উপল বড়ুয়া
সুদিনের অপেক্ষায় উরুগুয়ে
আলোচনাটা যখন বিশ্বকাপ ফুটবল তখন সবার সামনে আসবে উরুগুয়ে। কারণ আসরের প্রথম বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফুটবল ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে দেশটি। ১৯৩০ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনাকে ৪-২ গোলে হারিয়ে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা জিতেছিল আকাশী-নীলরা। কেবল প্রথম চ্যাম্পিয়ন বলেই নয়, দেশটির রয়েছে শত বছরের ফুটবল ইতিহাস ও ঐতিহ্য। জন্ম দিয়েছে ঘিঘিয়া, লুইস কুবিলা, ডিয়াগো ফোরলানদের মতো কিংবদন্তি ফুটবলারদের।
একসময় নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার সুনাম ছিল উরুগুয়ের। যদিও দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা পরবর্তীতে সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি। প্রথম টুর্নামেন্টে শিরোপা জিতলেও পরের দুই বিশ্বকাপে অবশ্য নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছিল ল্যাটিন আমেরিকার দেশটি। এরপর ২০ বছর পর ১৯৫০ ব্রাজিল বিশ্বকাপে ফিরেই শিরোপটা পুনরুদ্ধার করে নেয় উরুগুইয়ানরা। ফাইনালে আকাশী-নীলরা ২-১ গোলে স্বাগতিক ব্রাজিলকে হারিয়ে জন্ম দেয় মারাকানা ট্রাজেডির।
১৯৫৪ বিশ্বকাপে দাপটের সঙ্গে তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছিল উরুগুয়ে। কিন্তু এবার তাদের থামতে হয় শেষ চারে। এখান থেকেই শুরু হয় উরুগুইয়ান ফুটবলের ছন্দপতন। দক্ষিণ আমেরিকার বাছাইপর্ব পার হতে না পারায় পরের বিশ্বকাপে দর্শক হয়ে থাকতে হয় তাদের। ১৯৬২ বিশ্বকাপে ফিরলেও নিজেদের সেভাবে আর মেলে ধরতে পারেনি দেশটি। মাঝখানে সফলতা বলতে ছিল কেবল ১৯৭০ বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলা।
সময়ের আবর্তে ফুটবলের রাজাদের শাসন ধীরে ধীরে সীমিত হতে থাকে। সাফল্য দূরে থাক টুর্নামেন্টে আসা-যাওয়ার মাঝে থাকতে হয় তাদের। তবে এরই মধ্যে আরেকবার ঝলক দেখায় উরুগুইয়ানরা। নিজেদের সোনালি যুগের ইতিহাসটা তারা মনে করিয়ে দেয় ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে। সেবার ফোরলান-লুইস সুয়ারেজদের নিয়ে গড়া দলটি ঘরে ফিরে শেষ চার থেকে। তাছাড়া গত বিশ্বকাপেও দ্বিতীয় রাউন্ড খেলেছে দেশটি।
বিশ্বকাপের দুইবার শিরোপাধারীরা কোপা আমেরিকা প্রতিযোগিতাতে গড়ে তুলেছে নিজেদের অপ্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে। এই পর্যন্ত ১৫ বার দক্ষিণ আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা ঘরে তুলেছে দেশটি।
এবার ১৩ তম বারের মতো বিশ্বকাপ খেলবে উরুগুয়ে। রাশিয়া যাওয়ার আগে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে নিজেদের ভালো করে ঝালিয়ে নিয়েছে দেশটি। সর্বশেষ প্রীতি ম্যাচে উজবেকিস্তানকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে তারা।
বর্তমানে ফিফা র্যাংকিংয়েও বেশ উন্নতি হয়েছে উরুগুয়ের। সর্বশেষ প্রকাশিত র্যাংকিংয়ে তিন ধাপ এগিয়ে ১৪ নাম্বারে উঠে এসেছে তারা। ২০১১ সালে নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দুই নাম্বারেও উঠে এসেছিল দেশটি। তবে মুদ্রার উল্টো পিঠটাও দেখতে হয়েছে তাদের একসময়। সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা ১৯৯৮ সালে নেমে চলে গিয়েছিল ৯৮ নাম্বারে।
রাশিয়া বিশ্বকাপে উরুগুয়ে খেলবে স্বদেশি কোচ অস্কার তাবারেজের অধীনে। ২০০৬ সাল থেকে দলটির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তার অধীনে টানা তৃতীয়বার বিশ্বকাপ খেলবে উরুগুয়ে।
আসন্ন বিশ্বকাপে এবার বেশ ভারসাম্যপূর্ণ দল নিয়ে রাশিয়া যাচ্ছেন তাবারেজ। দলটির অধিকাংশ ফুটবলার খেলেন ইউরোপের শীর্ষ লিগগুলোতে। এবার উরুগুইয়ানদের স্বপ্ন দেখাচ্ছেন দলটির প্রাণভোমরা লুইস সুয়ারেজ। জাতীয় দলের জার্সিতে দেশটির সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি। এ ছাড়া মাঠে দলটিকে নেতৃত্বটাও দিবেন এই বার্সেলোনা ফরওয়ার্ড। সদ্য বিদায়ী মৌসুমে কাতালানদের জার্সিতে ২৫ গোল করেছেন তিনি। বর্তমানে সুয়ারেজ বিশ্বের সেরা ফরওয়ার্ডকে রাখা হয় লিওনেল মেসি, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর কাতারে।
তাছাড়া ম্যাচে স্পটলাইটটা কেড়ে নিতে পারেন পিএসজি ফরওয়ার্ড এডিনসন কাভানি। সদ্য বিদায়ী মৌসুমে ফ্রেঞ্জ লিগ ওয়ানে পিএসজির জার্সিতে ২৮ গোল করে হয়েছেন সর্বোচ্চ গোলদাতা। দলটির রক্ষণভাগের দায়িত্বে থাকবেন অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের ডিয়োগো গডিন এবং মারিও গিমানেজের মতো ডিফেন্ডার।
রাশিয়া বিশ্বকাপে উরুগুয়ে ‘এ’ গ্রুপে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে স্বাগতিক রাশিয়া, সৌদি আরব ও মিশরকে। ১৫ জুন একতেরিনবার্গ স্টেডিয়ামে মোহাম্মদ সালাহর মিসরের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করবে তাবারেজের শিষ্যরা। গ্রুপটিতে সবচেয়ে অভিজ্ঞ দল হচ্ছে উরুগুয়ে। দেখার বিষয়, তাবারেজ উরুগুয়ের সুদিন ফিরিয়ে দিতে পারেন কিনা।
"