বাবুল আনোয়ার

  ১০ মার্চ, ২০২৩

নুসরাত সুলতানা

সুন্দরের অভিযাত্রী এক কবি

নুসরাত সুলতানা কবি ও কথাসাহিত্যিক। কবিতা লিখছেন তাই বলা হয় কবি। গল্প লিখেন তাই বলি গল্পকার বা কথাসাহিত্যিক। তবে লিখলেই তো সবাই কবি হয়ে ওঠেন না। এজন্য পাড়ি দিতে হয় দীর্ঘ পথ। এ পথ তো শুধু পথ নয়। পথে পথে অনেক ধূলিকণা। যেখানে আছে আলো-ছায়ার খেলা। আষাঢ়ের ঘনকালো মেঘের গর্জন, বৃষ্টিময় শীতলতা, বসন্তের বেহুলা বাতাসের উষ্ণতা। কখনো বা চৈত্রের খরা। কবি, শিল্পীদের এ পথ পেরোতে হয় ক্লান্তিহীন অভিযাত্রায়। করতে হয় চর্চা, অভিজ্ঞতা, পর্যবেক্ষণ ও পরিশীলনে নিত্য অবগাহন। আর প্রয়োজনীয় অনুষঙ্গের অপরিহার্য বিন্যাস। আমার মনে হয়, নুসরাত সুলতানা সে পথেই হাঁটছেন। সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে তার মগ্নতা ও পর্যবেক্ষণ আশাবাদী করে তোলে। হৃদয়ে দোলা দেয়।

কবিতার ক্ষেত্রে তিনি যা লেখছেন তার অনেকটাই আশাজাগানিয়া অনুভবের বিচ্ছুরণ। নুসরাতের কবিতা খোলা চোখে দেখা, হৃদয়ের গভীর অনুরাগ ও আবেগের প্রকাশ। কখনো কখনো মানবিক বোধ, পরিশুদ্ধ চিন্তা-চেতনায় উচ্চকিত। অনেকটা অভিমানে, প্রতিবাদী মননের বহিঃপ্রকাশ। তিনি যখন বলেন, ‘তুমি কি নদীটির পাশে গিয়ে- / ফিসফিসিয়ে বলবে না ভালোবাসি?/তুমি কি এ পৃথিবীকে প্রজাপতির/অভয়ারণ্য বানাবে না?/যদি তা না পারো।/জেনে রেখ নিশ্চিত- /এই পৃথিবী কেবল দানবের গানই গাইবে। (দানবের গান, মহাকালের রুদ্র ধ্বনি)। নুসরাতের অনেক কবিতায় সমাজ বাস্তবতার চিত্র ফুটে উঠেছে। এসবের ক্ষেত্রে তার প্রকাশ ঘটেছে সরলবোধ ও শানিত চেতনার অক্ষরে। যেমন- ‘যুগে যুগে নারী ভালোবাসার জন্য- /ঘর ছেড়েছে, বর ছেড়েছে, সমাজ ছেড়েছে।/পুরুষ কবে কী ছেড়েছে বলতে পারো?/বরাবর নারী-পুরুষের চাইতে সহস্রগুণ বেশি বিপ্লবী।/পুরুষ সংস্কারের স্রষ্টা আর নারী তার নিষ্ঠুরতম শিকার।’ (সংস্কার, মহাকালের রুদ্র ধ্বনি) তবে এ ধরনের লেখায় সর্বজনীন সমর্থনের অভাব কিছুটা রয়েছে বলে মনে হয়। কবিতার ক্ষেত্রে তার নির্মাণ অন্তর্গত তাগিদ, সমকালীন বিপন্নতা, সামাজিক অসংগতি ও বিরূপতার বিপক্ষে।

নুসরাত কবিতার পাশাপাশি গল্পও লিখছেন। ‘মৌতাত’ নামে প্রকাশিত গল্পগ্রন্থের ৯টি গল্পের মধ্যে তিনি সে বার্তাই দিয়েছেন। গল্পগুলোর বিষয়বস্তু সমকালীন জীবনের নানা টানাপড়েন। যেখানে তিনি সাবলীল স্বতঃস্ফূর্ততায় নিরবচ্ছিন্ন। তার ভাষা একজন জাত শিল্পীর মতোই গতিময়, হৃদয়গ্রাহী। যখন তিনি বলেন, ‘তখন একটা ভীরু হরিণ-শাবক কোনো এক সবুজ অরণ্যে মনের সুখে বিচরণ করছিল। শুধু নিয়তির ক্রুর হাসিতে সে পালানোর কোনো পথ খুঁজে পাচ্ছে না আর (ক্রুর হাসি, মৌতাত) এমনি করেই নুসরাত তার সৃষ্টিকর্মে জীনববোধের চিত্র তুলে ধরতে সচেষ্ট।

নুসরাত সুলতানা কবিতা তথা তার সৃষ্টিকর্মে জীবন ও মানবিকতার পক্ষে যে জয়গান গেয়েছেন, তা আগামীতে আরো বিস্তৃত হবে। শুভবোধের ছোঁয়ায় স্পর্শ করবে দিগন্ত। সুন্দরের অভিযাত্রী কবির প্রতি আমাদের ভালোবাসা ও অশেষ শুভেচ্ছা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close