reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৪ জানুয়ারি, ২০২৪

সুলতান মাহমুদের হাসির গল্প

প্রাইভেট শিক্ষক

আমি তখন সখিপুর মুজিব কলেজের ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। প্রথম বর্ষে বাড়ি থেকে সাইকেল নিয়ে বা বাসে করে ক্লাস করলেও বিজ্ঞান বিভাগের পড়ালেখার চাপে সখিপুর গোডাউনের পেছনে একটা মেস নিয়েছিলাম। আমরা দুই ভাই একই ক্লাসের ছাত্র হওয়ায় একজন এক বিষয়ে প্রাইভেট পড়লে আরেকজন অন্য বিষয়ে প্রাইভেট পড়তাম। বাসায় এসে নিজেরা একে অন্যকে আবার প্রাইভেট পড়াতাম। তাতে আমাদের বেশ উপকার হতো। কেউ কোনো বিষয়ে কম বুঝলে তা শোধরে নেওয়ার সুযোগ পেতাম। আমাদের কলেজে তখন বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাসের হার খুব কম ছিল। তাই আমরা যে বাসায় থাকতাম সেই বাসার অনেকেই (সুন্দরী মেয়েরা) মনে করত আমরা অযথাই বিজ্ঞান বিভাগে পড়ছি। তিন, চার বছরেও হয়তো পাস করতে পারব না। এ রকম মনে করার কারণ ছিল, সেই বাসার এইচএসসি পড়ুয়া এক মামা। তিনি পাঁচ বছরেও রসায়ন আর পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ের গ্যাঁড়াকলে এইচএসসি পাস করতে পারেননি। তিনি নিজে পাস করতে না পেরে সবার কাছে বলে বেড়িয়েছেন যে, এইচএসসির বিজ্ঞান বিভাগে পাস করা খুব কঠিন। সে সময় তাদের অপমানজনক টিপ্পনীর জন্য মনে মনে আরো জেদ চেপেছিল, যেভাবেই হোক ভালো রেজাল্ট করে উপযুক্ত জবাব দিতে হবে।

আমি গণিত স্যারের বাসায় ১০ জনের একটা ব্যাচে প্রাইভেট পড়া শুরু করলাম। সকাল ৭টার সময় প্রাইভেট ক্লাস শুরু হতো। স্যার ক্লাসে আমাদের কম পড়ালেও প্রাইভেট পড়ানোর সময় খুব যত্ন নিয়ে বোঝাতেন। শীতকালে কনকনে ঠাণ্ডায় মোটা কাপড় গায়ে জড়িয়ে সকালবেলা প্রাইভেট পড়তে যেতাম। এক দিন সকালে আমরা সবাই স্যারের বাসায় উপস্থিত অথচ স্যার কোনো ধরনের নোটিস না দিয়েই অনুপস্থিত। শীতের সকালে আরামের ঘুম হারাম করেও প্রাইভেট পড়া হলো না। পরদিনও স্যারের বাসায় গিয়ে জানতে পারি স্যার বাসায় নেই অথচ আমাদের কেউ কিছুই জানায়নি। স্যার না থাকায় আমরা সবাই যে যার মতো রাগ করতে লাগলাম। আমি একটা চিরকুট লিখে সবার সম্মতি নিয়ে স্যারের টেবিলে পেপার ওয়েটে চাপ দিয়ে রেখে এলাম। পরদিন যথারীতি সবাই স্যারের বাসায় হাজির। স্যার আসতেই সবাই সালাম দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। কিন্তু স্যার অগ্নিমূর্তি রূপ ধারণ করে ধমকের সুরে সবাইকে দাঁড়িয়ে থাকতে বললেন। তারপর স্যার চেয়ারে বসেই সবার উদ্দেশে হুঙ্কার ছুড়লেন, চিরকুটটা কোন বদমাশ লিখেছে? আমি ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলাম। অন্যরা আড় চোখে আমাকে ইশারা করল। স্যার আবার জোরে ধমক দিয়ে সবাইকে ক্লাস থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দিতেই একজন আমার নাম বলে দিল।

স্যার এবার আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘আমি আগেই অনুমান করেছিলাম, এ রকম বদমাশি কে করতে পারে। তোমার আর আমার কাছে পড়তে আসার দরকার নেই। স্যারের সঙ্গে বেয়াদবি করা ছাত্রকে আমি কক্ষনো ক্ষমা করি না। আজ থেকেই তোমার প্রাইভেট পড়া শেষ। এক্ষুণি আমার চোখের সামনে থেকে দূর হয়ে যাও।’

আমি অনেক কাকুতি-মিনতি করেও স্যারের মন গলাতে না পেরে বাসায় চলে এলাম। কিন্তু আমি এত সহজে হারার পাত্র নই। অন্য একটা বুদ্ধি পাকিয়ে বিকেলে আবার স্যারের বাসায় গেলাম। কলিং বেল টিপতেই কাজের মেয়ে গেট খুলে দিল। আমাকে দেখেই বলল, স্যার তো বাসায় নেই। আমি মনে মনে খুশি হয়ে ম্যাডামের কথা জিজ্ঞেস করতেই কাজের মেয়ে হ্যাঁ-সূচক জবাব দিল। আমি ড্রয়িং রুমে বসলাম। কিছুক্ষণ পর ম্যাডাম এলে কুশলাদি বিনিময় করে মাসের ১০ দিন হলেও পুরো মাসের বেতনের সঙ্গে পাঁচ শ টাকা বাড়িয়ে ম্যাডামের হাতে দিলাম। ম্যাডাম আশ্চর্য হয়ে বলল, তোমাদের স্যার তো বলেছে তোমরা আরো কম টাকা বেতন দাও। আমি সুযোগ পেয়ে ম্যাডামের সহানুভূতি পাওয়ার জন্য স্যারের ব্যাপারে সবকিছু একটু বাড়িয়ে বাড়িয়ে বললাম। ম্যাডাম খুশি হয়ে আমাকে চা, নাশতা খেতে দিলেন। স্যারের ব্যাপারে বিভিন্ন কথা জানতে চাইলেন এবং নিজেও স্যারের ব্যাপারে অনেক কিছু বললেন। আমি কথার ফাঁকে ফাঁকে ম্যাডামের বিভিন্ন পছন্দণ্ডঅপছন্দ নিয়ে প্রশংসা করতে লাগলাম। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ আলাপ-আলোচনার পর আমার হাতে ২০০ টাকা দিয়ে বাজার থেকে আদা আর রসুন এনে দিতে বললেন। আমি খুশি মনে বাজারে গেলাম আর বুদ্ধি করে স্যারের ছোট্ট মেয়ের জন্যও কিছু মজা কিনে আনলাম। ম্যাডামে এবার আমার আরো বেশি খুশি হলেন। স্যারের বাসা থেকে বিদায় নেওয়ার সময় ম্যাডাম বললেন, ‘মাঝেমধ্যে বাসায় এসে তোমার স্যারের সব ঘটনা আমাকে খুলে বলবে। আর কাল সকালে তুমি প্রাইভেট পড়তে এসো। তোমার কোনো ভয় নেই, আমি সব ম্যানেজ করব।’

আমি খুশি মনে নাচতে নাচতে মেসে এসে নিশ্চিন্ত মনে একটা ঘুম দিলাম।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close