নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৭ অক্টোবর, ২০২২

দেশের অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী : প্রধানমন্ত্রী

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে আগামী বছর বিশ্বের জন্য ‘অত্যন্ত দুর্যোগময়’ হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়া দেশের অর্থনীতি ‘যথেষ্ট শক্তিশালী’ আছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, দুশ্চিন্তার কিছু নেই। গত ছয় মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ অনেকটা কমে গেলেও এখনো সরকারের হাতে অনেক বৈদেশিক মুদ্র জমা রয়েছে। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) বিকালে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্ক পর্বে প্রতিবারের মতো এবারও বাংলায় বক্তব্য দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সফরে বিশ্ব নেতাদের মধ্যে যাদের সঙ্গেই দেখা হয়েছে, সবাই অর্থনীতি নিয়ে শঙ্কার কথা বলেছেন। প্রত্যেকের মাঝে কিন্তু এ ধরনের একটা আশঙ্কা। সবাই এ কথা বলেছেন যে, ২০২৩ সাল বিশ্বের জন্য অত্যন্ত দুর্যোগময় একটা সময় এগিয়ে আসছে, এমনকি বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষও দেখা দেবে, এমন শঙ্কা সবার মনে। এ নিয়ে সবাই চিন্তিত ও আতঙ্কিত।

দেশের অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একদিকে করোনাকালীন সংকট, অন্যদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং স্যাংশন, পাল্টা স্যাংশন। এর মাঝেও আমাদের অর্থনীতি এখনো যথেষ্ট সচল রাখতে পেরেছি। এটা আমার কথা না, আন্তর্জাতিক নানা সংস্থাও সে কথা বলছে। শুধু এটুকু বলব, আমরা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে লংটার্ম, মিডিয়াম টার্ম বা ইমিডিয়েট, যেকোনো ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের কোনো রিস্ক নেই।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সামষ্টিক অর্থনীতির যে টার্গেট আমরা নির্দিষ্ট করেছি, সেটা আমরা অর্জন করতে সক্ষম হব- এ ব্যাপারে সবাইকে আমি আশ্বস্ত করতে চাই। এরপর যদি মহাদুর্যোগ দেখা দেয়, এমনিতেই সারা বিশ্ব তো কষ্ট পাচ্ছে। তাতে বেশি কিছু বলার নেই। আমাদের অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী আছে- এটুকু আশ্বাস আমি দিতে পারি।’

উৎপাদন করুন, অপচয় করা যাবে না, দুশ্চিন্তা না করে সর্বোচ্চ চেষ্টা ও সাশ্রয়ী হওয়ার তাগিদও দেন সরকার প্রধান। তিনি বলেন, ‘দুশ্চিন্তা তো মানসিক ব্যাপার, কার কী মানসিকতা, তার ওপরও নির্ভর করে। তবে সবাই মিলে যদি এই চিন্তা করে যে, না, দেশটা আমাদের, এই দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, সেক্ষেত্রে আমাদের অপচয় করলে হবে না। তার পরও দেশবাসীর কাছে আমি বারবার আহ্বান করেছি, আপনারা যার যেখানে যতটুকু জমি আছে বা জলাধার আছে, সেখানে যেন কিছু না কিছু উৎপাদন করেন। কারণ খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টা বেশি বিবেচনা করা দরকার।’

এ সময় প্রতিটি ক্ষেত্রে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বানও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘বিদ্যুৎ ব্যবহার, পানি ব্যবহার, খাদ্য ব্যবহার, প্রতিটি ব্যবহারে সবাই যেন একটু সাশ্রয়ী হন। কারণ আগামী সংকটটা যেন আমাদের সেভাবে না দেখা দেয়।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যত ঋণ নেই, বাংলাদেশ আজ পর্যন্ত কখনো কোনো দিন খেলাপি হয়নি। যত সমস্যা থাক, আমরা কিন্তু সময়মতো ঋণ পরিশোধ করি। যখন ঋণ পরিশোধ করি আমাদের রিজার্ভ তখন কিছুটা কমে যায়। করোনাভাইরাসের সময় যখন অনেক কার্যক্রম বন্ধ ছিল, আমরা যথেষ্ট রিজার্ভ বাড়াতে পেরেছিলাম।’

