প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৮ এপ্রিল, ২০২৪

ঝড়-বজ্রপাতে প্রাণহানি ১২

চৈত্রের শেষে কালবৈশাখির তাণ্ডবে শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত

চৈত্রের শেষ সময়ে গত কয়েক দিন ধরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বইছিল তাপপ্রবাহ। আগামী ১৪ এপ্রিল শুরু হবে বাংলা বর্ষ। নববর্ষকে বরণ করবে বাঙালি। বৈশাখ মাস আসার আগেই গতকাল রবিবার দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পিরোজপুর, ঝালকাঠি, খুলনা, নেত্রকোনা, যশোর ও বাগেরহাটে কালবৈশাখি তাণ্ডব চালিয়েছে। এতে নারী-শিশুসহ প্রাণ হারিয়েছেন ১২ জন। এ সময় অসংখ্য গাছপালা ভেঙে পড়েছে ও শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। অনেক স্থানে গাছ ভেঙে পড়ে সড়ক ও বিদ্যুৎ যোগাযোগ ব্যাহত হয়ে পড়েছে।

ঝালকাঠি বিভিন্ন স্থানে সকাল ১০টায় ঝড়ে গাছপালা ভেঙে পড়েছে। এরপর বেলা ১১টায় জেলার পৃথক এলাকায় বজ্রপাতে দুই নারী ও এক শিশু নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরো একজন। নিহতরা হলেন- হেলেনা বেগম (৪০), মিনারা বেগম (৩৫) ও মাহিয়া আক্তার ঈশানা (১১)।

ঝালকাঠি পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানান, সকালে বৃষ্টির মধ্যে মাঠে থাকা গবাদি পশুকে ঘরে আনতে যাওয়ার সময় বজ্রপাতের কবলে পড়ে পৃথক স্থানে তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহত শিশু মাহিয়া আক্তার ঈশানার (১১) সদর উপজেলার ইছালিয়া গ্রামের রিকশাচালক বাচ্চু হাওলাদের মেয়ে এবং স্থানীয় আফছার মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. টিএম মেহেদী হাসান সানি জানান, বজ্রপাতে আহত এক ব্যক্তিকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি শঙ্কামুক্ত আছেন। হেলেনা বেগম ঝালকাঠি সদর উপজেলার শেখেরহাট এবং মিনারা বেগম কাঠালিয়ার উত্তর তালগাছিয়া গ্রামের বাসিন্দা।

নেত্রকোনায় খালিয়াজুরীর হাওরে এক কৃষক নিহত হয়েছেন। গতকাল বেলা পৌনে ১২টায় উপজেলার রাজঘাট হাওরে বজ্রপাতে এ ঘটনা ঘটে। শহীদ মিয়া (৫২) উপজেলার মেন্দীপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের কফিল উদ্দিনের ছেলে। নিহতের ভাই স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম জানান, সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে গ্রামের সামনে রাজঘাট হাওরে মরিচ ক্ষেতের পরিচর্যা করছিলেন তার ভাই। দুপুরের দিকে বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি।

যশোরের ঝিকরগাছায় ধান ক্ষেতে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকালে উপজেলার বড়পোদাউলিয়া গ্রামের বিলে এ ঘটনা ঘটে বলে জানান ঝিকরগাছার শংকরপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য পোদাউলিয়া গ্রামের জাহান আলি। নিহত আবদুল মালেক পাটোয়ারী (৬০) উপজেলার বড়পোদাউলিয়া গ্রামের মৃত ওমর আলি পাটোয়ারীর ছেলে।

এছাড়া পিরোজপুরে ঝড়ে ১০ মিনিটের ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকা। এ সময় রুবি নামে এক গৃহবধূ মারা গেছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। অসংখ্য গাছপালা ভেঙে পড়েছে ও কয়েকশ ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমান বলেন, জেলায় ঝড়ে রুবি নামের এক গৃহবধূর মৃত্যু হয়েছে। শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পিরোজপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম শিকদার বলেন, ঝড়ে ঘর ভেঙে পড়ে আহত হন রুবি আক্তার এবং তার মেয়ে। তাদের উদ্ধার করে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক রুবি আক্তারকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মেয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গাছপালা ভেঙে পড়ে পিরোজপুরের সঙ্গে বরিশালের সড়ক যোগাযোগসহ বিভিন্ন এলাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগও বন্ধ রয়েছে।

বাগেরহাটে কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাতে এক কৃষক নিহত ও অসংখ্য ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের সময় কচুয়া উপজেলার মঘিয়ায় বজ্রপাতে নিহত হন লিকচান সরদার (৩৫) নামে এক কৃষক।

পটুয়াখালীতে কালবৈশাখী ও বজ্রঝড়ে দুজন নিহতসহ বিভিন্ন স্থানে গাছপালা ভেঙে ও উপড়ে পড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাউফলের নাজিরপুর ইউনিয়নের তাতেরকাঠী গ্রামে বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন নবম শ্রেণির ছাত্র রাতুল। দাসপাড়া ইউনিয়নের বাহের দাসপাড়া গ্রামে গাছ চাপা পড়ে নিহত হয়েছেন বৃদ্ধা সাফিয়া বেগম।

খুলনাতেও ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। ডুমুরিয়া উজেলার গুটুদিয়া গ্রামের কোমলপুরে সকাল আটটার দিকে মো. ওবায়দুল্লাহ নামের একজন বজ্রপাতে মারা যান।

ভোলার লালমোহনে সকালে পৃথক স্থানে বজ্রপাত ও ঘর চাপায় দুইজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- উপজেলার চরভূতার কায়সারের ছেলে মো.বাচ্চু (৩৫) ও ফরাজগঞ্জের হারিছ আহমেদ (৭০)। নিহত বাচ্চু চরভূতা ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ড চরলেঙ্গুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও হারিছ ফরাজগঞ্জ ইউনিয়নের ৯ ওয়ার্ডের বাসিন্দা। ঝড়ের লালমোহন পৌরসভার ৪নম্বর ওয়ার্ডে তিনটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। লালমোহন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তোহিদুল ইসলাম জানান, ঝড়ে প্রায় ২০০ ঘর ও দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

চট্টগ্রাম নগরীতে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি শুরু হওয়ার আগে নগরীতে দিনেই নেমে আসে ঘোর অন্ধকার। দুপুরে আঁধারে ঢেকে যাওয়ায় সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলেছে গাড়ি। অবশ্য এ বৃষ্টি ঝড়ো হাওয়া বেশিক্ষণ থাকেনি। ঘণ্টাখানেকেরও কম সময়ে আবার আকাশে দেখা দেয় রোদ।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পাবনা, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, সিলেট, ঢাকা, যশোর, খুলনা, ফরিদপুরসহ ১২ জেলার ওপর দিয়ে পশ্চিম অথবা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ সময় বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে দুই নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন ঝালকাঠি, নেত্রকোনা, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ভোলা, যশোর, বাগেরহাট, খুলনা ও চট্টগ্রাম প্রতিনিধি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close