নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৭ জানুয়ারি, ২০২৪

নির্বাচন-পরবর্তী সংকট উত্তরণে যত চ্যালেঞ্জ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর নতুন সরকারকে বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে শক্ত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, অর্থনীতিকে একটি স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে আসাটাই হবে নতুন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তবে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা না নিতে পারলে রিজার্ভ, রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয় ছাড়াও রাজস্ব ও ব্যাংক খাত নিয়ে যে ভয়াবহ উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা থেকে উত্তরণে হাঁটতে হবে সাবধানে।

অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এখন যেহেতু আর বিশেষ কোনো নীতি সংস্কার হবে না, তাই নির্বাচনের পর দ্রব্যমূল্য, মুদ্রাবিনিময় হার ও ব্যাংকঋণের সুদের হারে মনোযোগ দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, ব্যাংক বা কোনো খাতে যেন কাঠামোগত সংকট না হয়। বৈদেশিক দায়দেনা পরিশোধের ক্ষেত্রেও যেন সমস্যা তৈরি না হয়।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আর্থিক খাতে সুশাসন আনা এবং শুরুতেই বর্তমান বাজেটের আকার অন্তত এক লাখ কোটি টাকা কমিয়ে টাকাকে আকর্ষণীয় করার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে নতুন সরকারকে।

প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়েছিল চলতি বছরের জুনে। কিন্তু নানা কারণে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ার জের ধরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমতে কমতে ১৬ বিলিয়ন ডলারে এসে ঠেকেছে এবং ডলারের বাজারের অস্থিতিশীলতা নানা পদক্ষেপ নিয়েও কাটানো যাচ্ছে না। এসবের জের ধরে বছর জুড়ে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশেরও বেশি হওয়ায় দ্রব্যমূল্য বেড়ে জনজীবনে দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।

অন্যদিকে রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে কমেছে বিদেশি বিনিয়োগ, প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না রপ্তানি-বাণিজ্যে আবার রিজার্ভ বাঁচাতে আমদানি ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে। আহসান এইচ মনসুর বলেন, এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য নতুন সরকারকে দ্রুত কিছু স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে, কিন্তু তার জন্য দরকার হবে অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে রাজনৈতিক প্রজ্ঞাময় একটি চৌকস অর্থনৈতিক টিম। তার মতে, এটি না থাকার কারণেই অর্থনীতির দুরবস্থায় পতন ঠেকাতে পারেনি শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার।

চ্যালেঞ্জগুলো কী কী : বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করে, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলোর যে তালিকা তার প্রথমেই থাকা উচিত মুদ্রাবিনিময় হার। বিনিময় হার বলতে বোঝায় এক দেশের সঙ্গে আরেক দেশের মুদ্রার যে বিনিময় হার। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেটি ডলার ও টাকার। কিন্তু বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত দুবছর এর সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে পেরেছে কি না- তা নিয়ে বড় সমালোচনা আছে অর্থনৈতিক অঙ্গনে।

মুদ্রাবিনিময় হার নির্ধারিত হওয়ার কথা বাজারের চাহিদা ও জোগানের ভিত্তিতে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিরুদ্ধে বড় সমালোচনা হলো তারা কখনোই সেটি হতে দেয়নি। ডলার কেনাবেচাসহ নানা কায়দায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেটি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করার কারণে কিছুদিন ডলারের দাম আটকে রাখা গেলেও শেষ পর্যন্ত তা লাগামহীন হয়ে গেছে। এখন পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, টাকার মান ধরে রাখা যাচ্ছে না, রিজার্ভ কমে যাওয়ায় আবার ডলার বিক্রি করলে টাকার তারল্য কমে চাপ পড়ছে সুদের হারের ওপর। এই দুটি বিষয়- মুদ্রাবিনিময় হার ও সুদের হারের বিষয়ে সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়া যায়নি বলেই অর্থনীতির বেহাল দশাও ঠেকানো যায়নি।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রাজস্ব আয় বাড়াতে না পারলে সরকার বিদেশি সহায়তা নিয়েও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারে না। এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় হবে- প্রবৃদ্ধির ধারা কমিয়ে মূল্যস্ফীতি কমানো, টাকাকে আকর্ষণীয় করা ও সুদের হার বাড়ানো।

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এখন অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে হলে শুরুতেই মুদ্রাবিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আনতে হবে। আর সেটা করতে হলে মূল্যস্ফীতি কমাতে হবে। সেজন্য দরকার হবে ব্যাংকঋণের সুদের হার বাড়ানো। এর মধ্যেই সরকার কিছু বাড়িয়েছে, কিন্তু এটি আরো বাড়াতে হবে। এ ছাড়া রেমিট্যান্সের ক্ষেত্রে খুব বেশি উন্নতির সুযোগ নেই বিবেচনায় অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে আয় বাড়ানো অর্থাৎ রাজস্ব আয় কীভাবে বাড়ানো যাবে- সেটিও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে সরকারের জন্য। সরকার যে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নিচ্ছে তারও একটি বড় শর্ত হলো এই রাজস্ব বাড়ানো। এজন্য এ খাতের সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন জরুরি বলে মনে করেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। নতুন সরকারের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হবে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে দেশের ব্যাংক খাত যেন কাঠামোগত বিপর্যয়ে না পড়ে, সেটি নিশ্চিত করা। দেশের অধিকাংশ ব্যাংকই এখন রীতিমতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে চলছে। কিছু ব্যাংক পুরোপুরি সক্ষমতা হারিয়েছে অনেক আগেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close