প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৭ এপ্রিল, ২০২৪

জিম্মি নাবিক পরিবারে এবার নিরানন্দ ঈদ

ঈদ ঘনিয়ে আসছে। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে সবাই ছুটছে নাড়ির টানে। প্রিয়জনের সঙ্গে মিলতে অপেক্ষমাণ স্বজনরা। এরই মধ্যে সবাই কেনাকাটায় ব্যস্ত। নতুন জামা-জুতা পরে এবং উপাদেয় খাবারের স্বাদ নেবে একসঙ্গে। চারদিকে যখন আনন্দের ধুম, তখন নিরানন্দে কাটছে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি নাবিক পরিবারের। প্রিয়জনকে দস্যুদের জিম্মায় রেখে ঈদের আনন্দ বিষাদে পরিণত হয়েছে তাদের। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

সিরাজগঞ্জ : জেলার কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট ইউনিয়নের প্রত্যন্ত চর-নূরনগর গ্রামের আবু শ্যামা ও নার্গিস দম্পতির একমাত্র ছেলে নাজমুল হক জলদস্যুদের হাতে জিম্মি। তারা জানান, ছেলেকে জীবন মরণের মাঝে রেখে আমরা কীভাবে ঈদ করব। কাকে নিয়ে ঈদ করব?

প্রতিবেশী ও স্বজনরা জানান, নাজমুল হকের বয়স মাত্র ২৩ বছর। দুই ভাইবোনের মধ্যে তিনি বড়। ছোটবেলাতেই মারা গেছেন তার তিন ভাইবোন। মাত্র ২০ বছর বয়সেই জাহাজে চাকরি পান। গত ১২ মার্চ অপহৃত হওয়ার পর থেকেই ছেলের মুক্তির জন্য প্রতীক্ষা করছেন নাজমুলের মা-বাবাসহ স্বজনরা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুস সাত্তার বলেন, দরিদ্র পরিবারের সন্তান জাহাজে চাকরি পাওয়ায় আমরা অনেক খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু জলদস্যুদের হাতে নাজমুলের জিম্মি হওয়ার খবর শুনে আমরাও খুব ভেঙে পড়েছি। কামারখন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শহীদুল্লাহ সবুজ বলেন, বিষয়টি শোনার পরই নাজমুলের পরিবারের কাছে গিয়েছিলাম। বলেছি, আপনারা বিশ্বাস রাখুন সরকার দ্রুত আপনাদের ছেলেসহ সব বন্দিকে ফিরিয়ে আনবে ইনশাআল্লাহ। কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শাহীন সুলতানা বলেন, জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে তাদের পরিবারের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি।

টাঙ্গাইল : জিম্মি নাবিক টাঙ্গাইলের সাব্বিরের বাড়িতে নেই ঈদের আনন্দ। ছেলের মুক্তির সংবাদের অপেক্ষায় সময় পার করছেন সাব্বিরের বৃদ্ধ মা-বাবা। নামাজ আদায় করে সন্তানকে ফিরে পেতে আল্লাহর নিকট দোয়া করে সময় পার করছেন। আর মাঝে মধ্যেই ছেলের ছবি এবং মোবাইলে কোনো সংবাদ এলো কি না, তা দেখছেন। অপেক্ষার প্রহর যেন তাদের শেষ হচ্ছেই না। তারা চান ঈদের আগেই যেন তাদের সন্তানের মুক্তি মেলে।

গত বছরও পরিবারের সঙ্গে ঈদ পালন করেছেন নাবিক সাব্বির। কিন্তু এ বছর জাহাজ ছিনতাই হওয়ার পর সাব্বিরের ভাগ্যে কী ঘটছে সেই শঙ্কায় ঈদের আনন্দ নেই তার পরিবারের মাঝে। সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে ভারত মহাসাগর থেকে জিম্মি হন বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর ২৩ জন নাবিক।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, জেলার নাগরপুরের সহবতপুর উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে থেকে এসএসসি পাস করে। টাঙ্গাইল শহরের কাগমারি এম এম আলী কলেজ থেকে ২০১৬ সালে এইচএসএসসি পাস করে ভর্তি হন চট্টগ্রাম মেরিন একাডেমিতে। সেখান থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করে সর্বশেষ গত বছরের ২০২২ সালের জুন মাসে এমভি আবদুল্লাহ পণ্য বহনকারী একটি জাহাজে মার্চেন্ট কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি নেন।

সাব্বিরের বোন মিতু আক্তার বলেন, সরকারের কাছে দাবি আমার ভাইকে ঈদের আগে ফিরিয়ে আনার হোক। সাব্বিরের বাবা হারুন অর রশিদ বলেন, ছেলের সঙ্গে গত বছর ঈদ করেছি। এবারও আশায় আছি, জানি না করতে পারব কি না। সরকারের কাছে দাবি অতি দ্রুত আমার ছেলেসহ সবাই বাবা-মায়ের কোলে ফিরে আসুক।

সাব্বিরের মা সালেহা বেগম কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা কোনো কিছু চাই না, আমার ছেলেকে চাই। আমরা ছেলের সঙ্গে ঈদ করতে চাই। ছেলে বাড়ি না আসলে আমাদের আর ঈদ করা হবে না। নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান বলেন, সাব্বিরের পরিবারের সঙ্গে খোঁজ খবর রাখছি। ঈদ উপলক্ষে তাদের বাড়িতে ঈদ উপহার পাঠানো হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close