reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৬ মে, ২০২৩

বই আলোচনা : আমিরুল হাছানের কাব্যগ্রন্থ

‘নিয়তির চন্দ্রবিন্দু’ প্রসঙ্গে

স্বভাবজাত ও তরুণ ভাবসমৃদ্ধ কবি-গীতিকার আমিরুল হাছান। গান-কবিতা লেখাই তার নেশা। ২০২৩-এর বইমেলায় বের হয় ‘নিয়তির চন্দ্রবিন্দু’। এতে বায়ান্নটি কবিতা স্থান পেয়েছে। কবির আরো দুটি কবিতাগ্রন্থ রয়েছে- ‘আদবের নাগর’ ও ‘বিলুপ্ত করো বিলাপ’। সম্পাদনা করেছেন ‘স্মৃতির পাতায় মুক্তিযুদ্ধ’।

‘নিয়তির চন্দ্রবিন্দু’র প্রতিটি কবিতাই ভাবসমৃদ্ধ। চিরকালীন প্রেম, প্রণয়, বিরহ, বিচ্ছেদ ও প্রার্থনায় ভরে উঠেছে কবিতাগুলো। আশির দশকের কবি ও লিটলম্যাগ সম্পাদক বদরুল হায়দার লিখেছেন- ‘নিয়তির চন্দ্রবিন্দু কাব্যগ্রন্থের অধিকাংশ কবিতায় দেখা যায় ভাবপ্রবণতা, আত্মবিশ্বাস ও সত্য সন্ধানের আকুতি। আমিরুল হাছান ভাবপ্রবণ কবিসত্তা। কবি তার কবিতায় স্বভাবজাত আবেগ-অনুভূতির মহাসমাবেশ ঘটাতে চেয়েছেন। যেখানে স্বপ্ন ও বাস্তবতা স্থির বিন্দুতে মিলিত হয়। আধ্যাত্মিকতা ও গুরুবাদী দর্শনের বহিঃপ্রকাশ রয়েছে তার কবিতার চরণে চরণে। যেমন- “চলছি আমি কোন পথে/জানা নাই বিধি/তবু খুঁজি মহাজনরে/হয়ে অপরাধী”।’

ইংল্যান্ডের রাজ কবি টেড হিউজ কবিতাকে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে বলেছিলেন- ‘কবিতা হলো এক চিকিৎসার নাম, যার দ্বারা কবিরা পৃথিবীর বেদনা কমান।’ আমিরুল হাছানের কবিতা পাঠকের একটু হলেও বেদনা কমাবে- এ প্রত্যাশা করি।

কবির ‘প্রেমপঞ্জিকা’ কবিতায় খুঁজে পাওয়া যায় প্রেমপ্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির সংজ্ঞার্থ। কবি এখানে প্রকৃতি সচেতন, চিরকালীন সবুজের কাছে নিজেকে বিলীন করে দিতে চান। যেমন- ‘তোমার নূপুরের শব্দের প্রয়াসে/আমি এখন সবুজ ঘাসফুলের শিশির/প্রাপ্তির ফিরতি পথে একরাশ দগ্ধতা...।’

অথবা ‘আগ্নেয়গিরির লাভা স্পর্শের জন্যে ছুটে যাই/দূর থেকে তপ্ততা আমাকে বাধা দেয়/তাপমাত্রার নির্ণয় বোঝার আগেই/আরো কাছে যাই- /ঝলসে যাই পুড়ে যাই কিন্তু/কিসের মোহে ছুটে যাই!’ (আগুন)। এ কবিতা পড়লে বোঝা যায়, কবিরও আছে নিজস্ব আগুন, পতনের মোহে ছুটে যাওয়ার আকুল আবেদন। বারবার যেন প্রেমের কাছেই কবি সমর্পিত আর বারবার আগুনের দিকেই কবির পথ।

