ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ২৬ মে, ২০২৪

আন্ডারডগ হিসেবে ফেভারিট শ্রীলঙ্কা

আর মাত্র সাত দিন পর টি-টোয়ন্টি বিশ্বকাপের পর্দা উঠবে। এবারের বিশ্বকাপে চোখ থাকবে অনেক দলের ওপর, বিশেষ করে শক্তিশালী ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের দিকে। আকাশসম প্রত্যাশার চাপ থাকবে এশিয়ার পাকিস্তান কিংবা টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ দুবারের চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপর। কে হবে চ্যাম্পিয়ন? এই আলোচনায় আছে নিউজিল্যান্ডও। বড়দের ভিড়ে অপ্রত্যাশিতভাবে যে দল পরবে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট তাদের বলা হবে আন্ডার ডগ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নিতে যাওয়া ২০ দলের মধ্যে যদি কারো এমন চমক উপহার দেওয়ার সাধ্য থাকে, তাহলে সে দলটি শ্রীলঙ্কা।

লঙ্কানদের বিশ্বজয়ের কেন্দ্রে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। প্রিমিয়ার এই অলরাউন্ডার নেতৃত্বগুণে বেশ চটপটে। বোলিং-ব্যাটিংয়ে পথ দেখাবেন দলকে। একই সঙ্গে ড্রাইভিং সিটে বসবেন লং ড্রাইভের জন্য। তার আছে একটি শক্তিশালী বোলিং আক্রমণ। আবার গর্ব করেন একটি গতিশীল ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে। পরীক্ষিত শ্রীলঙ্কা দলটির চাপের মধ্যে পারফর্ম করার ক্ষমতা এবং কৌশলগত গভীরতা তাদের একটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ করে তোলে, যা উচ্চ র‍্যাংকের দলগুলোকে চমকে দিতে সক্ষম। তা ছাড়া ঐতিহ্যগত ক্রিকেটিং শক্তি এবং উদ্ভাবনী কৌশলের অনন্য মিশ্রণ দলটিকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দেখার জন্য একটি সমষ্টিগত দলে পরিণত করেছে। তাতে টুর্নামেন্টে লম্বা সময় লড়াইয়ের একটি বাস্তব সুযোগ থাকে তাদের।

ধরা যাক, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম সংস্করণের কথা। চার আসরের তিনটিতে ফাইনাল খেলেছিল শ্রীলঙ্কা। ২০০৯ এবং ২০১২ সালে ফিরেছিল রানার্সআপ ট্রফি নিয়ে। ২০১০ সালে আউট হয়েছিল সেমিফাইনালে। আক্ষেপ নিয়ে ফিরতে হয়নি ২০১৪ সালে। এই আসরের স্বাগতিক হয়েছিল বাংলাদেশ। ফিরেছিল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গর্ব নিয়ে। অথচ সে বছর বিশ্বকাপ খেলা নিয়েই শঙ্কায় ছিলেন কুমার সাঙ্গাকারা-মাহেলা জয়াবর্ধনারা। বোর্ডের (এসএলসি) সঙ্গে চুক্তি নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছিলেন তারা। বাংলাদেশ যাত্রার ২৪ ঘণ্টা পূর্বে, বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সারির দল পাঠানোর হুমকিও দিয়েছিল এসএলসি। তবু নমনীয় হননি সাঙ্গাকারারা। পরে বেতন-ভাতার অনিশ্চয়তা নিয়েই বাংলাদেশে বিশ্বকাপ খেলেছিলেন তারা এবং বিশ্বকাপ জয়ে কুলুপ এঁটেছিলেন বোর্ড কর্তাদের মুখে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একবারের চ্যাম্পিয়ন এবং দুবারের রানার্সআপ শ্রীলঙ্কা। তবে টুর্নামেন্টের শেষ তিন আসরে সাদামাটা ছিল তাদের পারফরম্যান্স। প্রতিবারই বাদ হয়েছে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে। ব্যর্থতার গণ্ডি পেরিয়ে গর্ব ফেরানোর চ্যালেঞ্জ হাসারাঙ্গার সামনে। লঙ্কান অধিনায়ক টি-টোয়েন্টিতে সেরাদের সেরা। এই ফরম্যাটে আইসিসির বোলারদের র‍্যাংকিংয়ে দ্বিতীয় স্থানে তিনি এবং অলরাউন্ডার র‍্যাংকিংয়ে যৌথভাবে শীর্ষে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে।

