নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

৩৩০ জনকে মিয়ানমার পাঠানো হলো

বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিপি সদস্যসহ ৩৩০ জনকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে তাদের কক্সবাজারের উখিয়ার ইনানী নৌবাহিনী জেটিঘাট থেকে প্রথম ধাপে ১৬৫ জনকে, তার কিছুক্ষণ পর বাকিদের মিয়ানমারের জাহাজে তুলে দেওয়া হয়। এ সময় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমার রাষ্ট্রদূত অং কিয়াও মোয়েও উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে মিয়ানমারের ৫ সদস্যের বিজিপি প্রতিনিধিদল কক্সবাজারের ওই জেটিঘাটে এসে পৌঁছায়। ওই জাহাজ থেকে মিয়ানমারের ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদলটিকে কোস্টগার্ডের একটি জলযান ইনানী জেটিঘাটে নিয়ে আসে। এ সময় তাদের স্বাগত জানান বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। এর আগে ভোর ৪টায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত ও টেকনাফ থেকে বিজিবির কড়া পাহারায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্য, শুল্ক কর্মকর্তাসহ ৩৩০ জনকে কক্সবাজারের ইনানীর নৌবাহিনীর জেটিঘাটে আনা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার বিষয়ক পরিচালক মো. রাকিবুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব মো. রাশেদ হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।

বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘৩৩০ মিয়ানমার নাগরিককে বিজিবির কক্সবাজার রিজিয়নের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’ আশ্রিতদের কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা হাইস্কুল ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১২টি বাসে করে কক্সবাজার ইনানীর জেটিঘাটের কাছে একটি অস্থায়ী শেডে রাখা হয়। এছাড়া চারটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ঘাটে নেওয়া হয় দেশটির আহত নাগরিকদের। তার আগে পালিয়ে আসা মিয়ানমারের এ নাগরিকদের হস্তান্তরে উভয় দেশ সিদ্ধান্তে পৌঁছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর একটি জাহাজ সিতওয়ে বন্দর দিয়ে বাংলাদেশের সীমানার কাছে আসে। সেটি গভীর সমুদ্রে নোঙর করে রাখা হয়। বেলা ১১টায় আশ্রয় নেওয়াদের বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের একটি জাহাজে তোলা শুরু হয়।

বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়, আশ্রয় গ্রহণকারী ৩৩০ জনের মধ্যে ৩০২ জন বিজিপি সদস্য, চারজন বিজিপি পরিবারের সদস্য, দুজন সেনাসদস্য, ১৮ জন ইমিগ্রেশন সদস্য এবং চারজন বেসামরিক নাগরিক। এর মধ্যে দুই নারী ও দুই শিশুও রয়েছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে রাষ্ট্রীয় জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর চলমান সংঘর্ষের জেরে জীবন বাঁচাতে গত ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী কয়েকদিন বাংলাদেশে পালিয়ে আশ্রয় নেন তারা। আশ্রয় নিতে আসা ৩৩০ জনের মধ্যে ১৫৫ জনকে ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয়ে এবং হ্নীলা উচ্চবিদ্যালয়ে ১৬৬ জনকে রাখা হয়। এছাড়া আহতদের মধ্যে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঁচজন ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চারজনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর আগে বান্দরবান ও কক্সবাজারের সীমান্তের ওপারে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষ চলে। একপর্যায়ে টিকতে না পেরে সীমান্ত চৌকি ফেলে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন বিজিপি সদস্যরা।

এদিকে টানা কয়েকদিন ধরে সীমান্তের ওপর থেকে থেকে গোলাগুলি ও মর্টার শেল নিক্ষেপের ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকার সাধারণ মানুষ। গত ৫ ফেব্রুয়ারি নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের জলপাইতলী গ্রামের একটি রান্নাঘরের ওপর মিয়ানমার থেকে ছোড়া মর্টার শেলের আঘাতে দুজন নিহত হন। এখনো গোলাগুলি পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। সীমান্তের সবক’টি চৌকি আরাকান আর্মির দখলে থাকলেও সেসব চৌকি পুনরুদ্ধার করতে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সেনাবাহিনী যেকোনো মুহূর্তে হামলা চালাতে পারে। ফলে যেকোনো মুহূর্তেই ফের সংঘাতের শঙ্কা রয়েছে সীমান্তের ওপারে। তার প্রভাব এপারেও এসে পড়ে কি না, সে উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী বাসিন্দারা। সংঘাতময় পরিস্থিতিতে সীমান্তে থাকা একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সীমান্তে টহল ও জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থানে রয়েছে বিজিবি। সীমান্ত দিয়ে আর একজন মিয়ানমার নাগরিককেও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, গত ১১ ফেব্রুয়ারি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিজিপিসহ ৩৩০ সদস্যকে মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তনের জন্য বিজিবিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিজিবির রামু সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল মেহেদী হোসাইন কবীরের নেতৃত্বে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, কক্সবাজার ও টেকনাফির বিজিবি অধিনায়কের সমন্বয়ে সাত সদস্যের একটি হস্তান্তর কমিটি গঠন করা হয়। আরাকান আর্মি এবং মিয়ানমারের সামরিক জান্তার অব্যাহত সংঘর্ষে সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের মংডু অঞ্চল থেকে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও বেসরকারি সংস্থাগুলো (এনজিও) তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিচ্ছে। প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছে নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান) প্রতিনিধি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close