আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১৬ এপ্রিল, ২০২০

‘মহামন্দার পর সবচেয়ে বড় সংকটে বিশ্ব অর্থনীতি’

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সতর্ক করে জানিয়েছে, এই অর্থবছরে ৩ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে বিশ্ব অর্থনীতি। এটি ১৯৩০-এর দশকের মহামন্দার পর সবচেয়ে বেশি সংকোচনের হার। আইএমএফ জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারি বিশ্বকে ‘ভিন্ন মাত্রার এক সংকটের’ দিকে ঠেলে দিয়েছে। উন্নত দেশগুলোর পক্ষেও ২০২২ সালের আগে ভাইরাস-পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে যাওয়া সম্ভব হবে না। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। ১১ মার্চ দুনিয়াজুড়ে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারিতে এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৮৫টি দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৯১৩। এর মধ্যে ১ লাখ ১৯ হাজার ৬৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। বেশির ভাগ আক্রান্ত দেশগুলোতে জারি করা হয়েছে লকডাউন। এতে স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। আইএমএফের প্রধান অর্থনীতিবিদ গীতা গোপিনাথ বলেন, চলমান সংকটে আগামী দুই বছরের মধ্যে বৈশ্বিক জিডিপি কমে যেতে পারে ৯ লাখ কোটি ডলার। গোপিনাথ সতর্ক করে বলেছেন, মহামন্দার পর এই প্রথম উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় ক্যাটাগরির দেশই আর্থিক মন্দায় পতিত হতে যাচ্ছে।

গোপিনাথ আরো বলেন, বর্তমানের ‘মহালকডাউন’ নীতিনির্ধারকদের সামনে ‘এক নিষ্ঠুর বাস্তবতা’ তুলে ধরেছে। তারা এই সংকটের মেয়াদ ও আঘাতের তীব্রতা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। উন্নত দেশগুলোর পক্ষেও ২০২২ সালের আগে ভাইরাস-পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে যাওয়া সম্ভব হবে না।

আইএমএফের সর্বশেষ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক প্রতিবেদনে জার্মানি, ব্রিটেন, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোতে করোনায় সৃষ্ট আর্থিক সংকট মোকাবিলায় নেওয়া পদক্ষেপের প্রশংসা করা হয়েছে। তবে তাতে এটিও বলা হয়েছে, কোনো দেশই আসন্ন সংকট থেকে রক্ষা পাবে না।

আইএমএফ জানিয়েছে, করোনা মহামারি যদি চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে তাহলে আগামী বছর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৮ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।

আইএমএফের পূর্বাভাস অনুসারে, করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের শীর্ষ আর্থিক শক্তি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি চলতি বছর ৫ দশমিক ৯ শতাংশ সংকুচিত হবে। বেকারত্বের হার ১০ দশমিক ৪ শতাংশে পৌঁছাতে পারে দেশটিতে। ২০২১ সালের দিকে দেশটির অর্থনীতি আংশিক ঘুরে দাঁড়াতে পারে। তবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আর্থিক শক্তি চীনের প্রবৃদ্ধি হবে মাত্র ১ দশমিক ২ শতাংশ। ১৯৭৬ সালের পর এটিই দেশটির সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি। বড় সংকটে পড়বে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিও।

সংস্থাটির মতে, এই বছর ভারতের আর্থিক প্রবৃদ্ধি কমবে অবিশ্বাস্য রকম। বিশ্বব্যাংক চলতি আর্থিক বছরে ভারতের আর্থিক প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিলেও আইএমএফ বলছে তা হবে ১ দশমিক ৯ শতাংশ। ১৯৯১ সালের পর সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি এটি।

আইএমএফ বলছে, ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে বেশি বিলম্ব হলে বা ২০২১ সালে দ্বিতীয় দফায় এটি ছড়িয়ে পড়লে বৈশ্বিক জিডিপি ৮ শতাংশ কমে যেতে পারে। সংস্থাটি আশঙ্কা করছে, এই সংকটে ঋণগ্রস্ত দেশগুলোর পরিণতি আরো খারাপ হতে পারে। বিশেষ করে এসব দেশকে বিনিয়োগকারীরা ঋণ দিতে চাইবেন না। ফলে ঋণের ব্যয়ও বেড়ে যাবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close