নিজস্ব প্রতিবেদক
মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক সংখ্যা ৬ কোটি ছাড়িয়ে
চলতি বছরের মার্চ শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক সংখ্যা ৬ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। এই সেবার মাধ্যমে গড়ে প্রতিদিন লেনদেন হচ্ছে হাজার কোটি টাকা। মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের করা এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১৮টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে মার্চ শেষে মোট নিবন্ধিত মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ কোটি ১ লাখ ৫২ হাজার। তার মধ্যে সক্রিয় হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ২ লাখ ৬২ হাজার। উল্লিখিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৪ হাজার ৬১০ জন। সর্বশেষ মার্চে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন হয়েছে ৩১ হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারিতে এর পরিমাণ ছিল ২৮ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা।
সেই হিসাবে ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে লেনদেন বেড়েছে প্রায় ১০ দশমিক ২ শতাংশ। মার্চে ১৮ কোটি ১০ লাখ ৭ হাজার ৯১৭টি লেনদেন হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মার্চে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১১ কোটি টাকা। উল্লিখিত মাসজুড়ে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবগুলোতে টাকা জমা পড়েছে ১৩ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। উত্তোলন করা হয়েছে ১১ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকা। ব্যক্তি হিসাব থেকে ব্যক্তি হিসাবে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে ৪ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকা।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বিতরণ হয়েছে ৪৭৮ কোটি টাকা। বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ২৪০ কোটি ৯০ লাখ টাকা। কেনাকাটার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ১২২ কোটি ৯১ লাখ টাকা। সরকারি অর্থ পরিশোধ ২৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এছাড়া অন্যান্য হিসাবে লেনদেন হয়েছে প্রায় ৪১৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
জানা যায়, সহজে এবং দ্রুততম সময়ে শহর বা গ্রামে সবখানেই টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। তাই এই সেবায় প্রতিদিনই যুক্ত হচ্ছেন নতুন নতুন গ্রাহক।
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি হয় মানুষ তাদের পরিবার-পরিজন ও নিকটাত্মীয়ের কাছে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে। শুধু তা-ই নয়, বেতনভাতা ও ইউটিলিটি বিল পরিশোধেও এ সেবার ব্যবহার বাড়ছে।
এদিকে এই সেবায় অপব্যবহারও বেড়েছে। বিশেষ করে সন্ত্রাসে অর্থায়ন ও হুন্ডি তৎপরতায় ব্যবহার করা হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিংকে। তাই মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অপব্যবহার ঠেকাতে সম্প্রতি বেশকিছু নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে একজন ব্যক্তি যেকোনো মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় একটি মাত্র হিসাব রাখতে পারবেন।
যাদের একাধিক মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব চলমান রয়েছে, তা বন্ধ করে দিতে হবে। এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থায় দৈনিক ও মাসিক লেনদেনের সীমাও কমানো হয়েছে। এখন একজন গ্রাহক একবারে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা উত্তোলন করতে পারেন। আগে এই হার ছিল ২৫ হাজার টাকা। এখন থেকে গ্রাহক দৈনিক দুই বার এবং মাসে ১০ বার এই সেবা নিতে পারবেন, যা আগে ছিল দৈনিক ৩ বার এবং মাসে ১০ বার। একই সঙ্গে দৈনিক জমার সীমাও পরিবর্তন করা হয়েছে। এতে এখন থেকে দিনে সর্বোচ্চ দুইবারে ১৫ হাজার টাকা করে পাঠানো যাবে, যা মাসে সর্বমোট ২০ বারে এক লাখ টাকার বেশি হতে পারবে না। আগে দিনে ৫ বারে ২৫ হাজার এবং মাসে সর্বোচ্চ ২০ বারে দেড় লাখ টাকা করে জমা করা যেত।
"