reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১২ জানুয়ারি, ২০২৪

রাজীব দাশের ‘নিরন্ন ললাট’

কবিতায় চিন্তার পরিচর্যা ও তার প্রতিফলন বুঝতে কবির চিন্তার ক্ষেত্রসন্ধানও জরুরি একটি বিষয়। একজন কবি কবিতা বিষয়-আশয় নিয়ে চিন্তার কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে রাখে সমাজ, দেশ, রাজনীতি এবং মানুষের সাধারণ জীবনালেখ্য। তেমনি একজন কবিতার মানুষ রাজীব দাস। তিনি কবিতা নিয়ে নিরীক্ষা করেন, নিরীক্ষা তার কবিতার মূল চিন্তা। চিন্তার বহিঃপ্রকাশে নির্মাণ করেন কবিতার জগৎ। তিনি কবিতার প্রয়োজনে চিন্তার পরিধি পরিবর্তন করেন সহজে, সহজ করে বলতে পারেন সাধারণ মানুষের কথা। মানুষের জীবনচিত্র আঁকেন। দূরের আলোয় আলোকিত করেন নিজের কবিতা। তিনি ‘প্রয়োজন’ কবিতায় লিখেছেন- ‘তুমি অবিশ্রান্ত সুখের ঋণে কাবুলিওয়ালা জর্দা-পান পোলাও মুখে হেঁটে চলেছো মাঠ-ঘাট আলপথ হয়ে টেকনাফ তেঁতুলিয়া পেরিয়ে সুন্দরবন’। এ পঙ্ক্তিতে এক শ্রেণি মানুষের জীবনচিত্র এঁকেছেন। জীবনযুদ্ধের সময়কাল তার কবিতায় উঠে আসে নীরবে। বিষয়-আশয়ে তার কবিতায় বেশ মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন। ক্ষুধা দারিদ্র্য তার কবিতায় উঠে এসেছে দারুণভাবে। তার কলমে এমন কিছু পঙ্ক্তি রচনা হয়েছে, যা চিরজীবন মানুষের মনে দাগ কেটে যাবে- ‘ললাটে এখনো ক্ষুধার পিদিম জ্বলে/সভ্যতার প্রভাতফেরি ভোরে খড়ম পায়ে এখনো আমাদের হাঁটা হয়নি।/শীর্ণ বুকটা বেদনার হাপর টেনে টেনে ললাট সিঞ্চন ঘামে দিকে দিকে ঘানি সভ্যতা উপহার দিয়ে চলছে।’

মানুষ চলছে ভ্রান্ত বিকেলের বুকে পা রেখে, চলমান পরিস্থিতি কবিতায় আঁকড়ে ধরে কবি, যিনি রাজীব দাস। এ কবির কবিতায় নিম্নশ্রেণির মানুষের জীবনের বহুমাত্রিক জটিলতা উঠে আসে। জটিল সময়ে সহজ করে বর্ণনা করেন। সকাল নিয়ে ভাবনার চেয়ে রাত নিয়ে ভাবা জরুরি। সুখী মানুষকে নিয়েও কবিতা লেখা হয় বা হবে। কিন্তু দেখা অসুখী নিরন্ন মানুষের জীবন নিয়ে সবাই লেখে না। তাদের নিয়েই বেশি লেখালেখি দরকার, তাদের জীবনকে পাঠ করে মানুষ ভালো মানুষ হয়। রাজীব দাস আরো লিখেছেন- ‘আদি সভ্যতার দুটি খড়ম সযত্নে বগলদাবা করে এখনো ছুটে চলেছি, তোমার মনের দুর্মর দুর্বোধ্য হেরেমের চিরবসন্ত সুখের ঋণে।/ঠিক যেভাবে সুদাসলে আমার পূর্বসূরি পরিশোধ করে দিয়েছে কড়া গণ্ডা আনা হিসাব মেনে।/ক্ষুধার্ত দৈত্যের তীব্র ভর্ৎসনা হুংকার হুকুম জি জাঁহাপনা মেনে পেয়েছি নিয়তির খা-ব,/তোমার অবহেলার অলিগলি বনবাদাড় পেরিয়ে চিমনির মুখে সাইরেন বাজিয়ে বুকের টগবগ রক্তে আলপনা এঁকে রাঙিয়েছি রাজপথ।/ভীষণ সময়ের “সততা মাতাল ঘোড়া” টেনে টেনে কাঁধে মাথাপিছু আয়ের নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত জোয়ালের ভারে আগ্রাসী দাদে পার করেছি বছর মাস শুক্লপক্ষ- কৃষ্ণপক্ষের দিন।’

তার কবিতা জীবনকে ছুঁযে যায়, ছুঁয়ে যায় শিল্পের আত্মাকে। এমন কবিতাও হয়, ভাবনার আড়াল থেকে কুঁড়িয়ে আনা জীবনের গল্প শিল্পতে পরিণত করা সবার পক্ষে সম্ভব না। কবি রাজীব দাশ কঠিন কাজটি সহজে করতে পেরেছেন। তিনি নিয়মিত লিখলে বাংলা কবিতার বারান্দায় স্থায়ী বাসিন্দা হতে পারবেন। কবিতার জন্য ভালো কিছু করার প্রত্যয়ে তার ছুটে চলা। তিনি পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত আছেন। তার কাজের ব্যস্ততা ভীষণ।

কবি শত ব্যস্ততার মধ্যে কবিতার জন্য সময় বের করেন, এটি ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। তার চরণ দিয়েই শেষ করছি- ‘খড়ম পায়ে সভ্যতার উইকিপিডিয়া পড়তে পারিনি প্রতিদিন নির্মম ভাগ্য! ক্ষুধার ছোবল বিষে লখিন্দর নিয়তির ভেলা চেপে তখন হয়ে এখনো পার করছি সীমাহীন দুর্গতি দিন।’

* মিলু মাহমুদ

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close