ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ২৭ মে, ২০২৪

আফগানদের লক্ষ্য বহু দূর...

আফগানিস্তানের বড় কোনো ইতিহাস নেই। তোমান কোনো সাফল্য নেই। আফগানিস্তান ক্রিকেট দলের প্রাপ্তি বলতে আছে কিছু অসাধারণ জয়। এটা যেমন দ্বিপক্ষীয় সিরিজে, তেমনই আইসিসি ইভেন্টে। এমন দলকেই বাজির ঘোড়া মানছেন অনেকেই। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলবে কোন দল? এমন প্রশ্নে সাবেক ক্যারিবীয় কিংবদন্তির জবাব ছিল- ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত, ইংল্যান্ড এবং আফগানিস্তান। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সবশেষ সংস্করণে তাকিয়ে এই ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে হাসতেই পারে অনেকে। কারণ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়শূন্য ছিল আফগানরা। তবে লারার মতো ক্রিকেটবোদ্ধারা যে ভুল বলেননি তার প্রমাণ ২০২৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। গত বছর ভারতে ওই অভিযানে শেষ পর্যন্ত সেমিফাইনালের লড়াইয়ে ছিল আফগানরা। তবে এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যা কিছু করতে পারে আফগানরা।

সবশেষ ভারতে অনুষ্ঠিত ওয়ানডে বিশ্বকাপে আফগানদের শিকার হয়েছিল টুর্নামেন্টের সাবেক তিন চ্যাম্পিয়ন- ইংল্যান্ড, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা। সেরা চারের দৌড়ে তারা আসর শেষ করেছিল টেবিলের ছয়ে থেকে। চতুর্থ দল হিসেবে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করা নিউজিল্যান্ডের চেয়ে মাত্র ২ পয়েন্ট কম ছিল আফগানদের। এমন দলকে হুমকি মানা যায় কোনো সংকোচ ছাড়াই, বিশেষ করে অনিশ্চয়তার খেলা ক্রিকেটের ছোট ফরম্যাট টি-টোয়েন্টিতে।

ক্রিকেটে জয়ের গল্প লেখার মতো শক্তি-সামর্থ্যরে কমতি নেই আফগানিস্তান ডোরায়। তাদের ১৫ সদস্যের বিশ্বকাপ দলে অলরাউন্ডারের ছড়াছড়ি। অধিনায়ক রশিদ ছাড়াও এই তালিকায় আছেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই, মোহাম্মদ নবী, করিম জানাত এবং নাঙ্গিয়াল খারোতি।

আফগান দলে স্বীকৃত ব্যাটার মাত্র চারজন- কিপার রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরান, নাজিবুল্লাহ জাদরান এবং ব্যাকআপ মোহাম্মদ ইসহাক। স্পিনভাগে রশিদ, নবী, খারোতি ছাড়া আছেন মুজিব উর রহমান এবং নুর আহমদ। পেসভাগে নবীন উল হক, ফজলহক ফারুকি এবং ফরিদ আহমদ। এক কথায়- বিশ্বকাপের জন্য সেরা দল সাজিয়েছে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি)। পূর্ণশক্তির দলটি এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজে। রশিদের নেতৃত্বে অভিযান শুরুর অপেক্ষায়, যিনি বিশ্বকাপের জন্য সম্প্রতি জন্মভূমিতে ফিরেছেন চার বছর পর! নিরাপত্তা ইস্যুতে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে খুব বেশি থাকা হয় না তার। যেহেতু রাজধানী কাবুল থেকে বিশ্বকাপ যাত্রা করেছে দল, তাই জন্মভূমিতে ফিরেছিলেন আফগানিস্তান ক্রিকেটের পোস্টার বয়।

অল্প সময় দেশে কাটিয়ে ক্যারিবীয় দ্বীপে রশিদ ও তার সতীর্থরা। যুদ্ধের দেশের ছেলেরা এখন ২২ গজের লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং সামনের চ্যালেঞ্জ নিতে মুখিয়ে রয়েছে। ওয়ানডে বিশ্বকাপের স্মৃতি আঁকড়ে শুরু থেকেই নিজেদের সেমির রাখার চেষ্টা করবে। খেলবে তাদের স্বভাবসুলভ ভয়ডরহীন ক্রিকেট। সম্প্রতি এক মিডিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশ দল নিয়ে কথা বলার সময় আফগানদের এই সাহসিকতার কথা ফুটে উঠেছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের কণ্ঠেও। বলেছিলেন, ‘দেখুন, আফগানিস্তানের খেলোয়াড়রা একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে এসেছে, তাই তারা আমাদের খেলোয়াড়দের মতো ১৪০ প্লাস গতির বল মোকাবিলা করতে ভয় পায় না।’

