গোলাম মোস্তফা, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল)
‘বয়স্ক ভাতা পেতে ৫ হাজার টেহা নাগবো’
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের রহমতখার বাইদ গ্রামে বৃদ্ধা ময়ূরীর বাড়ি। পাহাড়ের পাদদেশে জঙ্গলের ভেতর বনের জমিতে ঝুঁপড়ি ঘরে একাকি তার বসবাস। আশেপাশে তেমন ঘরবাড়ি নেই। ঘরভিটে টুকুও বনবিভাগের সম্পত্তি। বছর পাঁচেক আগে স্বামী ফয়েজ উদ্দিন মারা গেছেন। ময়ূরী এর ওর কাছে হাত পেতে দু’বেলা দু’মোঠো খাবার যোগান।
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার বয়স ৬৮। লাঠিভর করে হেঁটে চেয়ারম্যানের কাছে গিয়েছিলেন বয়স্কভাতার কার্ডের জন্য। তিনি নাকি ৫ হাজার টাকা চেয়েছেন। ময়ূরী জানান, তার স্বামী ছিলেন ফেরিওয়ালা। তিনি ফেরী করে আচার, বাদাম ও বুট বিক্রি করতেন। পাঁচ বছর আগে স্বামী মারা গেছেন।
সন্তানের কথা জিজ্ঞেস করতেই ময়ূরী অশ্রুসজল চোখ আঁচল দিয়ে মুছে বললেন, দুই মেয়া আছাল বিয়া দিছি। বড়ডা ওর বাপ মরার পর আইছাল, আর দেহা নাই। ছোটটা ছয় মাস পরপর আহে। আকাশে মেঘ করলে একা ঝুঁপড়ি ঘরে ভয় পায়, একটু আশ্রয়ের জন্য দৌড়াদৌড়ি করেন। সরকারি কোনো ভাতা তার ভাগ্যে এখনো জোটেনি।
তিনি জানান, মেম্বারের কাছে গেছি বয়স্কভাতার কার্ডের নিগা, দিমু দিমু কইয়া ঘুরায়। চেয়ারম্যানের কাছে গেছি, হে কয় বয়স্ক পেতে ৫ হাজার টেহা নাগবো। পরে যে নাটি ভর কইরা হের কাছে গেছিলাম, হেইডা দিয়া চেয়ারম্যানরে বাইরাবার নিছিলাম। ময়ূরী বলেন, আমি খাই মাইসের কাছে চাইয়া আর হে আমার কাছে চায় টেহা।
মেম্বার ফারুক সিকদার বলেন, ময়ূরী অনেক অসহায় একজন মানুষ, সে বয়স্কভাতার প্রাপ্য। চেয়ারম্যানের কাছে সে চার পাঁচবার গেছে তিনি করে দেননা। পরে কাগজপত্র আমি হাতে নিয়েছি, চেষ্টা করে দেখবো।
দেওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাইন উদ্দিন তালুকদার বলেন, ময়ূরী নামে কাউকে আমি চিনিই না। সব মিথ্যা কথা। ভাতা বাবদ কারও কাছে কোনো টাকা চাইনি।
ঘাটাইল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আসাদুল ইসলাম বলেন, সমাজসেবা অফিসে সেবা পেতে কোনো প্রকার টাকা লাগেনা। বয়স হয়ে থাকলে এমন অস্বচ্ছল নারী অবশ্যই অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভাতা পাওয়ার যোগ্য। আমাদের স্বদিচ্ছা আছে, প্রতিস্থাপনের তালিকায় তার নাম অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করব।
ইউএনও অঞ্জন কুমার সরকার প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, সরকারি যেকোনো ভাতা পেতে টাকা লাগেনা এটা প্রমাণিত হলে চেয়ারম্যানের বা অন্য যেই হোক তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নিব।
পিডিএসও/এসএম শামীম