বেড়া (পাবনা) প্রতিনিধি

  ০২ জুলাই, ২০২০

অভিযান-আন্দোলনেও বন্ধ হয়নি বালু তোলা

পাবনার বেড়ায় যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলা বন্ধে প্রায়ই অভিযান চালাচ্ছে উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত টিম। বালু তোলার কারণে নদী ভাঙনের শিকার এলাকাবাসী একাধিকবার এর বিরুদ্ধে মানববন্ধন, সভা-সমাবেশও করেছে। কিন্তু এত কিছুর পরেও এই অপতৎপরতা বন্ধ হচ্ছে না বলে জানা গেছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, অবৈধভাবে বালু তোলার ফলে চলতি বর্ষায় রূপপুর ইউনিয়নের ঘোপসেলন্দা গ্রামে যমুনার ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার চরপেঁচাকোলা, মোহনগঞ্জ, দক্ষিণ চরপেঁচাকোলা, চরনাকালিয়াসহ কয়েকটি গ্রামও নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বালু তোলার ফলে ২০১৭ সালে পেঁচাকোলা গ্রামে যমুনা নদীর তীর রক্ষা বাঁধের ৫০ মিটারেরও বেশি অংশ ধসে পড়ে। হুমকির মুখে পড়ে জেলা বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ। পরে বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) তড়িঘড়ি করে প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে ধসে যাওয়া অংশ মেরামত করে। এবারের বর্ষা মৌসুমেও পেঁচাকোলা এলাকার তীর রক্ষা বাঁধে ধস ও ফাটল দেখা দেয়।

এ নিয়ে এলাকাবাসীর অভিযোগ পেয়ে গত ২৪ জুন ঘটনা স্থলে গিয়ে হাতেনাতে দুজন ট্রাকচালককে আটক ও ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আনাম সিদ্দিকী। তীর রক্ষা ও বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের জন্য বালু তোলা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে পাউবো মোহনগঞ্জ থেকে নগরবাড়ী পর্যন্ত বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের পার্শ্ববর্তী যমুনা থেকে বালু তোলা বন্ধের জন্য প্রশাসনিক সহায়তা চেয়ে একাধিকবার চিঠি দিয়েছে। কিন্তু এর পরেও বালু তোলা বন্ধ হয়নি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বেড়া উপজেলার মোহনগঞ্জ থেকে ঢালারচর পর্যন্ত যমুনার প্রায় ২০ কিলোমিটার অংশ থেকে অবাধে বালু তোলা হচ্ছে। প্রতিদিন ২ শতাধিক নৌযানে খননযন্ত্র (ড্রেজার) বসিয়ে বালু তোলা হয়ে থাকে। অথচ এই এলাকায় বালু তোলার জন্য কোনো বালুমহাল নেই। উপজেলার পায়না, মোহনগঞ্জ, পেঁচাকোলা, নাকালিয়া, কৈতলা, রাকশা, নগরবাড়ী, কাজীরহাটসহ বিভিন্ন এলাকার অর্ধশতাধিক প্রভাবশালী বালু তোলার সঙ্গে জড়িত। এসব ব্যক্তিরা রাতারাতি প্রচুর অর্থের মালিক হয়ে উঠেছেন বলে জানান এলাকাবাসী।

অবৈধ বালু তোলাবন্ধের দাবিতে গত বছর দুয়েকের মধ্যে দক্ষিণ চরপেঁচাকোলা ও চরনাকালিয়ায় বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। নাকালিয়া বাজারে সর্বস্তরের জনসাধারণের অংশগ্রহণে বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ কর্মসূচিসহ বালু তোলার ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে প্রতিদিনের সংবাদে একাদিকবার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এর ভিত্তিতে উপজেলা প্রশাসন ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে বার বার অভিযান চালিয়ে কিছু বালুদস্যুকে সাজা দেওয়াও হয়েছে। কিন্তু তার পরেও অবৈধ বালু তোলা চলছেই।

মালদাপাড়া গ্রামের ওয়াদুদ সরকার, গোলজার মল্লিকসহ চার-পাঁচজন কৃষক জানান, অবৈধ বালু তোলার কারণে এমনিতেই নদীভাঙনের ভয় রয়েছে। এর ওপর এবার তাঁদের ডুবে থাকা ফসলি জমি থেকে খননযন্ত্রের (ড্রেজার) মাধ্যমে বালু ও মাটি তোলা হচ্ছে। প্রশাসন দ্রুত বালু তোলা বন্ধ না করলে তাঁরা মানববন্ধনসহ আন্দোলন কমসূচি পালন করবেন বলে জানান।

পাউবোর বেড়া কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ। তিনি বলেন, যমুনা নদীর যেসব এলাকা থেকে বালু তোলা হচ্ছে তার কাছেই রয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও তীর রক্ষা বাঁধ। অবৈধ বালু তোলার কারণে গুরুত্বপূর্ণ ওই দুটি স্থাপনা মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এ বিষয় আমরা প্রশাসন বরাবর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একাধিকবার চিঠি দিয়েছি। আর যমুনার ওই এলাকায় কোনোভাবেই বালু মহাল করা যাবে না বলে সপ্তাহ খানেক আগে আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিবেদন দিয়েছি।

ইউএনও আসিফ আনাম সিদ্দিকী বলেন, বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত গঠন করে আমি একের পর এক অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। এদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে। যেভাবেই হোক অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করা হবেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close