শাহ্জাহান সাজু

  ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

অর্থবছরের প্রথম ৬ মাস

বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে ৭০ হাজার কোটি টাকা

আমদানি বাড়ায় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেই বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। আমদানি ব্যয় বেড়েই চলেছে। সে অনুযায়ী বাড়ছে না রফতানি আয়। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিমেম্বর) দেশের পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ডিসেম্বর শেষে মোট বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮৬২ কোটি ৮০ লাখ ডলার বা ৭০ হাজার কোটি টাকা; যার প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে।

এ সম্পর্কে ত্বত্তাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘দেশে পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি বড় বড় প্রকল্পের কাজ চলছে। এ ছাড়া খাদ্য পণ্যও আমদানি করতে হয়েছে। সেজন্য আমদানি বাড়ছে। কিন্তু সে হারে রফতানিতে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হচ্ছে না। এজন্যই বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। তবে ঘাটতিটা বাড়তে থাকলে রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, রফতানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় যতটুকু বেশি, তার পার্থক্যই বাণিজ্য ঘাটতি। চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। অন্যদিকে চলতি হিসাবে ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে সেটা পূরণ করতে হয়। তাই উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। কিন্তু গত কয়েক বছর উদ্বৃত্তের ধারা অব্যাহত থাকলেও গেল অর্থবছরে ঋণাত্মক ধারায় চলে গেছে। ডিসেম্বরেও এ ধারা অব্যাহত রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণসহ বড় বড় প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি বেড়ে গেছে। তাছাড়াও শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি বেড়েছে। এসব কারণেই বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। তবে এ ঘাটতি মেটানো হয় রেমিট্যান্স ও বিদেশি বিনিয়োগ দিয়ে। এ খাতেও শ্লথ গতি। ফলে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট বা বিওপি) ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ডিসেম্বর শেষে ইপিজেডসহ রফতানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে এক হাজার ৭৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় হয়েছে দুই হাজার ৬৩১ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এ হিসেবে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় ৮৬২ কোটি ৮০ ডলার। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। আলোচিত সময়ে, আমদানি বেড়েছে ২৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ। রফতানি বেড়েছে ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। অন্যদিকে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১১ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ফলে চলতি হিসাবে ঘাটতি বেড়ে গেছে।

বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬ অর্থবছর জুড়েই চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল। এতে বৈদেশিক দায় পরিশোধে সরকারকে বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ১৪৮ কোটি ডলার ঋণাত্মক হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ডিসেম্বর শেষে ৪৭৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার ঋণাত্মক হয়েছে। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী এর পরিমাণ প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা, যা এর আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঋণাত্মক ছিল ৫৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আলোচিত সময়ে সেবা খাতে বিদেশিদের বেতন ভাতা পরিশোধ করা হয়েছে ৪৩৪ কোটি ১০ লাখ ডলার। অন্যদিকে বাংলাদেশ এ খাতে আয় করেছে মাত্র ২০৫ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এ হিসেবে ছয় মাসে সেবায় বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২২৮ কোটি ২০ লাখ ডলার, যা গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরের ডিসেম্বরে ছিল (ঘাটতি) ১৫৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ডিসেম্বর শেষে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে চলতি অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) দেশে এসেছে ১০৩ কোটি ডলার; যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১০১ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

আর শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগও বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের আলোচিত মাসে নিট পোর্টফোলিও বিনিয়োগ হয়েছে ২০ কোটি ৯০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist