ক্রীড়া ডেস্ক

  ২৪ মে, ২০২৪

লুকমানের হ্যাটট্রিক

আটালান্টার স্বপ্নপূরণ

অবশেষে থামল চলতি মৌসুমের শুরু থেকে বায়ার লেভারকুসেনের টানা ৫১ ম্যাচ অপরাজিত থাকার স্বপ্নযাত্রা। প্রথমার্ধেই খেই হারিয়ে ফেলা জার্মান বুন্ডেসলিগার শিরোপাধারীরা আর ঘুরে দাঁড়াতে পারল না। তাদের বিপক্ষে রীতিমতো উজ্জীবিত পারফরম্যান্স উপহার দিল আটালান্টা। অ্যাডেমোলা লুকমান অসাধারণ হ্যাটট্রিক করে কেড়ে নিলেন সব আলো। তার নৈপুণ্যে একাধিক রেকর্ড গড়ে উয়েফা ইউরোপা লিগ চ্যাম্পিয়ন হলো ইতালিয়ান ক্লাবটি।বুধবার রাতে ডাবলিনের আভিভা স্টেডিয়ামে আসরের ফাইনালে লেভারকুসেনকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে আটালান্টা। প্রথমার্ধে জোড়া লক্ষ্যভেদের পর দ্বিতীয়ার্ধে আরেকবার জাল কাঁপিয়ে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন ইংল্যান্ডে জন্ম নেওয়া নাইজেরিয়ান ফরওয়ার্ড লুকমান।

প্রথমবারের মতো ইউরোপা লিগ জয়ের উৎসবে মাতল আটালান্টা। ২০০৯-১০ মৌসুমে ইউরোপা লিগ (এর আগে পরিচিত ছিল উয়েফা কাপ হিসেবে) নামকরণ হওয়ার পর থেকে এই প্রতিযোগিতায় এটাই কোনো ইতালিয়ান ক্লাবের প্রথম শিরোপা। শুধু তাই নয়, নিজেদের ১১৬ বছরের ইতিহাসে এবারই প্রথম কোনো ইউরোপিয়ান ক্লাব প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হলো আটালান্টা। দীর্ঘ পথচলায় এর আগে কেবল একটি ঘরোয়া শিরোপাই ছিল তাদের ঝুলিতে। ১৯৬২-৬৩ মৌসুমে কোপা ইতালিয়ার শিরোপা জিতেছিল তারা। অর্থাৎ ছয় দশকের শিরোপাখরা ঘোচাল দলটি। ইউরোপা লিগের ফাইনালে হ্যাটট্রিকের মধুর স্বাদ নিয়ে অনন্য কীর্তি গড়লেন লুকমান। তার আগে এই মঞ্চে কেউ করে দেখাতে পারেননি এমন অসাধারণ কিছু। চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, ২৬ বছর বয়সি উইঙ্গারের ক্যারিয়ারে প্রথম হ্যাটট্রিকও এটি।

ফাইনালে ফেভারিট হিসেবে খেলতে নেমেছিল কোচ জাবি আলোনসোর লেভারকুসেনই। তবে এবারের মৌসুমে স্মরণীয় পথচলায় নানান কীর্তি গড়া দলটি দেখাতে পারেনি চেনা ছন্দ। রক্ষণে তালগোল পাকিয়ে ফেলার পাশাপাশি আক্রমণেও তারা ছিল বিবর্ণ। ফলে গোটা ম্যাচে বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকাটা কোনো কাজে আসেনি তাদের। উল্টো পাল্টা আক্রমণ নির্ভর কৌশল বেছে নিয়ে লেভারকুসেনের অভেদ্য দুর্গ তছনছ করে দেয় জান পিয়েরো গাসপেরিনির শিষ্যরা।

ম্যাচের ১২ মিনিটে দারুণ এক আক্রমণ থেকে দাভিদ জাপাকোস্তার পাসে বল পেয়ে দুর্দান্ত শটে আটালান্টাকে এগিয়ে দেন লুকমান। ব্যবধান বাড়াতেও বেশি সময় ব্যয় করেননি তিনি। ২৬ মিনিটে লেভারকুসেনের ডি-বক্সের কাছে বল দখলে নেন। এরপর একজনকে কাটিয়ে কোনাকুনি শটে গোল করেন। তারপরও অতীত পরিসংখ্যান স্মরণ করে আটালান্টার স্বস্তিতে থাকার উপায় ছিল না। কারণ চলতি মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এর আগেও চারবার দুই গোলের ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে হার এড়িয়েছিল লেভারকুসেন।

