ডা. মানুন আল মাহতাব (স্বপ্নিল)
পরিপাকতন্ত্রের সমস্যায় রক্তবমি
বমির সঙ্গে রক্ত গেলে তাকে বলা হয় রক্তবমি বা হেমাটোমেসিস। সচরাচর পরিপাকতন্ত্রের সমস্যার কারণে এমনটি হয়। বমির সঙ্গে তাজা লাল রক্ত যেতে পারে। রং হতে পারে কফির মতো। আবার ভেতরে প্রচুর রক্তপাত হলে ছোট ছোট জমাট রক্তদলা বমির সঙ্গে আসতে পারে।
রক্তবমির কারণ
* পেপটিক আলসার বা পেটে আলসার হলে।
* অন্ত্রনালির নিচের দিকের রক্তবাহী নালি ফেটে গিয়ে। (সাধারণত দীর্ঘ যকৃতের রোগে হয়)।
* অন্ত্রনালি, পাকস্থলী বা অন্ত্রের ঝিল্লি ক্ষয়ে গেলে।
* অ্যাসপিরিন বা এ জাতীয় ওষুধ বিশেষ করে খালিপেটে খেলে।
* পাকস্থলীর ক্যানসারে।
* রক্তের রোগ, রক্তের ক্যানসার, হিমোফিলিয়া।
রোগ নির্ণয়
রক্তবমির ক্ষেত্রে রোগী বা রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে বিশদ তথ্য সংগ্রহ করা জরুরি। এটা রোগ নয়, রোগের ফল। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এর কারণ থাকে কোনো দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা। যেমন : লিভার সিরোসিস, আলসার, শরীরে স্থায়ী কোনো ব্যথাজনিত রোগ ইত্যাদি।
ল্যাবরেটরি পরীক্ষাগুলো হলো-
* অ্যান্ডোসকপি
* বেরিয়ামমিল এক্স-রে
* পেটের আলট্রাসনোগ্রাম
* লিভার ফাংশন টেস্ট
* রক্তের বিভিন্ন কণিকার পরিমাণ
* ব্লিডিং টাইম, ক্লটিং টাইম
* রেডিও নিউক্লিড স্ক্যান ইত্যাদি।
হঠাৎ রক্তবমি শুরু হলে
* ঠাণ্ডা তরল খাবার পরিমাণমতো যেমন ঠাণ্ডা দুধ পান করতে হবে।
* গরম বা দানাদার খাবার যেমন ভাত-রুটি খাওয়ানো যাবে না।
* গলা, বুক জ্বলে যাওয়ার অনুভূতি হলে কয়েক চামচ অ্যান্টাসিড সাসপেনশন খাওয়ানো যেতে পারে। তবে অনেক ক্ষেত্রে সাসপেনশন খাওয়ালে আবার বমি শুরু হয়।
* রোগীকে শোয়ানোর সময় পা একটু ওপরে রাখলে ভালো হয়।
তবে এগুলো তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা, কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নয়। তাই অবশ্যই রোগীকে নিকটস্থ চিকিৎসাসেবা কেন্দ্রে বা চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।
যাদের বেশি ঝুঁকি
* বয়স ৬০ বছর বা তার বেশি।
* আগে থেকেই ক্যানসার আছে।
* লিভার বা কিডনি ফেইলিওর আছে।
* আগেও এমন রক্তবমি হয়েছে।
* হৃৎপিণ্ডের অসুখ বা ডায়াবেটিস আছে।
প্রতিরোধ
* পেটে আলসার যাতে না হয়, সে জন্য আগেভাগেই খাবারের ধরন ও সময়-শৃঙ্খলা রক্ষা করা, অ্যালকোহল বা ধূমপানে বিরত থাকা, অ্যাসপিরিন বা এ জাতীয় ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে নিয়মমতো ওষুধ সেবন ইত্যাদি।
* হেপাটাইটিস বা অন্যান্য লিভারের রোগ, যা দীর্ঘস্থায়ী লিভারের রোগ সৃষ্টি করতে পারে, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। যেমন : ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, রক্ত দ্রব্যাদি ব্যবহারে সতর্ক থাকা, অ্যালকোহল পানে বিরত থাকা ইত্যাদি। তবে কোনো কারণে হেপাটাইটিস হয়ে গেলে তার যথাযথ চিকিৎসা যতœসহকারে গ্রহণ করা।
* রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসসহ বিভিন্ন দীর্ঘস্থায়ী ব্যথাজনিত রোগ বা সাময়িক ব্যথাজনিত রোগের ক্ষেত্রে কোনো ব্যথার ওষুধ বা ইসকেমিক হার্ট ডিজিজের ক্ষেত্রে অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ অবশ্যই ভরাপেটে খাওয়া বা খুব বেশি এসিডিটি হলে রেনিটিডিন বা এ জাতীয় ওষুধ সেবন করা।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, লিভার বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
"