নিজস্ব প্রতিবেদক
অগ্রণী ব্যাংকে নিয়োগ পরীক্ষা
সকালে প্রশ্নফাঁস বিকেলে স্থগিত
প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের গতকাল শুক্রবার বিকেলের শিফটের নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের দুই শিফটের নিয়োগ পরীক্ষার মধ্যে সকালের শিফটে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যায়। এ কারণে বিকেলের শিফটের পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছেন কর্মকর্তারা। ওই ব্যাংকে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। জানা গেছে, পরীক্ষার্থী বেশি হওয়ার কারণে দুই শিফটে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এদিকে, ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের পরীক্ষার ফল বাতিল করা হবে কি না বা স্থগিত হওয়া পরীক্ষা কখন অনুষ্ঠিত হবে, এ বিষয়ে গতকাল রাত পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তবে ফাঁস হওয়া প্রশ্নে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার ফল বাতিল করা হতে পারে বলে জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র।
তবে, প্রশ্নপত্র ফাঁস কেলেঙ্কারি দায় নিতে চাচ্ছে না অগ্রণী ব্যাংক। এর আগে ২১ এপ্রিল রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। অগ্রণী ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণ ও সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগ।
জানা যায়, গতকাল সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত প্রথম ভাগের পরীক্ষা শুরুর আগেই একটি পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ নিয়ে খবর আসে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকেও ‘ফাঁস হওয়া প্রশ্নের’ ছবি ছড়িয়ে পড়ে। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাত থেকে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন ও তার উত্তর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে বলে জানিয়েছেন অংশগ্রহণকারীদের কয়েকজন। এ পরিস্থিতিতে সকালের অংশের পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পর আয়োজক কর্তৃপক্ষ বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত নির্ধারিত দ্বিতীয় অংশের পরীক্ষা স্থগিত করে। দুই ভাগ মিলিয়ে মোট দুই লাখ তিন হাজার চাকরি প্রত্যাশীর নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য নিবন্ধিত ছিলেন। এর মধ্যে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত পরীক্ষায় অংশ নেন প্রায় এক লাখ নিয়োগ প্রত্যাশী। বিকেলে বাকিদের পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। পরীক্ষার্থীদের সংখ্যা বিবেচনায় দুই ভাগে পরীক্ষার ব্যবস্থা করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে ওই বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু তালেব প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘অনিবার্য কারণবশত বিকেলের পরীক্ষা স্থগিত করেছি। বিকেলের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার কিছু অভিযোগ আমরা পেয়েছি। এ কারণে আমরা ঝুঁকি নিতে চাইনি। অভিযোগটি আমরা যাচাই-বাছাই করব। পরে সুবিধাজনক সময়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে।’ সকালে নেওয়া পরীক্ষার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওটার ফাঁস হওয়ার অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। তারপরও বিষয়টা খতিয়ে দেখছি।’
যোগাযোগ করলে অগ্রণী ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা এ এম আবিদ হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘নিয়োগের এ পরীক্ষার সঙ্গে অগ্রণী ব্যাংক কোনোভাবেই যুক্ত নয়। রাষ্ট্রায়ত্ত সব ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির মাধ্যমে। ওই কমিটি এবার দরপত্রের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগকে নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজনের দায়িত্ব দেয়।’
ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্যসচিব মোশারফ হোসেন খান বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। প্রশ্ন ফাঁস হওয়া সংক্রান্ত সংবাদ দেখার সময় কখন! আর এখন প্রচ- মাথা গরম। নিয়োগ পরীক্ষার বিষয়ে আমরা সাচিবিক দায়িত্ব পালন করেছি। পরীক্ষা নেওয়ার জন্য অগ্রণী ব্যাংক দরপত্র দেয়। নিয়োগ পরীক্ষার দরপত্র নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগ।’
ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘সকালের পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ পেয়েছি। গভর্নর স্যারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। যাচাই-বাছাই করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অনুষ্ঠিত পরীক্ষার ফল বাতিল হতে পারে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র শুভঙ্কর সাহা জানান, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর বিকেলের অংশের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। সকালের পরীক্ষার বিষয়ে কী করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত তারা এখনো জানায়নি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী ও ফজলুল হক হলের আবাসিক ছাত্র রাকিবুল ইসলাম গতকাল অভিযোগ করেন, অপরিচিত এক পরীক্ষার্থীর কাছে তিনি হাতে লেখা প্রশ্ন ও উত্তর দেখেছেন। ইংরেজি বিষয়ের অনেকগুলো প্রশ্ন পরীক্ষার মূল প্রশ্নের সঙ্গে মিলে গেছে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে পাস করা একজন জানান, সকালে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার পর তিনি অনেকের হাতেই প্রশ্ন দেখেছেন। পরে হলে পাওয়া প্রশ্নের সঙ্গে তা মিলেও গেছে।
"