ডা. মুনতাসীর মারুফ

  ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭

বিপর্যয়ে মানসিক রোগ

দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রায়ই দুর্ঘটনার সম্মুখীন হই। কখনো কখনো এমন কিছু দুর্ঘটনা ঘটে, যা একেবারেই অনভিপ্রেত এবং আকস্মিক। হয় নিজেরাই সেই দুর্ঘটনার শিকার হই কিংবা প্রত্যক্ষদর্শী হই। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যেকোনোভাবেই সেই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হই না কেন, তা আমাদের চিন্তার জগৎকে এলোমেলো করে দেয়, আমরা হতবিহ্বল হয়ে পড়ি। এ ধরনের ঘটনা আমাদের মনে চাপ ও কষ্ট সৃষ্টি করে। কারো কারো ক্ষেত্রে সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে। প্রাথমিকভাবে কোনো সমস্যা না হলেও পরে, এমনকি বছর কয়েক পরেও ওই দুর্ঘটনার সূত্র ধরেই মানসিক অসুস্থতার শিকার হতে পারে অনেকে।

বিপর্যয়-পরবর্তী এই মানসিক চাপজনিত অসুস্থতা বা পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (পিটিএসডি) দৈনন্দিন জীবনের ছোটখাটো দুর্ঘটনার গ-ি ছাড়িয়ে বড় কোনো দুর্যোগের প্রতিক্রিয়ায় হয়ে থাকে। সিডর-আইলা-

সুনামির মতো ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, টর্নেডো, হারিকেন, বন্যা, ভূমিকম্প অথবা যুদ্ধ, সন্ত্রাসবাদ, রাজনৈতিক সহিংসতা, অপহরণ, যৌন নির্যাতন, সড়ক দুর্ঘটনা, ভবন ধস বা দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা এ ধরনের দুর্যোগের উদাহরণ। এই রোগের উপসর্গগুলো প্রবল যন্ত্রণাদায়ক। ভয়ংকর ওই ঘটনার দুঃসহ স্মৃতি বার বার ফিরে আসে। ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো শব্দ, দৃশ্য বা আলোচনা মনে সেই স্মৃতি জাগিয়ে তুলতে পারে। মনে হয় যেন, জীবনে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। রোগী একই রকম ভয়-আতঙ্ক-বেদনা অনুভব করে, যেমন অনুভূতি হয়েছিল প্রকৃত ঘটনাটির সময়। ঘুমের মাঝে দুঃস্বপ্নেও হানা দেয় সেই স্মৃতি।

অনেকে নিজেকে গুটিয়ে ফেলে চারপাশ থেকে। লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা কমিয়ে দেয়। নিজের আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ করতে অক্ষম হয়ে পড়ে।

কেউ কেউ আবার হয়ে পড়ে অস্থিরচিত্ত। তারা উদ্বিগ্ন, উত্তেজিত আচরণ করে; সব সময় কোনো বিপদের শঙ্কায় মাত্রাতিরিক্ত সতর্ক থাকে। কোনো কাজে মনোযোগ দিতে পারে না, ঘুম কমে যায়। অনেকের ক্ষেত্রে শারীরিক নানা সমস্যা, যেমনÑ মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা বা ম্যাজম্যাজ করা, বুক ধড়ফড় করা, হাত-পা কাঁপা, খাওয়ায় অরুচি প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দেয়। অনেকে বিষণœতায় আক্রান্ত হয়। আক্রান্তদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয় অন্যদের চেয়ে বেশি। শিশুদের মাঝে পরে পরিবেশ ও মানুষ সম্পর্কে অতিরিক্ত ভীতি গড়ে উঠতে পারে।

সহিংসতা ও দুর্যোগের কারণে মানসিক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ওষুধ এবং বিশেষ কাউন্সেলিং বা সাইকোথেরাপিÑ উভয়ের সমন্বয়ে চিকিৎসা করা হয়। আর দুর্যোগ পরিস্থিতির পরপরই আক্রান্ত শিশু বা ব্যক্তিদের খাপ খাইয়ে নেওয়ার প্রশিক্ষণসহ তাদের আবেগ প্রকাশের সুযোগ দেয়া হলে পরবর্তীকালে মানসিক রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকখানি কমে যায়।

লেখক : মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতাল, ঢাকা

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist