বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

  ২৩ জানুয়ারি, ২০২৪

বেনাপোল কাস্টমসে ৬ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৩২৮ কোটি টাকা

চলতি অর্থবছরের গত ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বেনাপোল কাস্টমস হাউসে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৩২৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা। এ সময় আমদানি কমেছে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৩৯০ টন পণ্য।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের ঊর্ধ্বগতি, পণ্যের শুল্কায়ন মূল্যবৃদ্ধি, ভুল এইচএসকোডে জরিমানা- এসব কারণে আমদানিকারকদের অনেকে লোকসানের আশঙ্কায় আমদানি বন্ধ রেখেছেন। দ্রুত সংকট না কাটলে বছর শেষে আমদানির পরিমাণ আরো কমে বড় ধরনের রাজস্ব ঘাটতির কবলে পড়তে হতে পারে। গত ১২ থেকে ১৩ বছর ধরে বেনাপোল কাস্টমসে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতি হয়ে আসছে।

কাস্টমস সূত্র জানায়, ভারত থেকে যেসব পণ্য আমদানি হয় তার ওপর প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের গত ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বেনাপোল কাস্টমসে এ লক্ষ্যমাত্রার পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ১০৫ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে ২ হাজার ৭৭৭ কোটি ৯ লাখ টাকা। এখানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম আদায় হয়েছে ৩২৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা। এ সময় ভারত থেকে পণ্য আমদানি হয়েছে ৮ লাখ ২৪ হাজার ১২৩ টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে (জুলাই-ডিসেম্বর) রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। সে সময় আদায় হয়েছিল ২ হাজার ৬৩২ কোটি এক লাখ টাকা। এখানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি ছিল ৩০৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এ সময় আমদানির পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৮৯ হাজার ৫১৩ টন পণ্য। ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৬ মাসের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এখানে আমদানি কমেছে ১ লাখ ৬৫ হাজার ৩৯০ টন পণ্য এবং রাজস্ব ঘাটতি ২১ কোটি ৯১ লাখ টাকা।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহামুদ বিপুল জানান, বিএনপি, জামায়াতের হরতাল-অবরোধ আর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের খেসারত দিতে হচ্ছে বাংলাদেশকেও। খাদ্যদ্রব্যসহ শিল্প, কল-কারখানার কাঁচামাল ও মেশিনারিজ দ্রব্য আমদানি করতে চাহিদা ডলারের মেটাতে হয় বাংলাদেশকে। কিন্তু বৈশ্বিক মন্দায় ডলারের দাম ঊর্ধ্বগতি আর সংকটের কারণ দেখিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কয়েক মাস ধরে এলসির সংখ্যা কমিয়েছেন। এতে আমদানি কমায় দেখা গেছে রাজস্ব ঘাটতি। তবে আমরা আশাবাদী অর্থবছর শেষে এ সংকট মোকাবিলা করে বাণিজ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমসবিষয়ক সম্পাদক আবদুল লতিফ জানান, এ বন্দর দিয়ে আমদানি কমেছে ৩০ শতাংশ। সংকট কাটাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ হবে। না হলে বিপুল পরিমাণ বাণিজ্য ও রাজস্ব ঘাটতির মুখে পড়তে হতে পারে।

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, বৈশ্বিক মন্দায় ডলার সংকটের কারণ দেখিয়ে ব্যাংকগুলো ডলার দাম অযৌতিক বাড়ানোয় এলসি খুলতে পারছি না। সরকারের নির্ধারিত ডলার রেট থাকলেও বর্তমানে ১০০ ডলারের বিপরীতে ব্যাংক ১২৫ থেকে ১২৮ টাকা পর্যন্ত কাটছে। তারপরও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ প্রতিটি পণ্যের ওপর মূল্য বাড়িয়ে দিচ্ছে। এসএস কোড ভুলের কারণে ২০০ ভাগ জরিমানা আদায় করছে। এর বিরূপ প্রভাবে দেশে কল-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত ও আমদানি পণ্যের মূল্য লাগামহীনভাবে বাড়ার আশঙ্কা বাড়ছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close