বদরুল আলম মজুমদার

  ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

দল গুছিয়ে ফের মাঠে নামার প্রস্তুতি

বারবার আন্দোলনে ব্যর্থ বিএনপি এবার দল গুছিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ লক্ষ্যে নেওযা হচ্ছে একগুচ্ছ পরিকল্পনা। আসছে রমজানকে সংগঠন পুনর্গঠনের মাস হিসেবে কাজে লাগাতে চায় দলটি। পাশাপাশি দলে ফিরতে ইচ্ছুক নেতাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে। এরই মধ্যে ছাত্রদল-যুবদলের কমিটি ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলা পর্যায়ে নতুন কমিটি দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু হতে পারে আগামী মাস থেকে। সাম্প্রতিক সময়ে দলের শীর্ষ পর্যায়ে সিরিজ বৈঠকে এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মহানগরে দল ও অঙ্গ সংগঠনের কমিটি ভেঙে আন্দোলনে সক্রিয়দের দিয়ে নতুন আহ্বায়ক কমিটি করা হবে। এছাড়া ২৮ অক্টোবরের পর থেকে আন্দোলনে যেসব নেতা নিজেরা সরাসরি মাঠে সক্রিয় ছিলেন কিংবা তাদের তত্ত্বাবধানে অনুসারী নেতাকর্মীরা রাজপথে ছিল এবং আন্দোলনজুড়ে কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষা করেছেন, তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে। তাদের পদোন্নতি দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

দলের দায়িত্বশীল নেতারা বলেন, বিএনপির ডাকে সাড়া দিয়ে ৭ জানুয়ারির নির্বাচন জনগণ বর্জন করেছে। সরকার পরিবর্তনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত না হলেও হতাশার কোনো সুযোগ নেই। নতুন করে ফের আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে হবে। এ কারণেই দলকে নতুন নেতৃত্বে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।

তবে মাঠের নেতারা বলেন, দল পুনর্গঠন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এ উদ্যোগ তখনই শতভাগ সফল হবে, যখন যোগ্য ও ত্যাগীদের নেতৃত্বে আনা হবে। আর যদি পকেট কমিটি করা হয়, তাহলে তার সুফল দল পাবে না।

বিএনপি এক বছরের বেশি ধরে রাজপথে আন্দোলন করলেও চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। প্রত্যাশিত হারে নেতাকর্মীরা রাজপথে না নামায় গত ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি থেকে প্রথম ধাক্কা খায় দলটি। পরে হরতাল-অবরোধের কর্মসূচিতে সেটা প্রকাশ্যে চলে আসে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ ঘিরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের পর হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিতে নামে দলটি। কিন্তু পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

সারা দেশে বিএনপির ৮২টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। দলের মূল্যায়ন, আন্দোলনে এগুলোর মধ্যে ২০-২৫টি জেলার পারফরম্যান্স সন্তোষজনক ছিল না। তবে দলটির দাবি, ২৮ অক্টোবরের পর থেকে তাদের ২৬ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় গ্রেপ্তার এড়াতে বাকি নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। ঘুরেফিরে অল্প কিছু নেতা হরতাল-অবরোধের সমর্থনে ঝটিকা মিছিল করেন। এ চিত্র ঢাকা থেকে দলের তৃণমূল পর্যন্ত সর্বত্র। হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে বারবার তাগিদ দেওয়া সত্ত্বেও নেতাকর্মীরা প্রত্যাশিত হারে মাঠে নামেনি। এর মধ্য দিয়ে সাংগঠনিক দুর্বলতার বিষয়টি সামনে চলে আসে, যা হাইকমান্ডের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আন্দোলনের অংশ হিসেবে একপর্যায়ে জনগণকে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট বর্জনের আহ্বান জানায় বিএনপি। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপির আন্দোলন ও বর্জনের মধ্যেই গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এতে আন্দোলনের সফলতাণ্ডব্যর্থতার মূল্যায়ন শুরু করে বিএনপির হাইকমান্ড। এরই মধ্যে এ পর্যালোচনা শেষ করেছে দলটি।

বিএনপির সিদ্ধান্ত হচ্ছে ছাত্র ও যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ভেঙে দেওয়া হবে। কারণ এ দুটি সংগঠনের যারা নেতৃত্বে আছেন, আন্দোলনে তাদের অধিকাংশের পারফরম্যান্সে হাইকমান্ড তেমন সন্তুষ্ট নয়। দলের মূল্যায়ন, বিক্ষিপ্তভাবে পাঁচণ্ডদশজন নিয়ে পৃথক মিছিল হলেও একত্রে মাঠে নামতে পারেনি গুরুত্বপূর্ণ এ দুই সংগঠনের নেতারা। সংগঠনের শীর্ষনেতৃত্বে সমন্বয় ও সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে এমনটি হয়েছে বলে দল মনে করে। এছাড়া জেলা নেতাদের সঙ্গেও কেন্দ্রীয় নেতাদের তেমন সমন্বয় ছিল না, যেটা নির্বাচনের পর ধারাবাহিক জুম মিটিংয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে তারা অভিযোগ করেন।

জানা গেছে, যুব ও ছাত্রদলের শীর্ষনেতৃত্বে যারা আছেন, নতুন কমিটিতে তাদের রাখার সম্ভাবনা কম। একেবারে নতুন নেতৃত্ব আনা হতে পারে। এর প্রাথমিক প্রক্রিয়া এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। যুবদলের নতুন কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক সাবেক ছাত্রনেতারা আসতে পারেন, যারা এখন বিএনপির নির্বাহী কমিটির কম গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন কিংবা এ মুহূর্তে অঙ্গ সংগঠনের কমিটিতে নেই। এর মধ্য দিয়ে রাজপথে সক্রিয় থাকা সাবেক ছাত্রনেতাদের ভাগ্য খুলতে পারে। যুবদলের মধ্যম সারির নেতাদের মধ্য থেকেও নতুন নেতৃত্ব আসতে পারে।

অন্যদিকে ছাত্রদলের কমিটি ইলেকশনে না সিলেকশনে গঠিত হবে, শীর্ষ পদের জন্য সর্বনিম্ন কোনো শিক্ষাবর্ষ রাখা হবে, বিবাহিতদের জন্য সুযোগ থাকবে কি না, সে ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। উপযুক্ত পরিবেশ থাকলে ঢাকা মহানগর, ঢাকা জেলা ও মহানগরের যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটি রয়েছে, তাদের ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচন করার আলোচনা রয়েছে; অন্যথায় সিলেকশনে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close