বেড়া-সাঁথিয়া (পাবনা) প্রতিনিধি

  ১৫ মে, ২০২২

চরে গো-খামারে দিনবদল

পাবনা বেড়া উপজেলার নদীভাঙনে শত শত পরিবারের একসময় বসতভিটা ছিল না। উপজেলার পদ্মা-যমুনার বুকে জেগে ওঠা চরে বসতি গড়ে তোলেন তাদেরই মতো একজন আলম প্রামাণিক। তিনি উপজেলার চরনাকালিয়া গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নেন। ১০ বছর আগে অন্যের জমিতে কামলা খেটে ও বর্গাচাষি হিসেবে কাজ করে কোনো রকম সংসার চালাতেন। বর্তমানে তার ঘরবাড়ি, জমিজমা সব হয়েছে। এলাকায় তিনি এখন অন্যতম সচ্ছল মানুষ। এই কয়েক বছরে তার সম্পদের পরিমাণ অন্তত ১০ লাখ টাকা।

জানা গেছে, পদ্মা ও যমুনার চরে নীরব বিপ্লব ঘটিয়ে চলেছেন নদীভাঙা মানুষেরা। এক সময় যে নদী ছিল তাদের দুঃখের কারণ, সে নদীর বুকে জেগে ওঠা চরই এখন বদলে দিয়েছে তাদের ভাগ্য। তারা ফলাচ্ছেন বিভিন্ন ধরনের ফসল। এর সঙ্গে গড়ে তুলেছেন ছোট ছোট গো-খামার। এসব খামার বদলে দিচ্ছে তাদের ভাগ্য।

আলম প্রামাণিক বলেন, ‘আমার ভাগ্য বদলায়া দিছে গরু। এনজিওর ঋণে দুইড্যা বকনা বাছুর কিনছিল্যাম। আইজ গোয়ালে ছয়ডা গাভি। দৈনিক দেড় মণ দুধ পাই। এহন আমার পেশা গরু পালনই। আমার খাবারেরও কোন অভাব হয় না। চরে বিভিন্ন ধরনের ঘাস বুনে তা পুরণ করি।’

চরের বাসিন্দা ও নাকালিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বশির মিয়া জানান, ১৫ বছর আগেও চরে এত গরু ছিল না। ওই সময় কিছু গৃহস্থ উন্নত জাতের গাভি এনে পালন শুরু করে। কেউ আবার হাট থেকে ষাঁড় বাছুর কিনে পালন করতে থাকেন। গাভির দুধ থেকে ভালো আয় এবং গরু মোটাতাজা করে ব্যাপক লাভ করতে দেখে গরু পালনে আগ্রহ বাড়তে থাকে। এভাবে চরের প্রায় সব বাড়িতেই গড়ে উঠেছে গরুর খামার। ফলে চরে অন্তত ৯০ ভাগ মানুষের ভাগ্য বদলে গেছে।

বেড়া উপজেলার চরনাকালিয়া গ্রামের আওলাদ হোসেন জানান, সারা বছর গো-খাদ্য কিনে গরুগুলোকে খাওয়াতে হয়। সেখানে কাঁচা ঘাস কম পাওয়া যায়। খর-ভুষির ওপর গরু পালনকারীদের বেশি নির্ভরশীল হতে হয়। কিন্তু চরে এর ঠিক উল্টো অবস্থা। ওইখানে বর্ষা মৌসুমের মাস চারেক ছাড়া বাকি প্রায় আট মাস প্রচুর কাঁচা ঘাস পাওয়া যায়। আর এ ঘাস চরবাসীরা বিনামূল্যে সংগ্রহ করেন। ফলে গরু পালনের বাৎসরিক চরবাসীদের খরচ সমতল এলাকার পালনকারীদের তুলনায় প্রায় অর্ধেকেরও কম।

স্থানীয় প্রাণীসম্পদ কার্যালয় ও কয়েকটি দুগ্ধ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, পাবনা-সিরাজগঞ্জের কয়েক উপজেলা থেকে প্রায় ২০টি দুগ্ধ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠান প্রতিদিন প্রায় ৬ লাখ লিটার দুধ সংগ্রহ করে। যা প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে বাজারজাত করে আসছে তারা। এ দুধের অন্তত ৬০ হাজার লিটারই চরের।

বেড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা স্বর্নালী জাহান পান্না বলেন, গরু পালন করে চরের মানুষ গত একযুগে যে সাফল্য পেয়েছে সত্যিই বিস্ময়কর। উপজেলার চরগুলোর মধ্যে চরনাকালিয়া, চরনাগদা, দক্ষিণ চরপেঁচাকোলাসহ অন্তত ২৫টি চরে বলা চলে গরু বিপ্লব ঘটেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close