কনক দেব, শিবগঞ্জ (বগুড়া)

  ২৮ জানুয়ারি, ২০২৪

বগুড়ার শিবগঞ্জ

দখলদারত্ব ও নাব্য সংকটে করতোয়া-নাগর ও গাংনাই

৩০ ভাগ দখল, ৪০ ভাগ খননের অভাবে নাব্য হারিয়েছে নদীগুলো * করতোয়া, নাগর ও গাংনাই নদীতে পানি নেই ২০ ভাগও * দখলদারত্ব রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস ইউএনওর

বগুড়ার শিবগঞ্জে করতোয়া, নাগর ও গাংনাই নদী দখল এবং নাব্যতা সংকটে ক্রমশ হারাচ্ছে তাদের রূপ। নদীগুলো থেকে অবৈধভাবে মাটি কেটে নেওয়া, বলু উত্তোলন, নদীর জায়গায় চাষাবাদ ও নাব্যতা সংকটের কারণে নদীর গতিপথ ও পানি প্রবাহ কমে গেছে। ফলে অনেকটা মরা নদীতে পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছে এসব নদী। পানি না থাকায় পৌষের প্রথম থেকেই স্থানীয় কৃষকদের বোরো ধানের বীজতলা ও আগাম ধান চাষে আগ্রহী করে তুলেছে নদীগুলো। পাশাপশি বিলীন হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এসব নদীর প্রায় ৩০ ভাগ দখল ও ৪০ ভাগ খননের অভাবে নাব্যতা হারিয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চৈত্র মাস আসার আগেই করতোয়া, নাগর ও গাংনাই নদী পানি শূন্যতায় ভুগছে। ২০ ভাগও পানি নেই। আশির দশকে এসব নদীতে মাঝিরা কর্মব্যস্ত খেয়াঘাটে মনুষ পারাপার করত, জেলেরা মাছ ধরত। নৌকা চলত। নদীপথেই ধান, পাটসহ নানা রকমের কৃষি ফসল শিবগঞ্জ, দাড়িদহ, কিচক, উথলী ও মহাস্থান হাটে বেচাকেনার জন্য মানুষ নিয়ে আসতো। লক্ষ্য করলে দেখা যায় শিবগঞ্জের পুরনো বড় হাটগুলো করতোয়া, নাগর ও গাংনাই নদীর কুল ঘেঁষেই অবস্থিত।

অপরদিকে, গাংনাই নদী দৈর্ঘ্য ১০ থেকে ১২ মাইল। এ নদীতে সব ঋতুতে পানি থাকে না। এছাড়া করতোয়ার শাখা নদী নাগর বগুড়া জেলার অন্যতম নদী। এটি শিবগঞ্জ থানার আটমূল ইউনিয়নস্থ জগদীশের নিকট করতোয়া থেকে বের হয়ে প্রায় ১০ মাইল বগুড়া ও জয়পুরহাট জেলা সীমানা বরাবর প্রবাহিত হয়ে দুপচাঁচিয়া থানায় প্রবেশ করে। নদীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৫ মাইল।

নদীগুলোর পাড়ে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে বীজতলা, ধানের আবাদ ও আলুর খেত। বর্ষার পলি পড়ে নদীগুলোর ৭০ শতাংশ এখন চাষের জমিতে পরিণত হয়েছে। নদীর মাঝখান দিয়ে এখন নালার মতো করে পানি জমে আছে। কোথাও আবার সামান্য একটু অংশজুড়ে হাঁটু পানি। উপজেলার নাগরব্রিজ, অর্জুনপুর, আমতলী, দেবপুর, গুজিয়া, ভাগকোলা, আচলাই, আরাজী পার আচলাই, মুরদাপুর, আলোকদিয়া, করতকোলা, অনন্তবালা, কৃষ্ণপুর, চান্দার, পাতাইর, চককানু, চক গোপাল, নাটমরিচাই, বানাইল, মাটিয়ান, গোপীনাথপুর ও আটমূল এলাকায় গেলে চোখে পড়ে এসব দৃশ্য।

কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, নদী শুকিয়ে যাওয়ায় এ বছর সেখানে ধানের চারা রোপণ করেছি। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো থাকলে ছয় মাসের খোরাক ঘরে তুলতে পারব। জ্যৈষ্ঠ মাসের আশায় থাকলে অনেক সময় ধান ঘরে তোলা যায় না। সেই সময় নদীতে বৃষ্টির পানি চলে আসে।

কৃষক শফিকুল, শহিদুল ও আলমগীর বলেন, নদীতে উর্বর পলি মাটি থাকার কারণে সার খৈলের প্রয়োজন হয় না। সময়ের বির্বতনে ঐতিহ্যবাহী করতোয়া নদী পানিশূন্য হয়ে পড়ায় এলাকার অধিকাংশ কৃষকরা নদীতে বীজতলা তৈরি করে বোরো ধানের চারা উৎপাদনের জন্য ধানের বীজ বপন করে। তারা এতে উপকৃত হলেও এলাকার জেলে ও মাঝিরা পূর্বপুরুষদের পেশা ছেড়ে অন্যান্য পেশায় জীবিকা নির্বাহ করছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে নদীতে পলি জমে ভরাট হওয়ার কারণে নাব্যতা হারাচ্ছে নদীগুলো। পানি শুকিয়ে যাওয়ায় এলাকার কৃষকেরা নদীতে ধান বীজ ও ধান ও আলু রোপণ করেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নদীগুলো খনন এবং অভিযান পরিচালনা করে দূষণ ও দখলদারত্ব রোধের কার্যকারী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close