নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৭ জানুয়ারি, ২০২৪

গরুর মাংসের দাম বেড়ে ফের ৭০০ টাকা

গেল বছরের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে ৫৯৫ টাকা কেজিতে গরুর মাংস বিক্রি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন রাজধানীর শাহজানপুরের মাংস বিক্রেতা খলিল মিয়া। তার এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগের কারণে ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে মাংসের দাম সহনশীল পর্যায়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। ফলে দাম ক্রয়ক্ষমতার ভেতরে আসায় নিম্ন-আয়ের অনেকেই মাংস কেনেন। কিন্তু হুট করে কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় আবারও নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে গরুর মাংস।

রামপুরা কাঁচাবাজারে আয়েশা বেগম নামের একজন ক্রেতা বলেন, ‘কয়েক দিন গরুর মাংস বেশ কমে কিনেছি। এখন আবার বাড়ল। এতে খরচ আবার বাড়বে। তাতে কেনাকাটা কমাতে হবে।’

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর রামপুরা কাঁচা বাজার, পলাশী বাজার, নিউমার্কেট কাঁচা বাজার ও কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, গরুর মাংস এখন ৭০০- থেকে ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। একটু দেখেশুনে নিতে চাইলে অনেক ক্ষেত্রে দাম আরো ৫০ টাকা বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। তবে কোনো কোনো বিক্রেতা এখনো ৬৫০ টাকায় গরুর মাংস বিক্রি করছেন। তবে কম দামে বিক্রি করা বিক্রেতার সংখ্যা একেবারে হাতে গোনা। কম দামে কিনতে গেলে অবশ্য মাংসের মান ও পরিমাণে আপস করতে হয়। কারণ, সে ক্ষেত্রে চর্বি ও হাড় বেশি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ আছে।

রাজধানীর পলাশী বাজারের মাংস বিক্রেতা তপন মুনশি বলেন, একটু ভালো মানের মাংস সরবরাহ করতে গেলে অনেক সময় ৭০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেও ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। তবে মূল্যবৃদ্ধির পরে বেচাকেনা কিছুটা কমতে শুরু করেছে।

গরুর মাংসের দাম নতুন করে বৃদ্ধির পেছনে ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফা করার প্রবণতাকে দায়ী করেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি বলেন, ‘নির্বাচন উপলক্ষে ব্যবসায়ীদের কিছুটা সংযত দেখা গিয়েছিল। নির্বাচন শেষে তারা আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তাই সরকারকে বাজার নিয়ন্ত্রণের দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।’

খামারি, গরু ব্যবসায়ী, কসাই ও ক্রেতা- সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে গরুর মাংসের দাম যখন বেশি ছিল, তখন বেচাকেনা অনেক পড়ে গিয়েছিল। মাংসের দাম কম রাখার পরে বেচাবিক্রি অনেকটাই বেড়েছিল। প্রতি কেজি মাংসের দাম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা কমার ফলে অনেকে সারিতে দাঁড়িয়েও মাংস কিনেছিলেন।

কিন্তু সেই চিত্র এক মাসের বেশি স্থায়ী হয়নি। মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় বেচাকেনাও আবার কমে এসেছে। মাংসের দাম বাড়ানোর কারণ হিসেবে বিক্রেতারা গরুর মূল্যবৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মোর্তুজা বলেন, ‘অনেকে কোরবানির জন্য গরু মজুদ করা শুরু করেছেন। তাতে এখন আর কম দামে গরু পাওয়া যাচ্ছে না। যার জন্য মাংসের দাম বাড়াতে হয়েছে। এখন পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, না পারছি ক্রেতাদের দাবি রক্ষা করতে, না পারছি ব্যবসা করতে। মাংসের বাজারে একটা উভয় সংকট পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’

তবে এ বিষয়ে মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সাধারণ সম্পাদক শাহ ইমরান। তিনি বলেন, এক মাসের মধ্যে গরুর মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ার কথা নয়। কারণ, উৎপাদন খরচ নতুন করে বাড়েনি। আবার এ সময়ের মধ্যে সরবরাহেও বড় কোনো সংকট তৈরি হয়েছে, তাও বলা যাবে না। তবে গোখাদ্যের দাম দফায় দফায় বৃদ্ধির কারণে সময়ে সময়ে অনেক খামারি উৎপাদন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে মাংস উৎপাদন হয়েছিল ৮৭ লাখ টন। ওই বছর দেশের বাজারে মাংসের চাহিদা ছিল ৭৬ লাখ টন। ফলে চাহিদার তুলনায় ১১ লাখ টন বেশি মাংস উৎপাদিত হয়েছে। উৎপাদন বেশি হওয়া সত্ত্বেও বাজারে মাংসের দাম ছিল বেশি। অবশ্য ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে মাংস উৎপাদন এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় ৫ লাখ ৫৫ হাজার টন কম হয়েছিল।

দেশে বিদায়ি ২০২৩ সালের মার্চে প্রতি কেজি গরুর মাংসের সর্বোচ্চ দাম উঠেছিল ৮০০ টাকা। তখন থেকে গত নভেম্বর পর্যন্ত তা ছিল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। পাঁচ বছর আগে দেশের বাজারে গরুর মাংসের দাম ছিল ৪৭০ থেকে ৫০০ টাকা কেজি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close