reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২০

ফেচবুক কর্ণার

আমার ভাবনাজুড়ে সেদিন আপার বিস্ময় আর রাজ্যজয়ের সুখ...

সময়টা ২০১৬। জানুয়ারি মাস। গণভবন থেকে আমার এবং বৃন্দাবনের নামে কার্ড পেলাম। পিঠা খাবার নিমন্ত্রণ। অভিনয়শিল্পী। বুকের ভেতর ধুঁক ধুঁক করতে লাগল! আমি কোনো স্টার তকমার শিল্পী নই বলেই জানি। বিস্ময়-ভালোলাগা-অস্বস্তি সব মিলিয়ে গেলাম। একটা বিষয় বলে রাখি, আমার ছেলেরা ছোটবেলা থেকে কিছু জিনিস সংগ্রহ করে। যেমনÑ কোকের বোতলের ছিপি কৌটায় করে রাখে, প্যাকেট বাঁধা রাবার, সারা পৃথিবীর বিখ্যাত মানুষের ছবি কেটে এনে একটা ডায়েরিতে পেস্টিং করে, কয়েন জমায়, প্রিয় মানুষ-গুণী মানুষদের অটোগ্রাফ সংগ্রহ করে। তো আমি কার্ড পাওয়ার পর থেকে তাদের বায়না, শেখ হাসিনা আন্টির (প্রধানমন্ত্রী) একটা অটোগ্রাফ নিয়ে দিবা। যেখানে ফোন-ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে ঢোকা যাবে না, সেখানে আমি উনার কাছে গিয়ে অটোগ্রাফ নেব! কত প্রটোকল/সিকিউরিটি, নারে বাবা পারব না। তারা একবার চঞ্চলকে বলে, একবার আমি, একবার বাবা! শেষ পর্যন্ত সাহস করে একটা পুরাতন ডায়েরি নিয়ে গেলাম। অনুভূতিটা ওটিতে ঢোকার মতো। গিয়ে দেখলাম, ওই অর্থে অনেক অভিনয়শিল্পী নেই। আমরা তিনজন ছাড়া চার-পাঁচজনের বেশি নয়। গানের শিল্পী ছিল, নিউজের কিছু নামকরা ভাইবোন এবং উনার পরিবারের মানুষ। অপেক্ষার অবসান করে তিনি এলেন। সবার সঙ্গে সালাম, কুশলবিনিময় করলেন। আমার তখন টার্গেট একটাই, আমার ছেলেদের জন্য একটা অটোগ্রাফ। সিকিউরিটির অনেকে আমাদের নাটকের খুব ভক্ত, ততক্ষণে জেনেছি। অনুরোধও করেছি ডায়েরিটায় একটা স্বাক্ষর নিয়ে দিতে। সবাই কঠিনভাবে বলেছেন, অসম্ভব ম্যাডাম। চঞ্চল সাহস দিয়ে বললেন, সামনে গিয়ে বল। আমি সাহস করে সামনে যেতেই আকাশ ভেঙে পড়া বিস্ময় আমার জন্য! প্রধানমন্ত্রী আমাকে ডেকে নিলেন! আমার নাটক তার খুব পছন্দের বললেন, ওয়ান ইলেভেনের বন্দি সময়ে তিনি আমাদের অনেক নাটক দেখেছেন, খুব ভালো লাগে! আমার অভিনয় নাকি অভিনয় মনে হয় না, বললেন! প্রশ্ন করলেন, তুমি যে ভাষাটা বল, সেটা বগুড়ার ভাষা না? আমি বললাম, না আপা, পাবনার! তিনি আমার গায়ে হাত বুলিয়ে কথা বলছিলেন। আমি কেবল স্তম্ভিত, হতবিহ্বল। আমি সাহস করে বলে ফেললাম, আপা আমার ছেলে বঙ্গবন্ধুর-আপনার খুব ভক্ত। একটা অটোগ্রাফ চেয়েছে। আপা বললেন, আনলে না কেন! বললাম, বাচ্চা অ্যালাও না কার্ডে লেখা, যদি ঢুকতে না দেয়, তাই। সঙ্গে সঙ্গে বললেন, বাচ্চারা আমার অনেক ভালো লাগার। এমনি দুর্ভাগ্য আমার, সে মুহূর্তে কলমটা খুঁজে পেলাম না! ভয়ে/লজ্জায় থেমে গেলাম। তখন শিক্ষকদের ধর্মঘট চলছিল। তাদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মিটিং ছিল। তিনি চলে গেলেন। আমি চরম আহত। অটোগ্রাফ নিতে পারলাম না। পিঠা খাওয়া আমার মাথায় উঠল। চঞ্চল বললেন, ছোট আপারটা নে। একটা কিছু অন্তত ওদের বলা যাবে।

ছোট আপাকে বললাম, তিনি রাজি হলেন না। খুব আন্তরিকতার সঙ্গে না করলেন। ডায়েরি বগলদাবা করে ডিনারের টেবিলে বসলাম। মনটা অসম্ভব ভারাক্রান্ত। দিব্য/সৌম্য কিচ্ছু চাই না সহজে, তাই মনটা বেশি খারাপ। দুই ঘণ্টা পার হয়ে গেছে। হঠাৎ একজন স্পেশাল সিকিউরিটির লোক এসে বললেন, ম্যাডাম ডাকছেন আপনাকে! আমি দ্রুত গেলাম! তিনি হাসিমুখে আমাকে বললেন, কই তোমাকে আমি খুঁজছি! ছেলের অটোগ্রাফ দেই দাও!

আমি ভয়ে কাঁপা কাঁপা ডায়েরি দিতেই নাম জিজ্ঞাসা করলেন! আমি বললাম, দিব্য/সৌম্য আপা। তিনি বললেন, একসঙ্গে দিলাম কিন্তু! আমি নির্লজ্জের মতো বললাম, আপা তারা যমজ, মারামারি করবে/কাঁদবে! তিনি বললেন, যমজ নাকি! আহা হা, নিয়ে এলেই পারতে, দেখতাম! পুরো সিকিউরিটি ঘিরে দাঁড়িয়ে অবাক বিস্ময়ে দেখছে, প্রধানমন্ত্রী, খুব সাধারণ একজন মায়ের ইচ্ছা পূরণ করছেন! সবাই সেদিন কী ভেবেছিল জানি না, আমার ভাবনাজুড়ে সেদিন আপার বিস্ময় আর রাজ্যজয়ের সুখ। আমার ছেলেদের আমি এক বিস্ময়ভরা প্রধানমন্ত্রী আর তার মায়ের মতোই এক সাধারণ মাকে ডায়েরির পাতায় বন্দি করে নিয়ে গেলাম! যেদিন আপনি/আমি কেউ থাকব না (আপা), প্রধানমন্ত্রীর সেদিন আমার ছেলেদের কাছে এ অটোগ্রাফটা থাকবে। থাকবে একজন মানুষ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতায় থেকেও সবার কাছে শুধু আপা হয়ে থাকার আত্মিক মন্ত্রের কথা। থাকবে আপনার অতিসাধারণ থেকে অসাধারণ সব পথচলার ইতিহাস এবং বাংলাদেশ ভালোবাসার কথা, ঘুমপাড়ানি মুগ্ধকর গল্পের মতো হয়ে! আপনি বেঁচে থাকবেন আপনার কর্মে, আপন মহিমায়! জয়তু শেখ হাসিনা, প্রধানমন্ত্রী, আমাদের প্রিয় আপা।

শাহনাজ খুশি

অভিনেত্রী

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close