নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

রোহিঙ্গা নিয়ে জাতিসংঘের প্রস্তাবে বাংলাদেশের ‘না’

নিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশ ও ভারতকে সতর্ক করল যুক্তরাষ্ট্র

মিয়ানমারের রাখাইনে জান্তা সেনা ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে তুমুল লড়াইয়ের মুখে প্রাণে বাঁচতে সেখানের রোহিঙ্গারা নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছড়িয়ে পড়ছেন নানা জায়গায়। এক্ষেত্রে তাদের কাছে সবচেয়ে পছন্দ হলো বাংলাদেশ সীমান্ত। এই পরিস্থিতিতে দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় আসা কয়েকশ’ রোহিঙ্গাকে মানবিক কারণে আশ্রয় দিতে বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে জাতিসংঘ। কিন্তু বাংলাদেশ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, নতুন করে কোনো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়। আর কাউকে অনুপ্রবেশও করতে দেওয়া হবে না।

সম্প্রতি ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রোহিঙ্গাবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের সভায় এমন আলোচনা হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সূত্রে জানা গেছে। পররাষ্ট্র সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, রোহিঙ্গাবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের সভায় সীমান্তের ওপারে অপেক্ষমাণ রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আলোচনা। এ সময় জাতিসংঘ মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দেওয়ার অনুরোধ জানায় বাংলাদেশকে। কিন্তু তাদের অনুরোধ রাখা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়ে দেয়া হয় সভায়।

টাস্কফোর্সের সভায় বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য দুই দেশের সীমান্তের ১৯টি পয়েন্টে অপেক্ষমাণ প্রায় ৯০০ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার প্রসঙ্গটি আলোচনায় তুলেছিলেন জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) প্রতিনিধি সুম্বল রিজভী। তিনি মানবিক কারণে অপেক্ষমাণ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার অনুরোধ জানান।

ওই কর্মকর্তা আরো জানান, বাংলাদেশ বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। কাজেই নতুন করে আর রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে জাতিসংঘের উপদেশ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আরেকটা বিষয় মনে রাখা দরকার, রাখাইনে গৃহযুদ্ধের দামামা যতদিন বাজবে, ততদিন রোহিঙ্গা ফেরানোর সুযোগ থাকবে না।

সম্প্রতি রোহিঙ্গা বিষয়ে সম্প্রতি সরকারের অবস্থান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট করেই উল্লেখ করেছেন। কারণ এই মুহূর্তে আশ্রিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য নানাভাবে সংকট তৈরি করেছে। ফলে নতুন করে আরো রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার সুযোগ বাংলাদেশের নেই। রোহিঙ্গাবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের সভায় সাধারণত এদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের পরিস্থিতি, নীতিকৌশল বাস্তবায়নের পর্যালোচনা ও করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকে। অবশ্য বুধবারের সভায় মূলত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতির আলোকে বাংলাদেশে এর প্রভাব ও সামনের দিনগুলোতে কোথায় নজর দেওয়া হবে, সেগুলো গুরুত্ব পেয়েছে।

উল্লেখ্য, চলতি মাসের শুরু থেকে মিয়ানমারের রাখাইনে জান্তা ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির মধ্যে লড়াইয়ের তীব্রতা বাড়তে থাকে। দুই দেশের সীমান্ত এলাকা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এবং কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ থেকে ওপারের গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। সীমান্তের ওপারে লড়াই চলছে।

এই পরিস্থিতিতে ঢাকা ও দিল্লিকে সতর্ক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। তিনি মনে করেন, মিয়ানমার পরিস্থিতির সহসাই উন্নতি হচ্ছে না। এ কারণে বাংলাদেশ ও ‘সম্ভবত ভারতের জন্যও’ যে শরণার্থী সংকট ও নিরাপত্তা সমস্যা তৈরি হচ্ছে, যা সামনে আরো গভীর হতে পারে।

ওয়াশিংটনের থিঙ্কট্যাঙ্ক ইউএস ইনস্টিটিউট অব পিস (ইউএসআইপি)-এ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের ২ বছর পূর্তি উপলক্ষে স্টেট ডিপার্টমেন্ট, ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল ও পেন্টাগনের অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে এ কথা বলেন লু।

এ সময় ভারতসহ অন্য অংশীদারদের সঙ্গে ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ে সফল কৌশলের উদাহরণ হিসেবে শ্রীলঙ্কার প্রশংসা করেছেন ডোনাল্ড লু। ভারতের প্রতিবেশী সম্পর্কে ওয়াশিংটনের ভাবনার বিষয়ে তিনি জানান, সম্প্রতি মালদ্বীপ সফরকালে তিনি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন, বেইজিং যদি অন্য দেশের সঙ্গে সত্যিকারের প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়, তবেই চীন তাদের জন্য মূল্যবান অংশীদার হতে পারে।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের মতানৈক্যের বিষয়ে জানতে চাইলে ভারত-চীন সীমান্ত সংঘাত এবং ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ঐতিহাসিক ও গভীর সংঘাতের কথা তুলে ধরে তিনি জানান, মিয়ানমার পরিস্থিতি দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে আলোচনার জন্য তিনি যথেষ্ট সময় ব্যয় করেছিলেন।

লু বলেন, আমি বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থী ও বার্মায় অস্থিরতা এই অঞ্চলের জন্য কীভাবে প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে অনেক সময় ব্যয় করেছি। এক মিলিয়নেরও বেশি লোকের জন্য ঢাকা যে উদারতা দেখিয়েছে তার সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে উল্লেখযোগ্যভাবে কাজ করেছে। অনন্য এই উদারতা দেখার জন্য আমার বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির কক্সবাজার পরিদর্শন করার সুযোগ হয়েছিল। আমি এসব শরণার্থীকে ঘরে ফেরানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়গুলোর একসঙ্গে কাজ করার ইচ্ছাও প্রত্যক্ষ করেছি।

দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে এবং এই অঞ্চলে আমাদের অংশীদারদের, বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতকে সমর্থন করতে হবে, যাতে তারা তাদের দেশের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীলতা বাড়তে না দিয়ে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে পারে। এটি এমন জায়গা যেখানে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারতসহ অন্যান্য দেশ নিজেদের প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা করছে। আমরা আরো ভালো প্রস্তাব দেওয়ার মাধ্যমে জয়লাভ করব। আমার মত হলো চীন তখনই একটি ভালো অংশীদার হবে যখন সেখানে যথার্থ ও সত্যিকারের প্রতিযোগিতা থাকবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close