এদিকে ওয়াটারলুর বয়সভিত্তিক ক্লাব থেকে উঠে এসেছেন আদেমোলা লুকমান। কোচ ফেলিক্স ইমানুসকে পরামর্শক হিসাবে পেয়েছেন তিনি এ ক্লাবেই। ডাবলিনের আভিভা স্টেডিয়ামে গত বুধবার রাতে ইউরোপা লিগ ফাইনাল শেষে ইমানুসের সঙ্গে কথা বলে টিএনটি স্পোর্টস। মাঠে কিছুক্ষণ আগে হ্যাটট্রিক করে আটালান্টাকে জিতিয়েছেন লুকমান। সেটাও মৌসুমজুড়ে ৫১ ম্যাচে অপরাজিত থাকা বায়ার লেভারকুসেনের বিপক্ষে। শিষ্য যখন এমন পারফর্ম করে, তখন তার পরামর্শকের চোখ ভিজে আসাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

টিএনটি স্পোর্টসকে ইমানুস সেই কথাই বলেছেন, ‘নিজের আবেগ বলে বোঝাতে পারব না। দীর্ঘদিন ধরে এমন কিছুর স্বপ্ন দেখছি, ওয়াটারলুতে আদে (লুকমান) যখন ছোট্ট ছেলে ছিল, তখন থেকে। গত বুধবার সেই স্বপ্নপূরণ হলো। তৃতীয় গোলটি করার পর কেঁদেছি। আদের জন্য খুব আনন্দ হচ্ছে।’ আফ্রিকা মহাদেশের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে উয়েফার বড় মাপের ক্লাব প্রতিযোগিতায় পেলেন হ্যাটট্রিক। ২০০৯ সালে ইউরোপা লিগ চালুর পর এই প্রতিযোগিতার ফাইনালে প্রথম খেলোয়াড় হিসাবে হ্যাটট্রিক করলেন লুকমান।

মা-বাবাকে গ্যালারিতে সাক্ষী রেখে আটালান্টার ১১৬ বছরের ক্লাব ইতিহাসে দ্বিতীয় ট্রফি এনে দিয়েছেন লুকমান। এর আগে ১৯৬৩ সালে কোপা ইতালিয়া জিতেছিল আল্পপ পর্বতমালার নিকটবর্তী বেরগামো শহরের ক্লাবটি। আর ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতার ফাইনালে ইতালিয়ান কোনো ক্লাবের দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসাবেও হ্যাটট্রিক করলেন লুকমান। এর আগে ১৯৬৯ ইউরোপিয়ান কাপ ফাইনালে আয়াক্সের বিপক্ষে এসি মিলানের হয়ে হ্যাটট্রিক করেছিলেন পিয়েরিনো প্রাতি।

লুকমানের কাছে ম্যাচ শেষে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ওয়াটারলু ও চার্লটন অ্যাথলেটিকের বয়সভিত্তিক দলে বেড়ে ওঠার সময় তিনি এমন কিছুর স্বপ্ন দেখেছিলেন কি না? ওয়াটারলুতে থাকতে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন পার্কে সানডে লিগেও খেলেছেন। এরপর চার্লটন, এভারটন, লাইপজিগ, ফুলহাম ও লেস্টার সিটির মূল দলে খেলে নিজের গোলসংখ্যা কোনো মৌসুমেই দুই অঙ্কে নিতে পারেননি লুকমান।

২০২২ সালের আগস্টে আটালান্টায় যোগ দেওয়ার পর গতবার ও এবারের মৌসুমে দুই অঙ্কে নিতে পেরেছেন গোলসংখ্যা। লুকমান বলেছেন, ‘হ্যাঁ, সম্ভবত (স্বপ্ন) দেখেছি। নিজের সামর্থ্যরে ওপর সবসময় আমার বিশ্বাস ছিল। গত দুই বছরে নিজের খেলা নতুন মাত্রায় নিতে পেরেছি এবং ধারাবাহিকতা অর্জন করেছি। এমন আরো অনেক রাতের দেখা পাওয়ার আশা করি।’ অবশ্য গতকাল রাতটা যে লুকমানের জন্য বিশেষ কিছু ছিল, সেটি না বললেও চলে। ম্যাচ শেষে লুকমান নিজেই টিএনটি স্পোর্টসকে বলেছেন, ‘এটা আমার জীবনের অন্যতম সেরা রাত। উৎসব করতে হবে আমাদের। গত বুধবার আমরা ইতিহাস গড়েছি।’ লুকমানের জন্ম ইংল্যান্ডের দক্ষিণ লন্ডনের জেলা ওয়ান্ডসওয়ার্থে। ইংল্যান্ডের বয়সভিত্তিক দলে (অনূর্ধ্ব-১৯, অনূর্ধ্ব-২০ ও অনূর্ধ্ব-২১) খেলে বেড়ে উঠেছেন। কিন্তু

বাবা-মা নাইজেরিয়ান। ২০২২ সালে নাইজেরিয়া জাতীয় দলে অভিষেক হয় লুকমানের।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close