চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি

  ২২ এপ্রিল, ২০২৪

ব্যবস্থাপনা কমিটি নেই ৬ বছর, কার্যক্রম স্থবির

যশোরের চৌগাছা উপজেলার স্বরূপদাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছয় বছর ধরে নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি নেই। ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া হলেই শুরু হয় রাজনীতি। সেই সঙ্গে অভিযোগের ফাইলে বন্দি হয়ে পড়ছে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া। একটি চক্রের কখনো অভিযোগ, কখনো মামলার কারণে কমিটি গঠন করা সম্ভব হচ্ছে না। নিয়মিত ব্যবস্থাপনা কমিটি না থাকায় প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়ন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।

এলাকাবাসীর দাবি, স্বরুপদাহ গ্রামের সানোয়ার হোসেন বকুল, মাহবুবুল আলম রিংকু ও আব্দুস সালামের রোষানলে পড়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। তাদের কারো সন্তান বা পরিবারের কেউ এখানে লেখাপড়া করে না। অথচ তারা সভাপতি হওয়ার জন্য মরিয়া। ভোটের মাধ্যমে তাদের কারো সভাপতি হওয়ার সুযোগ নেই। সাধারণ অভিভাবক, শিক্ষকরা কেউ তাদের সমর্থন করেন না। সেই কারণে তারা ঈর্ষান্বিত হয়ে বার বার কমিটি গঠনে বিপক্ষে অবস্থান নেন। কখনো মামলা বা কখনো ছোটখাটো ইস্যুকে বড় করে টেনে ভোটগ্রহণের পথে বড় অন্তরায় সৃষ্টি করেন। সর্বশেষ আগামী ৫ মে ভোটগ্রহণের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ২১ মে চৌগাছা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ইস্যুকে সামনে নিয়ে তারা ভোট গ্রহণের বিপক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেন। স্থানীয় নির্বাচনে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা বা কোনো সমবায়-সমিতির নির্বাচন বন্ধ করার কোনো বিধান নেই। কিন্তু ওই চক্রের ষড়যন্ত্রের জন্য এবারও ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে গেছে।

এদিকে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোবাইলে আব্দুস সালাম বলেন, ভোট হোক এটা চাই। আমি ভোটারের পক্ষে।

প্রতিষ্ঠানের দাতা সদস্য জহুরুল ইসলাম বাবু বলেন, বকুল, রিংকু ও সালাম চক্রের ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছে স্কুলটি। তাদের পরিবারে কোন সন্তান এখানে লেখাপড়া করে না। ম্যানেজিং কমিটির ভোটের সময় হলে তারা বিভিন্নভাবে টালবাহানা শুরু করেন। তারা তিনজনই পর পর তিন টার্ম সভাপতি ছিলেন। নিয়োগ বাণিজ্য, দুর্নীতি ছাড়া কিছুই করেননি। জনসমর্থন হারিয়ে তিনজন এক হয়ে সবসময় ভোট বন্ধের পক্ষে অবস্থান নেন। প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক তরিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংস হওয়ার উপক্রম হয়েছে। আব্দুস সালাম নিজে খুব বেশি সামনে থাকেন না। বকুল ও রিংকুকে ব্যবহার করে মূল কলকাঠি নাড়েন তিনিই।

প্রতিষ্ঠানের আরেক অভিভাবক মোহাম্মদ জনি বলেন, এই চক্রটি গ্রামে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে দেউলিয়া। সাবেক তিন সভাপতি মিলেও ভোটে জয়ী হওয়ার সম্ভবনা নেই। তাই ভোটের মাঠে না যেয়ে ভোট বন্ধ করার জন্য তারা সব সময় প্রস্তুত থাকেন। এছাড়া মোহাম্মদ লাল্টু, কামাল হোসেন, নার্গিস খাতুন, রেজাউল ইসলাম, দেল কদর, শরিফুল ইসলাম, মোহাব্বেল হোসেন, রোকুনুজ্জামানসহ অভিভাবকরা বলেন, গ্রামের সাধারণ মানুষের পক্ষে সরোওয়ার উদ্দিন কাজ করেন। মূলত তার একটি প্যানেল হওয়ায় ওই চক্রটি ভয় পাচ্ছে। কারণ তারা নিজেরাই জানে জয়ী হতে পারবে না। তাই সরোওয়ারের বিপক্ষে অপপ্রচার চালাচ্ছে ও সেইসঙ্গে লিখিত অভিযোগ দিয়ে ভোট বন্ধ করেছে।

প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ফজলুর রহমান বলেন, ছয় বছর ধরে তার প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি নেই। একটি চক্র কখনো জাতীয়, কখনো স্থানীয় নির্বাচনের দোহাই দিয়ে ভোটগ্রহণ বন্ধ করার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করছেন। তাছাড়া ছোটখাটো বিষয়ে সাময়িকভাবে মামলা করেও তারা ভোটগ্রহণ বন্ধ করেছেন। এসব কারণে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হচ্ছে। দ্রুত ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম মো. রফিকুজ্জামান বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাকে লিখিত নির্দেশনা দিয়েছেন। পরবর্তী নির্দেশনা ও ভোটের পরিবেশ এলে নিয়মিত কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুস্মিতা সাহা বলেন, বর্তমানে স্বরুপদাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আহ্বায়ক কমিটিতে আমি সভাপতির দায়িত্বে আছি। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের পর আশা করা যায় নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি গঠন করা সম্ভব হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close