নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০২ নভেম্বর, ২০১৯

আড়াই মাসে কেজিতে বেড়েছে ১২০ টাকা

পেঁয়াজের কেজি ১৫০ টাকা

হিলিতে ১ কেজির দাম ১১০ টাকা

পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলছে। কমার নাম-গন্ধ নেই। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে মানভেদে এক কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৫০-১৪০ টাকা। হিসাব করে দেখা গেছে, গত আড়াই মাসে প্রতি কেজি পেঁয়াজে দাম বেড়েছে ১২০ টাকা।

তবে মরুভূমিতে একবিন্দু বারিপাতের ঘটনা, হিলি থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, গতকাল সেখানে পাইকারি বাজারে পণ্যটি বিক্রি হয়েছে ১১০-১১৫ টাকা কেজি দরে। ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের বাজারে পণ্যটির দাম জোয়ারের পানির মতো হু হু করে বাড়তে থাকে।

টিসিবি সূত্র অনুযায়ী, গত ৩০ সেপ্টেম্বর বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭২-১০৫ টাকা কেজি। আমদানি করা এ পণ্য বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকা। এরপর এক দিন বা দুই দিন পর পর কেজিপ্রতি ৫-১০ টাকা করে বাড়তে থাকে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সূত্র অনুযায়ী, গত ৮ আগস্ট দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩৫ টাকা আর আমদানি করাটা বিক্রি হয়েছিল ৩২ টাকা কেজি দরে।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, রামপুরা বাজার ও মহাখালী কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, দেশি পেঁয়াজ খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি দরে। অন্যদিকে কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজের যথেষ্ট মজুদ থাকার পরও ১৪০-১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে ভারতীয়, মিসরীয় ও পাকিস্তানি পেঁয়াজ ১৩০-১৪০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে।

সামসুল আলম নামের এক ব্যক্তি বাজার করতে এসেছিলেন রাজধানীর মহাখালীতে। তিনি বলেন, ‘এ যেন দুঃস্বপ্নের দেশে আছি। পেঁয়াজের কেজি ১৫০ টাকা। চিন্তা করতে পারছেন! ডিম ভাজি থেকে শুরু করে সব কিছুতেই পেঁয়াজের ব্যবহার। স্বল্প আয়ের মানুষ কীভাবে বাঁচবে? ৫ কেজি পেঁয়াজ কিনলে এখন কারো হাতে ওইদিনের বাজারের পয়সা থাকে না। বাধ্য হয়ে চাষের মাছ বা ব্রয়লার মুরগি নিয়ে যেতে হয়। কয়েক মাস ধরেই পণ্যটির বাজারে অস্থিরতা চলছে, তার পরও এর কোনো মনিটরিং নেই?’

তিনি আরো বলেন, ‘কয়েক দিন আগে দেখলাম, ভোক্তা অধিকার, ভ্রাম্যমাণ আদালত কসমেটিকসসহ অন্যান্য পণ্যে অভিযান চালিয়েছেন। কিন্তু টিভি ও পত্রপত্রিকায় দেখলাম না ঢাকার কোথাও পেঁয়াজের বিষয়ে অভিযান চালিয়েছেন অথবা পেঁয়াজের দাম কেন বাড়ছে, তার প্রতিকার করতে। এখন কেজিপ্রতি ২০০ টাকা কবে হবে, তার জন্য অপেক্ষা করছি।’

মোতাহার নামের এক ব্যক্তি রামপুরায় বাজার করতে এসেছিলেন। আগে একটি সরকারি চাকরি করতেন। বর্তমানে তিনি অবসর জীবনযাপন করছেন। পেনশন দিয়ে দুজনের সংসার চালান মোতাহার। তিনি বলেন, ‘আমার বর্তমান বয়স ৬৫ বছর। এ জীবনে এই প্রথম এত দাম দিয়ে পেঁয়াজ কিনে খেতে হচ্ছে। কখনো চিন্তাই করিনি, পণ্যটির দাম ১৫০ টাকা কেজি হবে। এক কেজি পেঁয়াজ কিনলে মাছ-সবজি কেনার টাকা হয় না। অবসরপ্রাপ্ত জীবনে কয় টাকাইবা পাই। এমন একটি নিত্যপণ্যের দাম যদি এত হয়, আমরা খাব কী করে? সবারই সপ্তাহের বন্ধের দিনে মাংস বা মাছ খেতে ইচ্ছা করে। কিন্তু পেঁয়াজের দাম ১৫০ টাকা হলে কীভাবে মাছ-মাংস খাব।’

