নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

কারাবন্দি বঙ্গবন্ধুর অনশনের হুমকি

ভারতবর্ষ ভাগ হওয়ার আগেই নবপ্রতিষ্ঠিত দুটি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রভাষা কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে যায়। ১৯৪৭ সালের জুলাইয়ে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. জিয়াউদ্দিন আহমদ অভিমত ব্যক্ত করেন, হিন্দিকে ভারতের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে যেহেতু স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে, উর্দুকেও পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করা উচিত। এ মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেওয়ার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন। এ পরিক্রমায় আসে ১৯৫২।

কারাবন্দি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মহিউদ্দিন আহমেদ ৯ ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিনের বরাবর তাদের আটকাদেশের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রত্যাহার না করা হলে ১৬ তারিখ থেকে অনশন ধর্মঘট করার হুমকি দিয়ে একটি স্মারকলিপি পাঠান। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার তাদের ঢাকা জেল থেকে ফরিদপুর জেলে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। পাকিস্তান সরকার কী পরিমাণ আতঙ্কগ্রস্ত থাকত, শেখ মুজিবকে নিয়ে তার জন্য নিচের উদ্ধৃতাংশ দ্রষ্টব্য- ফরিদপুর জেলে পৌঁছেই তারা দুজন অনশন ধর্মঘট শুরু করেন। ‘শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দিন আহমেদের অনশন ধর্মঘট’ শিরোনামে নিম্নলিখিত প্রচারপত্র সারা দেশে বিলি করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দিন আহমেদের অনশন ধর্মঘট- বিভিন্ন সংবাদপত্র ও নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রকাশ যে নিরাপত্তা বন্দি শেখ মুজিবুর রহমান ও মহিউদ্দিন আহমেদ ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে অনশন ধর্মঘট আরম্ভ করেছেন।

বঙ্গবন্ধু তার অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লেখেন, ‘সরকার আমাকে ঢাকা জেলে পাঠিয়ে দিলেন, ভালোভাবে চিকিৎসা না করে। আমি জেলে এসে মহিউদ্দিনকে সকল কথা বললাম। মহিউদ্দিনও রাজি হলো অনশন ধর্মঘট করতে। আমরা দুজনে সরকারের কাছে পহেলা ফেব্রুয়ারি দরখাস্ত পাঠালাম। যদি ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমাদের মুক্তি না দেয়া হয়, তাহা হলে ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে অনশন ধর্মঘট শুরু করব। দুইখানা দরখাস্ত দিলাম। আমাকে যখন জেল কর্তৃপক্ষ অনুরোধ করল অনশন ধর্মঘট না করতে, তখন আমি বলেছিলাম, ছাব্বিশ-সাতাশ মাস বিনাবিচারে বন্দি রেখেছেন। কোনো অন্যায়ও করিনি। ঠিক করেছি জেলের বাইরে যাব, হয় আমি জ্যান্ত অবস্থায় না হয় মৃত অবস্থায়। তারা সরকারকে জানিয়ে দিল। বাইরে সমস্ত জেলায় ছাত্রলীগ কর্মীরা যেখানে যেখানে আওয়ামী লীগ ছিল সেখানে খবর পাঠিয়ে দিয়েছিল। এদিকে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদও গঠন করা হয়েছে। এদিকে জেলের ভেতর আমরা দুজন প্রস্তুত হচ্ছিলাম অনশন ধর্মঘট করার জন্য। আমরা আলোচনা করে ঠিক করেছি, যাই হোক না কেন, আমরা অনশন ভাঙব না। যদি এ পথেই মৃত্যু এসে থাকে তবে তাই হবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close