এ বছর দেরিতে বন্যার পানি আসায় নিচু জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম। কিন্তু সামান্য পানির আঘাতে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেল।

মাদ্রাসা শিক্ষক শংকরপুর গ্রামের শফিউল আলম জানান, বাঁধ ভাঙার কারণে তার প্রায় ১৮ বিঘা জমির ধান এখন পানির নিচে। এটি শুধু বাঁধই নয়- গর্জনা, শংকরপুর, দিঘলআটা, বলমআটা, চরবীরসিংহ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের চলাচলেরও রাস্তা। বাঁধটি ভাঙায় মানুষের চলাচলেও দুর্দশার আর অন্ত থাকে না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান বলেন, মাঠ পর্যায় থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে ওই এলাকায় আমন আবাদের ২৫০ বিঘা জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত বছরও ওই এলাকার কৃষক একই কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ২০২০-২১ অর্থ বছরে জরুরী ভিত্তিতে ১০০ মিটার বাঁধ মেরামতের জন্য ৯ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাঁশের খুটি, বালু এবং জিআই তারের টানা দিয়ে কাজ করা হয়। সব টাকাই এখন পানির নিচে।

একই স্থানে ২০২০-২১ অর্থ বছরে কাবিখার ৪টি টিআর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। যার টাকার পরিমাণ দুই লাখ। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, অর্ধেক টাকার মাটি ভরাটের কাজ করা হয়েছে বাকি অর্ধেক টাকার কাজ না হওয়ায় ফেরত দেওয়া হবে।

তিনি আরো জানান, এর আগের অর্থ বছরও ওই স্থানে কাবিখার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঝিনাই নদীর ধারের রাস্তাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোনো বাঁধ নয়। ঘাটাইলের ইউএনও মহোদয়ের অনুরোধে জরুরি ভিত্তিতে বরাদ্দ দিয়ে সংস্কার করা হয়েছিল। ওপরের নির্দেশনা পেলে বাঁধটি আমাদের অধীনে এনে স্থায়ীভাবে কাজ করা হবে।

ইউএনও মো. সোহাগ হোসেন বলেন, উপজেলায় আমি সদ্যই যোগদান করেছি। বাঁধটি পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে স্থায়ী সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পিডিএসও/ জিজাক

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
শংকারপুর বাঁধ,ঝিনাই নদী
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close