রাজনৈতিক কারণে ঘরের মাঠে সিরিজ খেলা কিংবা দল হয়ে প্রস্তুত হওয়া- দুটো সুযোগই কালেভদ্রে পায় আফগানিস্তান ক্রিকেট দল। ঘাটতি পুষিয়ে নিতে দেশের বাইরে ক্রিকেটের ওপর নির্ভরশীল তারা। এটাও সম্ভব হয়েছে তাদের ক্রিকেটীয় মেধার কারণে। যোগ্যতাণ্ডবলে চলতি আইপিএলে খেলার সুযোগ হয়েছে ৮ আফগান ক্রিকেটারের। তারা বিশ্বের জনপ্রিয় টি-টোয়েন্টি লিগে খেলেই আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত হয়েছে।

আইপিএলে আফগান ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়েছে রশিদ খানের। ১২ ম্যাচে শিকার করেছেন ১০ উইকেট এবং তার নামের পাশে রয়েছে ১০২ রান। গুজরাট টাইটান্সে রশিদ ছাড়াও খেলেছেন নুর আহমদ এবং আজমতউল্লাহ ওমরজাই। নুর ১০ ম্যাচে শিকার করেছে ৮ উইকেট। ওমরজাই ৭ ম্যাচে পেয়েছেন ৪ উইকেট এবং ৪ ইনিংসে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে করেছেন ৪২ রান।

লক্ষ্মৌর হয়ে ১০ ম্যাচে ১৪ উইকেট শিকার করেছেন নবীন-উল-হক। মোহাম্মদ নবী মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে ভালো করেত পারেননি। ৬ ইনিংস বোলিং করে পেয়েছেন মাত্র ২টি উইকেট। আর পাঁচবার ব্যাটিংয়ে নেমে সর্বসাকুল্যে করতে পেরেছেন ৩৫ রান। কলকাতা শিবিরে থাকা রহমানউল্লাহ গুরবাজ এক ইনিংসও ব্যাটিং করার সুযোগ পাননি। এ বছর আইপিএলে অভিষেক হয়েছে গুলবাদিন নায়েবের। দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে ইনিংসে সুযোগ পেয়ে ১৯ রান করেছেন তিনি। দুর্ভাগ্য ফজলহক ফারুকীর। হায়দরাবাদের স্কোয়াডে থাকলেও লিগপর্ব পর্যন্ত একটি ম্যাচের একাদশেও ঠাঁই হয়নি এই আফগান পেসারের।

‘সি’ গ্রুপে পড়েছে আফগানিস্তান। তাদের অপর চার প্রতিপক্ষ- স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড, পাপুয়া নিউগিনি এবং উগান্ডা। রশিদদের অভিযান শুরু হবে আগামী ৪ জুন। বিশ্বকাপে তাদের প্রথম ম্যাচে প্রতিপক্ষ উগান্ডা। এরপর নিউজিল্যান্ড, পাপুয়া নিউগিনি এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলবে যথাক্রমে ৮, ১৪ এবং ১৮ জুন।

আফগানিস্তান দল

রশিদ খান (অধিনায়ক), রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরান, আজমতউল্লাহ ওমরজাই, নাজিবুল্লাহ জাদরান, মোহাম্মদ ইসহাক, মোহাম্মদ নবী, গুলবাদিন নায়েব, করিম জানাত, নাঙ্গিয়াল খারোতি, মুজিব উর রহমান, নুর আহমদ, নবীব উল হক, ফজলহক ফারুকী এবং ফরিদ আহমত মালিক। রিজার্ভ : সাদিক অটল, হজরতউল্লাহ জাজাই, সালিম সাফি।

টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তান

র‍্যাংকিং : ১০

ম্যাচ : ১৩০

জয় : ৭৯

হার : ৪৮

টাই : ২

পরিত্যক্ত : ১

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close