হাসান ইমন

  ০৬ মার্চ, ২০১৯

অনিশ্চিত হকার পুনর্বাসন

*১০ কোটি টাকার প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে *কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে পুনর্বাসন করতে হবে—মত বিশেষজ্ঞদের

রাজধানীর বিভিন্ন ফুটপাতের হকারদের পুনর্বাসনের নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এরই মধ্যে বিদেশ পাঠানো ও ঋণদানসহ কর্মসংস্থানের নানা উদ্যোগের কথা বলা হয়েছিল। প্রতিশ্রুতির প্রাথমিক পর্যায়ে ১৪টি স্পটের তালিকা করে সিটি করপোরেশন। এরপর সেখান থেকে পাঁচটি স্পটকে অনুমোদন দেয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। হকার পুনর্বাসনের উদ্যোগ হিসেবে হকারদের তালিকা করা হয়। বিদেশে পাঠানোর জন্য বেশ কয়েকজন হকারকে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। কিন্তু সেসব উদ্যোগ কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে। আলোর মুখ দেখেনি আজও। হকাররা অভিযোগ করছেন, প্রতিশ্রুতি দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছেন মেয়র। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের উচিত নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেই হকারদের পুনর্বাসন করা সম্ভব।

হকারদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ডিএসসিসির মেয়র বলছেন, তাদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে তাদের কল্যাণে যেসব প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। রাজধানীর মূল সড়ক ও ফুটপাত দখল করে হকারদের বসা বন্ধ করতে বারবার অভিযান পরিচালনা করে কোনো ফল পায়নি সিটি করপোরেশন। তারই ধারাবাহিকতায় নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০১৭ সালের শুরুতেই রাজধানীর ফুটপাত দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নেন ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন। জনবহুল এলাকা গুলিস্তান, মতিঝিল, পল্টন ও নিউমার্কেটের ফুটপাত থেকে হকারদের উচ্ছেদ করে পথচারীদের জন্য অবমুক্ত করা হয়। ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে নিয়োগ করা হয় স্বেচ্ছাসেবক ও অবসরপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর সদস্যদের। এতে অনেকটা সফল হয় সংস্থাটি। এরপর নগর ভবন ঘেরাওসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন হকাররা। কিন্তু সিটি করপোরেশন তার সিদ্ধান্তে অটল থাকে।

পাশাপাশি উচ্ছেদ হওয়া হকারদের কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা করে ডিএসসিসি। সংস্থাটি জানায়, যদি কোনো হকার ফুটপাত ছেড়ে কর্মসংস্থানের জন্য চাকরি করতে বা বিদেশ যেতে চান তাহলে সিটি করপোরেশন তাদের চাকরি দেবে বা বিদেশ পাঠানোর ব্যবস্থা করবে। করপোরেশনের এমন ঘোষণার পর উচ্ছেদ হওয়া হকারদের অন্তত ৬৯ জন বিদেশ যেতে আবেদনও করেন।

সংস্থাটির এমন সিদ্ধান্তের পর ২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদের অধিবেশনে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেছিলেন, পুনর্বাসনের জন্য হকারদের আবেদন পাওয়ার পর প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শ্রমিক হিসেবে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এমন আশ্বাসের পর ডিএসসিসি কাজ শুরু করে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হকারদের পরিচয়পত্র দেওয়ার কথা ছিল। যেসব হকার বিদেশ যেতে চান তাদের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) মাধ্যমে কম খরচে বিদেশে পাঠানোর কথাও বলা হয়েছিল। এছাড়া যারা করপোরেশনের নিয়ম মেনে ব্যবসা করবেন, তাদের আইডি কার্ডের মাধ্যমে ব্যবসার সুযোগ দেওয়া হবে। চাকরি করতে চাইলেও সুযোগ থাকবে তাদের জন্য। প্রয়োজনে স্বল্পমেয়াদি ঋণ দেওয়া হবে। কিন্তু হকারদের তালিকা তৈরি করা হলেও আইডি কার্ড দেওয়া হয়নি। কোনো হকারকে পুনর্বাসন করা হয়নি। প্রথম অবস্থায় কয়েকজন হকার নেতাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও করপোরেশনের সে সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতা থাকেনি।

হকার নেতারা জানান, পুনর্বাসন কার্যক্রমের মধ্যে ২০১৭ সালের ১২ জুন তাদের নিয়ে একটি সেমিনার করেছে ডিএসসিসি। এছাড়া আর কোনো দৃশ্যমান কাজ তাদের চোখে পড়েনি।

বিদেশ গমনে সাধারণ হকারদের আগ্রহ না দেখানোর কারণ হিসেবে ডিএসসিসির ধীরগতির কাজকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। উচ্ছেদের পর আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও হকারদের বিদেশ পাঠানোর বিষয়ে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখাতে পারেনি সংস্থাটি।

এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, হকারদের পুনর্বাসন না করে তাদের উচ্ছেদ ঠিক হবে না। হকাররা বিদেশ যেতে অনিচ্ছুক, তাই সরকারের এ সংক্রান্ত প্রকল্প ফলপ্রসূ হবে না। এ বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, সরকারকে বরং নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে হকারদের চাকরি নিশ্চিত করতে হবে। ফুটপাতে নতুন করে যেন হকার না বসেন সংস্থাগুলোকে নজর রাখতে হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, হকার পুনর্বাসন নামে ১০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। ওই প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। অনুমোদন না হওয়ায় আমরা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। তিনি আরো বলেন, হকারদের বিদেশ পাঠানোর জন্য আমরা তালিকা তৈরির পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দিয়েছি। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না।

ডিএসসিসি সূত্রে জানা গেছে, গুলিস্তান, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ও দক্ষিণ গেট, স্টেডিয়াম গেট, জিপিও, পুরানা পল্টন মোড়, ফুলবাড়িয়া ও গোলাপশাহ মাজার এলাকায় জরিপ চালিয়ে ২ হাজার ৫০২ জন হকারের তালিকা তৈরি করেছে সংস্থাটি। এছাড়া নিউমার্কেট এলাকায় ৯৩৪ জন হকারের তালিকা করা হয়েছে। তালিকায় হকারদের নাম, ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, ব্যবসার ধরন ও স্থান ইত্যাদি উল্লেখ করা হয়েছে। এসব তথ্য নিয়ে একটি ডাটাবেজ তৈরি করা হয়। এরআগে হকারদের পরিচয়পত্র দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়। হকারদের পরিচয়পত্র দিলে চাঁদাবাজি বন্ধ হবে এবং পর্যায়ক্রমে তালিকাভুক্ত হকারদের সুবিধাজনক স্থানে পুনর্বাসন করা যাবে বলে জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে কিছুদিন পর তাও স্থগিত হয়ে যায়।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
হকার পুনর্বাসন,কর্মসংস্থান,প্রকল্প
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close