কবিতা সব সময়ই ছুঁয়ে দেয় সমকালের আঁচল। মনে আছে, বেশ কবছর আগে ফালগুনী রায়ের একটি কবিতা

পড়েছিলাম- ‘এইখানে সমুদ্র ঢুকে যায় নদীতে নক্ষত্র মেশে রৌদ্রে/এইখানে ট্রামের ঘণ্টিতে বাজে চলা ও থামার নির্দেশ/এইখানে দাঁড়িয়ে চার্মিনার ঠোঁটে/আমি রক্তের হিম ও উষ্ণতা/ছুঁয়ে উঠে আসা কবিতার রহস্যময় পদধ্বনি শুনি-শুনি/কবিতার পাশে আত্মার খিস্তি ও চিৎকার এইখানে।’ কবিরাও চিৎকার দিতে চান, জানান দিতে চান কবিতায় নিজেকেও। কবিরা আসলে প্রেমের কথাই বলেন। প্রেম ও বিনয়ের ভাষা দিয়েই জয় করতে চান পৃথিবী। যেমন আল মাহমুদ বলেন- ‘তুমি যদি খাও তবে আমাকেও দিও সেই ফল/জ্ঞানে ও অজ্ঞানে দোঁহে পরস্পর হব চিরচেনা/পরাজিত নই নারী, পরাজিত হয় না কবিরা;/দারুণ আহত বটে আর্ত আজ শিরা-উপশিরা।’

বাংলা কবিতায় প্রকৃতপক্ষে বাংলা ও বাঙালিত্বের ইতিহাস-ঐতিহ্যও চর্চা করা হয়। খেয়াল রাখতে হয়, কবিতার ভেতর যেন বাসা না বাঁধে কিটের দঙ্গল। তা হলে বাংলা ও বাঙালিত্বের ইতিহাসও বিকৃত হয়, তখন আমাদের অস্তিত্বও বিপর্যস্ত হয়ে ওঠে। এখানে কবি আমিরুল হাছানও হতাশ হননি। নিজস্ব চেতনার প্রদীপ জ্বেলে বারবার ধাবিত হয়েছেন চিরন্তনের পথে, নতুনের পথে, শুদ্ধতম কবিতার পথে থেকেই লিখেছেন প্রেম ও প্রণয়ের কথামালা।

‘পৃথিবীর রাঙা রাজকন্যাদের মতো সে যে চলে গেছে রূপ নিয়ে দূরে।’ জীবনানন্দের এ কবিতার মধ্যে যেমন শৈলী খুঁজে পাওয়া যায়, তেমনি একটি উৎকৃষ্ট কবিতায় শৈলী নির্মাণও খুব জরুরি। আমিরুল হাছানের কবিতাগুলোতে রয়েছে তার নিজস্ব রং, চরিত্রের চাকচিক্য ও আবেগ। কবি তার নিজস্ব জগতে থেকেই লেখেন কবিতা ও গান। ভাববাদ বলি আর বস্তুবাদ যাই বলি না কেন, কবিতায় কবি জয়ের নেশায় নিষ্পাপ। তাইতো তার কবিতা কিংবা গানে বারবার উঠে আসে প্রেম ও প্রণয়- ‘ও মুর্শিদ, মুর্শিদরে/আমায় তুমি তোমার করোরে/কত ভুলো মনে থাকি অবিচল/আমায় তুমি করো তোমার অবিকল/কত স্বপ্নে আসো মেঘের পাশে/বৃষ্টি হয়ে ঝড়ো থাকি আমি আশে/ও মুর্শিদ, মুর্শিদরে/আমায় তুমি তোমার করোরে...।’ (মুর্শিদ)। এখানে কবিও তার মুর্শিদণ্ডপ্রেমে ডুব দিয়েছেন। মুর্শিদের কাছে নিজেকে সঁপে দিয়েছেন, প্রেমে ও ভুক্তিতে আবার অবিকল মুর্শিদও হতে চান কবি।

* মাইন সরকার

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close