নতুন চ্যালেঞ্জে অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের মিশেলে দুর্দান্ত এক দল পেয়েছেন হাসারাঙ্গা। তাদের ১৫ সদস্যের স্কোয়াডে আছে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস এবং দাসুন শানাকার মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়। অন্যদিকে পাথুম নিসাঙ্কা-কামিন্দু মেন্ডিসের মতো তরুণ প্রতিভার অন্তর্ভুক্তি দলে নিয়ে এসেছে গতি। ব্যাটিংয়ে তাদের সেরা পাঁচ অস্ত্র- নিসাঙ্কা, কুশল মেন্ডিস, কামিন্দু, সাদিরা সামারাবিক্রমা এবং চারিথ আসালঙ্কা (সহ-অধিনায়ক)। পেসভাগে তাদের ভরসার কেন্দ্রে মাতিশা পথিরানা।

শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলে অলরাউন্ডারের তালিকা দীর্ঘ। যেখানে হাসারাঙ্গা, ম্যাথিউস, কামিন্দু, শানাকা, আসালঙ্কা ছাড়াও রয়েছেন দুনিথ ভাল্লালাগে এবং ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা। পরীক্ষিত ক্রিকেটার এবং ধর্মগুরুদের আশীর্বাদ নিয়ে গত ১৫ মে বিশ্বকাপের সহআয়োজক যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল।

সেরার মুকুট পরে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ছেড়েছিলেন কুমার সাঙ্গাকারা-মাহেল জয়াবর্ধনা। ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল এই ফরম্যাটে তাদের শেষ ম্যাচ ছিল। সেই দলে ছিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। আছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ-যুক্তরাষ্ট্র আয়োজিত বিশ্বকাপেও। টুর্নামেন্টে এটা তার ষষ্ঠ অংশগ্রহণ। ডেইলির মিররের খবর- এটাই ম্যাথিউসের শেষ বিশ্বকাপ এবং আসর শেষে অবসরে যাবেন সীমিত ওভারের ক্রিকেট থেকে। ক্যারিয়ারে শেষ লগ্নে সাঙ্গাকারা-জয়াবর্ধনের মতো বিদীয় অর্ঘ্য দিতে পারবেন ম্যাথিউস? প্রশ্নের উত্তর দেবে সময়। আপাতত এটা বলা যায়- সমৃদ্ধ ক্যারিয়ার নিয়ে আরেকটি অভিযান শুরু করতে যাচ্ছেন সাবেক লঙ্কান অধিনায়ক। ৮৫টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলা ৩৬ বছর বয়সি এই অলরাউন্ডারের নামের পাশে রয়েছে ১৩৫৭ রান এবং ৪৫ উইকেট। তার স্ট্রাইক রেট ১২৫.২২।

আবার ‘টাইমড আউট’ নিয়ে উত্তেজনা ছড়াবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে! কেননা, টুর্নামেন্টে আগামী ৮ জুন মুখোমুখি হতে চলেছে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা। এর আগেই অভিযান শুরু হবে লঙ্কানদের। ৩ জুন দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করবে হাসারাঙ্গার দল। ‘ডি’ গ্রুপে তাদের অপর দুই ম্যাচ ১২ ও ১৭ জুন যথাক্রমে নেপাল এবং নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। লঙ্কানরা প্রথম তিন ম্যাচ খেলবে যুক্তরাষ্ট্রে এবং শেষটি ওয়েস্ট ইন্ডিজে।

শ্রীলঙ্কা দল : ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা (অধিনায়ক), কামিন্দু মেন্ডিস, চারিথ আসালঙ্কা, কুশল মেন্ডিস, পাথুম নিসাঙ্কা, সাদিরা সামারাবিক্রমা, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস, দাসুন শানাকা, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা, মহেশ থিকসানা, দুনিথ ভাল্লালাগে, দুসমাš’া চামিরা, নুয়ান থুসারা, মাতিশা পথিরানা, দিলশান মাদুসাঙ্কা। রিজার্ভ : আসিথা ফার্নান্দো, বিজয়কান্ত ভিয়াস্কান্ত, জানিথ লিয়ানাগে, ভানুকা রাজাপাকসে।

অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস

আমরা খুব ভালো একটি দল। আমাদের বেশ কয়েকজন বিশ্বমানের খেলোয়াড় দলে রয়েছে, যারা এককভাবে আমাদের ম্যাচ জিতাতে পারে। এটি আমাদের বাড়তি সুবিধা দেবে। দেশের মাটিতে আমাদের খুব ভালো প্রস্তুতি হয়েছে। আমরা আগেই যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছি সেখানকার কন্ডিশনের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে।

টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কা

র‍্যাংকিং : ৮

ম্যাচ : ১৮

জয় : ৮৫

হার : ৯৮

টাই : ৪

পরিত্যক্ত : ২

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close