বাজেটের সমস্যা হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেসব প্রকল্প একান্তভাবে আমাদের জরুরি, সে প্রকল্পগুলো এবং অধিক টাকা দিয়ে দ্রুত শেষ করে সেখান থেকে রিটার্ন পাওয়া যায়, সেই ধরনের প্রকল্পগুলো আমরা দ্রুত শেষ করে দিচ্ছি। আমরা দেখি, ওই প্রকল্পটা আমাদের দেশের জন্য কতটা প্রযোজ্য, কত টাকা খরচ করতে হবে, কত টাকা ঋণ নিতে হবে, কত টাকা পরিশোধ করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের পর আমার কত টাকা রিটার্ন আসবে। রিটার্ন ভালো পাব, সেটা গ্রহণ করি, বাকিগুলো করি না।’

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিষেধাজ্ঞা (র‌্যাবের ওপর) তারা কতটুকু তুলবে জানি না, তবে যাদের দিয়ে এ দেশের সন্ত্রাস দমন হয়েছে, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার অর্থ কী? সন্ত্রাসীদের মদদ দেওয়া? এটাই প্রশ্ন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। তাহলে কি তারা সন্ত্রাস দমনে নাখোশ? ৪০ বছর ধরে তালেবানের সঙ্গে যুদ্ধ করে সেই তালেবানকেই ক্ষমতা দিয়ে চলে এলো যুক্তরাষ্ট্র। ৪০ বছর তো তারা রাজত্ব করল। তাহলে তাদের ব্যর্থতার কথা বলে না কেন।

র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন সময় নানা রকম ঘটনা ঘটায়। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমাদের দেশেরই কিছু লোক স্থানীয়ভাবে সেখানে থাকে। তারা সেখানের সিনেটরদের কাছে বানোয়াট ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে থাকে। এসব তথ্য দিয়ে একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে। যারা এসব করে, তারা কিন্তু এক একটি অপকর্ম করেই দেশ ছাড়া। র‌্যাবের ওপর তারা যখন নিষেধাজ্ঞা দিল, আমার প্রশ্ন হচ্ছে র‌্যাব সৃষ্টি করেছে কে? এটি তো যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শে হয়েছে। তারাই তো র‌্যাব সৃষ্টি করতে পরামর্শ দিয়েছে। র‌্যাবের প্রশিক্ষণ, অস্ত্র, হেলিকপ্টার, আইটি সিস্টেম সবই যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া। যখন নিষেধাজ্ঞা দেয়, অভিযোগ জানায়, তখন তো বলা লাগে যেমন ট্রেনিং দিয়েছে তেমনই কাজ করছে। এখানে আমাদের করার কী আছে?’

আমি চাই নতুন নেতৃত্ব আসুক : রাজনীতি থেকে বিদায় নেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন বলে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগের একটি কাউন্সিলরও যদি বলে আমাকে চায় না, আমি দলের নেতা থাকব না।’

নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ চান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই সব দল আসুক। ইলেকশন করুক।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সামগ্রিক বিবেচনায় এবারের জাতিসংঘ অধিবেশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ অত্যন্ত সফল হয়েছে। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা এবং পাল্টা নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সংকট ও বিরোধ নিষ্পত্তি করার জন্য বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছি।’ পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল জানান, সেখানে তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শান্তি ও উন্নয়নভিত্তিক পররাষ্ট্রনীতির প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেছেন।

রোহিঙ্গারা যাতে সম্মানের সঙ্গে ও নিরাপদে নিজ দেশে ফিরতে পারে, সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয়, ত্রিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমার সরকারের সদিচ্ছার অভাবে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন সম্ভব হচ্ছে না। রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি এবং রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করার জন্য জাতিসংঘকে কার্যকর ও জোরালো ভূমিকা রাখার জন্য আহ্বান জানিয়েছি।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close