জহির রায়হান, কাউনিয়া (রংপুর)

  ০৮ জানুয়ারি, ২০২৪

রংপুরের কাউনিয়া

শুকনো তিস্তায় কষ্টে পেশাজীবীরা

শুষ্ক মৌসুমে নদী এলাকায় শ্যালো মেশিন দিয়ে ভূ-গর্ভস্থ পানি তুলে চাষ * চরে চাষাবাদের প্রণোদনা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ * তিস্তা মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি

দেশের এক সময়ের প্রমত্তা নদী তিস্তার অনেক স্থান এখন প্রায় শুকিয়ে গেছে। হেঁটেই পার হওয়া যায় এই নদী। তিস্তার বুকে জেগে উঠেছে বালুচর। ফলে পেশা বদলে গেছে নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের। বর্ষায় উজান থেকে ছাড়া পানিতে ভেঙে যায় নদীপাড়ের ফসলি জমি ও বাড়ি-ঘর, কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে নদী এলাকায় শ্যালো মেশিন দিয়ে ভূ-গর্বস্থ পানি তুলে চাষ করতে হয়। এ অবস্থায় তিস্তা মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি তাদের।

ভারতের হিমালয়ের ৭ হাজার ২০০ মিটার উঁচু চিতামু হ্রদ থেকে তিস্তার উৎপত্তি। নদীটি দার্জিলিংয়ের গিরিসস্কটের মধ্যে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের সমভূমিতে প্রবেশ করেছে। পরে জলপাইগুড়ি পেরিয়ে নিলফামারীর সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের ভেতর ১২৫ কিলোমিটার প্রবাহিত হয়েছে নদীটি।

কাউনিয়ার বালাপাড়া ইউনিয়নে তিস্তা নদীর চরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, নদীর বুকে জেগে ওঠা ধু ধু বালুচরে এখন সবুজের সমারোহ। পায়ে হেঁটেই তিস্তা পাড়ি দিচ্ছে দুই পাড়ের বাসিন্দারা। পানি সল্পতার কারণে নৌকা না চলায় চরে উৎপাদিত ফসল ঘাড়ে ও মাথায় করে বিক্রির জন্য বাজারে আনতে হচ্ছে। বাজারহাটের বুড়িরহাট ও শরিসাবাড়ি থেকে পায়ে হেঁটেই বেশির ভাগ মানুষ নদী পাড়ি দিচ্ছে।

ঘাড়ে করে ফসল নিয়ে আসা আবেদ আলী জানান, নদীতে এখন কোথাও হাঁটুপানি, কোথাও আরো কম। একাধিকস্থানে পথ তৈরি হয়েছে। কোথাও হেঁটেই যাওয়া যায়, আবার কোথাও সামান্য একটু নদী নৌকা দিয়ে পার হতে হয়।

এদিকে চার জেগে ওঠায় তিস্তাপাড়ে নেই আগের মতো মাঝি-মাল্লাদের ডাকহাক। নেই জেলেদের মাছ ধরার কর্ম ব্যস্থতা। সব মিলে তিস্তাপাড়ের জীবন-জীবিকা যেন থমকে দাঁড়িয়েছে নিরাশার বালুচরে।

নিজপাড়া গ্রামের জেলে সত্যবাবু বলেন, ‘আগে তিস্তা নদীতে দিনভর মাছ ধরে বিক্রি করে সংসার সুখেই চলত। এখন নিজের খাবার মাছটুকুও নেই। মাছ না থাকায় অনেক জেলে পেশা পরিবর্তন করেছেন। যারা রয়েছেন তাদেরও সংসার চলে অনাহারে অর্ধহারে। প্রতিদিনেই পানি কমতে কমতে নদী শুকিয়ে এখন আবাদি জমিতে রূপ নিয়েছে।’

তিস্তা চরাঞ্চল ঢুসমারা চর গ্রামের কৃষক কোব্বাত আলী বলেন, ‘বর্ষাকালে পানির প্রয়োজন নেই। তখন ব্যাপক হারে পানি ছেড়ে ভারত আমাদের ফসল ও ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়। আবার শুস্ক মৌসুমে যখন পানির প্রয়োজন তখন পানি পাই না। চাষিরা এখন বিকল্প উপায় হিসেবে নদীতে শ্যালো-মেশিন বসিয়ে পানি দিতে হচ্ছে।’

খেয়া ঘাটের মাঝি রফিকুল বলেন, ‘মূল নদীতে হাঁটুর নিচে পানি, তাই হেঁটেই পাড় হওয়া যায়। বাকি নদী জুড়ে ধু ধু বালুচর। নৌকা চালানোর মতো পানি নেই এখন। তাই যাত্রীর অভাবে নৌকা তুলে রেখেছি।’

গদাই চরের কৃষক আলামিন জানান, নদী শুকিয়ে যাওয়ায় চরে এখন বিভিন্ন ফসলের চাষ হচ্ছে। চরের পলি ও দো-আঁশ মাটিতে চাষাবাদ হচ্ছে পিঁয়াজ, রসুন, বাদাম, মিষ্টি কুমড়া, ভুট্টা ও গমসহ নানা জাতের ফসল। তবে নদীতে পানি কমে যাওয়ায় বোরো চাষিরা বিপাকে রয়েছেন সবচেয়ে বেশি।

জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানাজ পারভীন বলেন, ‘গত কয়েক বছর থেকে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানি প্রবাহ থাকে না। ফলে কৃষকেরা বিপাকে পড়ছে। তবে তিস্তার জেগে ওঠা চরে কৃষি বিভাগ থেকে প্রণোদনার মাধ্যেমে কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ করা হচ্ছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close