এস.এইচ.এম. তরিকুল, রাজশাহী

  ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯

একটি স্কুল ঘিরে চলছে ৩ কোচিং সেন্টারের বাণিজ্য

দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস রাজশাহী ডিসির

সরকারি নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দাপটের সাথে এখনও পরিচালিত হচ্ছে কোচিং সেন্টার। একটি নয়, তিন তিনটি। আর ওই ৩টি কোচিং সেন্টার পরিচালিত হচ্ছে একটি হাইস্কুলকে ঘিরেই। ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম পুরান তাহিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়। এটি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় অবস্থিত। ওই বিদ্যালয় পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগের অন্ত নাই।

এত অভিযোগ জেলার আর কোন বিদ্যালয় থেকে উত্থাপিত হয়না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারপরেও অজ্ঞাত কারণে এ বিদ্যালয় পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। যে কারণেই পুরান তাহিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের কর্তাবাবুরা একের পর এক অপকর্ম পরিচালনা করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। উদাসীন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পুরান তাহিরপুর উচ্চ বিদ্যালয় ঘিরে বিভিন্ন কৌশলে সরকারের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ৩টি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রধান শিক্ষকের মদদে এ বিদ্যালয়ের ৩ জন সহকারী শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পরিষদ সভাপতির ছেলের মাধ্যমে এ কোচিং বাণিজ্য পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রশাসন বিষয়টি জানলেও অজ্ঞাত কারণে নিরব ভূমিকায় রয়েছে।

সর্বশেষ চলমান এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফরম পূরণ বাবদ অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠে এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইউসুফ আলী সরদারের বিরুদ্ধে। এ বিদ্যালয় থেকে চলমান এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে ১১৮ শিক্ষার্থী। যাদের সকলের কাছ থেকে বিভিন্ন খাত দেখিয়ে ফরম পূরণের সময় অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়।

এ ঘটনায় প্রতিদিনের সংবাদে প্রতিবেদন প্রকাশের পর জেলা প্রশাসক এসএম আব্দুল কাদের নির্দেশে দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ একটি তদন্ত টিম সে অভিযোগের সত্যতা পায়। পরে ১৪ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত টাকা সেই টিমের মাধ্যমে ফেরত দেওয়া হয়। আর অন্যদের কাছ থেকে আদায়কৃত টাকা স্কুলের বিদ্যুৎ বিল ও কোচিং সেন্টারের বেতনসহ বিভিন্ন খাত দেখিয়ে কর্তন করা হয়।

অভিযোগ তদন্তকালে এসএসসি টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণের সংখ্যা দেখে কপালে চোঁখ ওঠে। কারণ, মাত্র ১৯ জন টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেও ফরম পূরণ করা হয় ১১৮ শিক্ষার্থীর। তখন তদন্ত কমিটি অনুত্তীর্ণদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। কিন্তু বিষয়টি জেনে স্কুল প্রাঙ্গণে অভিভাবকসহ শত শত এলাকাবাসী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে দাবি করেন, তাদের কাছে কোচিং না করার কারণে এসব শিক্ষার্থীদের ফেল করানো হয়েছে। সেসময়

আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের আশঙ্কায় তদন্ত কমিটি সাংবাদিক ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অবগত করে। পরে অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে সকলকেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া হয়। আর প্রধান শিক্ষক ইউসুফ আলী সরদার অভিভাবকদের না জানিয়েই গোপনে প্রাক্তন অফিস সহকারী আব্দুস সাত্তার প্রামানিককে স্কুল পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক করেন। এরপর তারা দুজনে মিলে নানা আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের সত্যতাও পান তদন্ত কর্মকর্তাগণ।

এছাড়াও দেড় বছর আগে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের অজুহাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হলেও তাদের রক্ত পরিক্ষা না করানোর অভিযোগের সত্যতা পান। কিন্তু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অজ্ঞাত কারণে নূন্যতম কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।

অভিযোগ রয়েছে, প্রধান শিক্ষকের মদদে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের ফেল করিয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে কোচিং সেন্টারে ভর্তি হতে বাধ্য করা হয়। যে কোচিং সেন্টারের আয় থেকে প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষা দপ্তর প্রশাসনের একাধিক অসাধু কর্মকর্তা উপঢৌকন পেয়ে থাকেন।

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে পুরান তাহিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইউসুফ আলী সরদার বুধবার প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘কোচিং বাণিজ্যের সাথে আমি জড়িত নয়, যেসব শিক্ষক জড়িত আছে তারা আমার কথা কেন শুনবে। যে কারণেই তাদের নিষেধ করেনি। রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের নামে আদায়কৃত টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য শিক্ষক মতিউরকে বলেছি। না শুনলে আমি কি করবো।’

এ বিষয়ে দুর্গাপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল আলম বুধবার রাতে মুঠোফোনের মাধ্যমে প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘এখনও কোচিং সেন্টার চলছে বিষয়টি আমার জানা ছিল না। এখন জানলাম, কিন্তু ইউএনও স্যার ঢাকায় গেছেন, স্যার ফিরলেই ওইসব কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে দূর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. লিটন সরকার মুঠোফোনের মাধ্যমে প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘দাপ্তরিক কাজে ঢাকায় এসেছি। এখানে এসেই বিষয়টি শুনেছি। ফিরেই ব্যবস্থা নেব।’

এ সম্পর্কে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক (ডিসি) এসএম আবদুল কাদের মুঠোফোনে বলেন, ‘বিষয়টি জানতাম না, এখন জানলাম। ওইসব কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে কঠোর কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
কোচিং বাণিজ্য,রাজশাহী,হাইস্কুল,তাহিরপুর উচ্চ বিদ্যালয়
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close