নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

অভিযানের পরও অস্থিতিশীল নিত্যপণ্যের বাজার

* এক বছরে বহু পণ্যের দাম বেড়ে দ্বিগুণ * ১৩০ টাকার আদা ২২০ টাকা, ৩৮৫ টাকার শুকনা মরিচ ৫৫০, ১৩০ টাকার মুরগি ২০০ টাকা

সদ্য বিদায়ি বছরের শুরুতে ব্রয়লার মুরগির মূল্যবৃদ্ধি দিয়ে বাজার অস্থিতিশীল হতে শুরু করে। জানুয়ারি থেকে মার্চ মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির প্রতি কেজিতে বাড়ে ১৪০ টাকা। দাম বেড়ে দাঁড়ায় ২৮০ টাকা পর্যন্ত। পর্যায়ক্রমে ডিম, কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ ও চিনির মতো নিত্যপণ্যের দামে নতুন রেকর্ড তৈরি হয়। দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারিভাবে বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করা হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

গতকাল বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি খোলা ও প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৪৫ টাকায়, যা ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ছিল ১১৩ টাকা। ১৩০ টাকার আদা ২২০, শুকনো মরিচ ৩৮৫ টাকা থাকলেও বছরের ব্যবধানে ৪৮০-৫৫০, ১৩৫ টাকার ব্রয়লার মুরগি ১৮০-২০০ এবং ৫৩৫ টাকা কেজির জিরা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৯৫০- ১০২৫ টাকা কেজি দরে। গত বছর জুনের শেষ দিকে ঢাকার বাজারে কাঁচামরিচের কেজি ৪০০ টাকায় ঠেকে। এখন অবশ্য মানভেদে ৬০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছরের জানুয়ারিতে ছিল ১০০-১২০ টাকা।

এক বছরের ব্যবধানে ডিমের বাজারে প্রতি ডজন ডিমের দাম বেড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের আগস্টে ডিমের ডজন দাঁড়ায় ১৫৫ টাকায়। লেয়ার মুরগির লাল-বাদামি ডিমের ডজন ১৬০-১৬৫ টাকায় ওঠে। সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ১২ টাকায় বেঁধে দেয় ডিম। কিন্তু বাজারে সেই দাম কার্যকর হয়নি। পরে সেপ্টেম্বরে ভারত থেকে ডিম আমদানির মাধ্যমেও নিয়ন্ত্রণ হয়নি দাম। বর্তমানে কারওয়ান বাজারে ডিমের হালি ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা। সাদা ডিমের ডজন ১৩৫-১৪০ এবং লাল বাদামি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৪৫ টাকায়।

ভারত সরকার পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলে গত বছর ডিসেম্বরে দেশি পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ২২০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। নতুন পেঁয়াজ আসতে শুরু করায় দাম কিছুটা কমলেও গত রবিবার থেকে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে। দেশি ছাড়াও আমদানি করা রসুনের দামও দ্বিগুণ। মাত্র ৭৮ টাকা কেজির দেশি রসুন বর্তমান বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা। আমদানি করা ১২০ টাকার রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়।

সেপ্টেম্বর মাস থেকে আলুর বাজার চড়তে শুরু করে। প্রতি কেজি আলু তখন ৫০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। এ বছর বাজারে নতুন আলু উঠলের দাম কমেনি। বর্তমানে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা। আমন ধান কাটার মৌসুমে বিআর-২৮, পাইজাম, গুটি ও সুগন্ধি ধানের দাম কমার সম্ভাবনা থাকলেও কমেনি। ঢাকার কাঁচাবাজারে গত ১০ দিনে চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে। মিনিকেট ও নাজিরশাইল চালের দামও গত তিন দিনে বেড়েছে। বর্তমানে আঠাস ৫৫-৫৬, মিনিকেট ৭০-৭৫, নাজিরশাইল ৮০-৮২ ও চিনিগুঁড়া আতপ চালের কেজি ১৩০ টাকায় ঠেকেছে। মুরগি ব্যবসায়ী হাসিবুল ইসলাম প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, রমজান মাসের আগে ব্রয়লারসহ অন্য মুরগির দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে। শুনেছি, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে বসে ঠিক করেছে। পোলট্রি খাতে দেশের বড় চারটি কোম্পানি বৈঠকে এ ব্যাপারে একমত হয়েছে। রোজায় দাম বাড়বে না বলেই মনে হচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ ও খাদ্যের মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ ছিল। অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশে দাঁড়ায়। তবে নতুন বছরের শুরুতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে গরুর মাংসের দামে ভোক্তাপর্যায়ে কিছুটা স্বস্তি মিলে। কারণ, গরুর মাংসের প্রতি কেজির দাম ৭৫০-৮০০ থেকে কমে ৬০০-৬৫০ টাকায় নেমে আসে। সেই স্বস্তি বেশিদিন টিকেনি। বর্তমানে কারওয়ান বাজার, মগবাজার কাঁচাবাজার, গুলশান এলাকায় গরুর মাংস ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

নতুন বছরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আদাজল খেয়ে মাঠে নামে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানতে পাইকারি ও খুচরা বাজারে অভিযান পরিচালনা করে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের যৌথ টিম। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে এসব কেরামতির ফলাফল শূন্য।

নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা সম্পর্কে জানতে চাইলে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় মূল্যস্ফীতি কমে আসছে কিন্তু বাংলাদেশে তেমনটা দেখা যায় যাচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে অনেকগুলো বিষয় রয়েছে। এখন শক্ত মুদ্রানীতি প্রণয়ন ও ডলারের বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ করা গেলে আমরাও সুফল পাব।

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে শুধু ‘হুমকি-ধমকি’ নয়, কার্যকর ‘অ্যাকশন’ নেওয়ার পক্ষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তার ভাষায়, নতুন সরকারের সামনে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হলো মূল্যস্ফীতি কমানো। নতুন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, সাধারণ মানুষ যেন ন্যায্যমূল্যে ডিম কিনতে পারেন সেজন্য ডিম ব্যবসায় সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। নিত্যপণ্যের বাজারদর নিয়ন্ত্রণে একজোট হয়ে যে চেষ্টা সাধারণভাবে ‘সিন্ডিকেট’ নামে পরিচিতি পেয়েছে, সেটি গুঁড়িয়ে দেওয়ার পদ্ধতি বের করতে চান নতুন কৃষিমন্ত্রী আবদুস শহীদ। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ও পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুস সালামও বাজার নিয়ে কথা বলছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close