তিনি আরো বলেন, ‘সরকারের কাছে অনুরোধ করছি, যেভাবে হোক সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে পেঁয়াজের দাম আনার চেষ্টা করুন। না হলে অচিরেই ২০০ টাকা দামে চলে যাবে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আড়তের এক বিক্রেতা জানান, দেশে পেঁয়াজের অভাব নেই। দাম বাড়তে পারে এমন তথ্য অনেক ব্যবসায়ীর কাছে ছিল। তারা পেঁয়াজের কৃত্রিম দাম বাড়িয়েছেন। সামনে আরো দাম বাড়ার তথ্য রয়েছে বলে জানান ওই আড়তদার।

তিনি আরো জানান, বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ ১৫০ টাকা কেজি, দেশি হাইব্রিড ১৩৫-১৪০, মিসরীয় ১৩০, পাকিস্তানি ১৪০ টাকাসহ বিভিন্ন দামে বিক্রি হয়েছে।

চলতি বছরের আগস্ট থেকেই হু হু করে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। যা এখন পর্যন্ত ১৫০ টাকায় এসে পৌঁছেছে। এ বিষয়ে ক্রেতা ও সংশ্লিষ্ট সবাই জানান, নিয়মিত বাজারে অভিযান চালালে ও গুদামে সঠিক আইন প্রয়োগ করলে দ্রুত দাম কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিষয়ে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ড. গোলাম রহমান বলেন, দেশে পেঁয়াজের সংকট কোথায়, সেটা বোঝা যাচ্ছে না। কারণ বাজারে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। ভোক্তা তার চাহিদামতোই পণ্যটি কিনতে পারছেন। এমন তো হচ্ছে না, বাজারে পেঁয়াজই নেই! তবে কেন দাম এত চড়া?

ভারত থেকে রফতানি বন্ধের অজুহাত কাজে লাগিয়ে একটি মহল সুপরিকল্পিত কারসাজি করে পণ্যটির দাম বাড়িয়েছে। তারা ‘সংকটের’ কথা বলে ইতোমধ্যে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এত কিছুর পরও সংশ্লিষ্ট বাজার তদারকি সংস্থা দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে ব্যর্থ হচ্ছে। এতে সরকারের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে।

তবে হিলি স্থলবন্দরের পাইকারি ও খুচরা বাজারে কমেছে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম। গত দুই দিনের ব্যবধানে কেজিতে কমেছে ১০ থেকে ২০ টাকা। বাজারে সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে বলছেন বাজারের আড়তদাররা। গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেওয়ায় পর থেকেই হিলিতে লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকে পণ্যটির দাম। তবে গত দুই দিন থেকে আবারও কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে পণ্যটির দাম।

গতকাল বন্দরের আড়ত ও খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১০-১১৫ টাকা কেজি দরে। পেঁয়াজ কিনতে আসা ইয়াছির আরাফাত জানান, পেঁয়াজের দাম অনেকটা বেশি, তবে আজকে কিছুটা কমেছে। এজন্য আজকে একটু বেশি পেঁয়াজ কিনলাম। হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক বাবলুর রহমান জানান, আগের এলসির আটকে যাওয়া পেঁয়াজগুলো বন্দরে প্রবেশ করলে দাম আরো স্বাভাবিক হবে।

পিডিএসও/তাজ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পেঁয়াজ,পেঁয়াজের দাম,কারসাজি,পেঁয়াজ বিক্রি
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close