নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

চাহিদা মেটাতে বাড়ছে গ্যাসের আমদানি

দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে গ্যাসের চাহিদা। এছাড়া গ্যাসের চাহিদা ও সরবরাহে বেড়ে চলেছে ব্যবধান। সরকারি-বেসরকারি পর্যবেক্ষণ বলছে, অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় সামনে এ চাহিদা আরো বাড়বে। এ অবস্থায় গ্যাসের চাহিদা মেটাতে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে জোর দেওয়ার পাশাপাশি আমদানিও বাড়াচ্ছে; করা হচ্ছে দীর্ঘ মেয়াদে চুক্তি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহে ১৫ বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে কাতার এনার্জি এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক্সিলারেট এনার্জি। গত সোমবার সই হওয়া চুক্তির আওতায় তারা বাংলাদেশে বছরে ১০ লাখ টন এলএনজি সরবরাহ করবে। ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে এ এলএনজি সরবরাহ শুরু হবে। বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) সূত্রে জানা গেছে, দেশে গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৪ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। বিপরীতে গড়ে সরবরাহ করা হচ্ছে মাত্র ২ হাজার ৫৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট পাওয়া যাচ্ছে আমদানি করা এলএনজি থেকে। এ হিসাবে ১ হাজার ৭৫০ মিলিয়ন ঘনফুট ঘাটতি থাকছে। ফলে নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধানের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক স্পটমার্কেট থেকে এক কার্গো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। ৪২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স ভিটল এশিয়া পিটিই লিমিটেড’ থেকে এ এলএনজি কেনা হবে। গতকাল বুধবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলনকক্ষে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

কাতার এনার্জি সম্প্রতি ইউরোপীয় ও এশীয় দেশগুলোর কাছে এলএনজি সরবরাহে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। দেশটি সম্প্রতি নর্থ ফিল্ড এক্সপ্যানশন বা সম্প্রসারণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এর মধ্য দিয়ে ২০২৭ সালের মধ্যে কাতারের এলএনজি উৎপাদন ১২৬ মিলিয়ন টনে উন্নীত হবে, বর্তমানে যা ৭৭ মিলিয়ন টন। কাতার এখন বিশ্বের অন্যতম বড় এলএনজি সরবরাহকারী। বাংলাদেশে তারা সবচেয়ে বেশি এলএনজি সরবরাহ করে। এলএনজিশিল্পে প্রাকৃতিক গ্যাসকে অন্তর্বর্তীকালীন পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়, ভবিষ্যতেও যার চাহিদা থাকবে।

কাতার এনার্জির প্রধান নির্বাহী সাদ আল-কাবি বিবৃতিতে বলেন, ‘নতুন এ চুক্তির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরো জোরদার হবে। একইসঙ্গে এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জ্বালানির চাহিদা মিটবে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে বাংলাদেশ আরো খানিকটা এগিয়ে যাবে।’ আল-কাবি সাংবাদিকদের আরো বলেন, কাতার এনার্জি এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করতে চায়। শিগগিরই বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। কাতার এনার্জি বলেছে, এক্সিলারেট এনার্জি ২০২৬ ও ২০২৭ সালে ৮ লাখ ৫০ হাজার টন এলএনজি এবং ২০২৮ থেকে ২০৪০ সালের মধ্যে ১০ লাখ টন এলএনজি কিনবে। এরপর বাংলাদেশের ভাসমান এলএনজি টার্মিনালে এ তরল গ্যাস সরবরাহ করা হবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব সাঈদ মাহমুদ খান সাংবাদিকদের জানান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন-২০১০ (সংশোধনী ২০২১)-এর আওতায় মাস্টার সেল অ্যান্ড পার্সেস এগ্রিমেন্ট (এমএসপিএ) সই করা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কোটেশন সংগ্রহ করে এক কার্গো এলএনজি আমদানি করা হবে। সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠান ‘মেসার্স ভিটল এশিয়া পিটিই লিমিটেড’ থেকে এ এক কার্গো এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হবে ৪২৯ কোটি ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে প্রতি এমএমবিটিইউর (ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) দাম পড়ছে ৯.৯৩ মার্কিন ডলার। এর আগে ২৩ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ডভিত্তিক টোটালএনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার থেকে থেকে এক কার্গো বা ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রতি এমএমবিটিইউ ১০.৮৮ মার্কিন ডলার দরে এতে খরচ ধরা হয় ৪৭০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close