ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

  ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

গ্রামবাসীর অর্থায়নে ২৮০ ফুট সেতু

ময়মনসিংহের ত্রিশালে ধানীখোলা দক্ষিণ ভাটিপাড়া ও বইলর বাঁশকুঁড়ি গ্রামবাসীর নিজস্ব অর্থায়নে ২৮০ ফুট কংক্রিটের সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রামে সুতিয়া নদীর ৫ কিলোমিটারের দুই প্রান্তে সেতু থাকলেও এর মধ্যবর্তী এলাকার বসতিরা পড়েছিলেন বেকায়দায়। দীর্ঘদিন কলাগাছের ভেলা আর বাঁশের সাঁকোই ছিল নদী পারাপারে তাদের একমাত্র ভরসা। নির্মাণে সরকারি সহায়তা না পেয়ে স্থানীয়দের স্বেচ্ছাশ্রম আর নিজস্ব অর্থায়নে নদীটির ওপর নির্মিত হয় ২৮০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রস্থের একটি সেতু। বিরল এ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন উপজেলার ধানীখোলা ইউনিয়নের দক্ষিণ ভাটিপাড়া ও বইলর ইউনিয়নের বাঁশকুঁড়ি গ্রামের বাসিন্দারা।

জানা গেছে, উপজেলা সদরের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে সুতিয়া নদী। সুতিয়ার দুই পাড়েই রয়েছে বহু স্কুল, কলেজসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। নদী পারাপারে উপজেলা পরিষদ ও থানার মধ্যবর্তী স্থানে আছে একটি সেতু। অপরদিকে সুতিয়ার উজানে ধানীখোলা ইউনিয়নের ধানীখোলা বাজারে প্রবেশ পথে আছে আরেকটি সেতু। ত্রিশাল উপজেলা সদর থেকে ধানীখোলা বাজারের দূরত্ব পাঁচ কিলোমিটার।

এতে করে স্কুল, কলেজসহ সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরে যাতায়াতের ক্ষেত্রে তার মধ্যবর্তী এলাকার বইলর বাঁশকুঁড়ি, মুন্সিপাড়া, আংরারচর, চরপাড়া ও বকশিপাড়া গ্রামের বসতিরা পড়ত চরম বেকায়দায়। এসব এলাকার লোকজন স্কুল, কলেজসহ সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরে আসতে হলে অতিরিক্ত আরো ৬ কিলোমিটার ঘুরতে হতো। সময় ও খরচ বাঁচাতে দীর্ঘদিন কলাগাছের ভেলায় চড়ে নদী পার হতেন শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় বাসিন্দারা। তারপর স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁশের পর কাঠের সাঁকো তৈরি করে তা ব্যবহার করা হয় দীর্ঘদিন। কিন্তু প্রতি বছরই তা সংস্কারের প্রয়োজন হতো। বছর বছর সাঁকো সংস্কারে দেখা দেয় নানাবিধ সংকট।

পরে একটি দীর্ঘস্থায়ী কংক্রিটের সেতু নির্মাণের পরিকল্পনায় ঐক্যমত হন ওই অঞ্চলের সুতিয়ার দুই পাড়ের মানুষ। সরকারি অর্থায়নে সেতু নির্মাণের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগে যোগাযোগ করে তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় স্থানীয়দের স্বেচ্ছাশ্রম আর নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন তারা। ধানীখোলা ও বইলর ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিসহ অন্যদের সহযোগিতায় উঠে ৬০ লাখ টাকা।

ওই ৬০ লাখ টাকার মধ্যে ১৫ লাখ টাকা দিয়েছেন ইনফিনিটি, লুবনান ও রিচম্যানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হক খাঁন, মশিউর রহমান শাহানশাহও দিয়েছেন কয়েক লাখ টাকা এবং উপজেলা প্রশাসন প্রায় দুই লাখ টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। এর বাইরেও অনেকে কাজ চলাকালীন সময়ে ইট, বালু, রড, সিমেন্টসহ সেন্টারিংয়ের বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। অনেক প্রতিকূল অবস্থা অতিক্রম করে অবশেষে প্রায় ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নদীটির ওপর নির্মিত হয় ২৮০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থের একটি সেতু।

ইনফিনিটি, লুবনান ও রিচম্যানের পরিচালক মনিরুল হক খান জানান, এখনো নূরীপাথর দিয়ে সেতুর ওপরের অংশে ঢালাই ও রঙের কাজ বাকি আছে। এতে ব্যয় হবে আরো প্রায় ৪ লাখ টাকা। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে আংরারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত রাস্তা পাকাকরণ হয়েছে। আর মাত্র ৪৫০ মিটার রাস্তা পাকাকরণ হলে সেতু পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গতা পাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close