তানজিনা হোসেন

  ০৮ জুলাই, ২০২২

এটাও একটা প্রেমের গল্প হতে পারত

আজকের খবর কি? রুবিনার পাশের খালি চেয়ারে বসে আস্তে করে জিজ্ঞেস করল আসলাম।

- একই রকম।

- আজ কত দিন হলো?

- এগারো দিন।

- ও।

- আপনার মা?

- একই রকম। কোনো উন্নতি নেই। অবনতিও নেই।

- আচ্ছা।

তারপর দুজনেই অনেকক্ষণ চুপচাপ। একজন মাঝ বয়সি মহিলা সেই কখন থেকে খুন খুন করে কেঁদেই চলেছেন। বার বার সুতি ওড়নার খুঁট দিয়ে চোখ মুছছেন মহিলা। তার কান্নার শব্দ মেশানো মৃদু বিলাপের সুর কেমন অসহ্য লাগতে থাকে রুবিনার। সে এবার উঠে দাঁড়িয়ে বলে, একটু নিচ থেকে ঘুরে আসি।

- কিছু খাবেন?

- চা খাওয়া যায়।

- তাহলে ক্যান্টিনে চলেন। আমিও চা খাব।

তারা দুজন লিফটে চড়ে ১৪তলায় এলো। ক্যান্টিনে ভিড়। ডাক্তার, রোগীর আত্মীয়স্বজন, হাসপাতালের স্টাফ। টেবিল খালি পাওয়ার জো নেই এই সকালে। কিছুক্ষণ ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে অবশেষে তারা একটা খালি টেবিল জোগাড় করতে পারল। রুবিনা বসল একটা চেয়ারে, অন্য চেয়ারে ব্যাগ রেখে জায়গা দখল করে রাখল, আর আসলাম গেল খাবার অর্ডার দিতে। রুবিনা বসে বসে ভিড়ের মানুষগুলো দেখতে লাগল। কী আশ্চর্য, হাসপাতালে প্রতিদিন এত মানুষ আসে! প্রতিদিন এত মানুষ অসুস্থ হয়, এত লোক মরে কিংবা ভালো হয়ে বাড়ি যায়। দৈনন্দিন জীবনে ব্যস্ত থাকার সময় এই ব্যাপারগুলো নিয়ে কেউ চিন্তাও করে না। মৃত্যু মানুষের কত কাছেই থাকে, ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলে রাখে প্রতি মুহূর্তে, হাসপাতালে না এলে কি আপনজন বা নিজে অসুস্থ না হলে তা টেরই পাই না আমরা। জীবনের বিচিত্র কোলাহল আমাদের সব ভুলিয়ে রাখে আফিমের নেশার মতো। আসলাম একটু পর দুটো কফি আর একটা প্লেটে দুটো ছোট সিঙাড়া নিয়ে এলো। টেবিলের ওপর প্লেট আর কফির কাপসহ ট্রেটা রেখে বলল, আপনার কফি চিনি ছাড়া।

- সিঙাড়া কেন আবার? আমি নাশতা খেয়ে এসেছি।

- আপনি তো কলিজার সিঙাড়া ভালোবাসেন।

রুবিনা ভ্রু কুঁচকে ভাবতে লাগল সে যে কলিজার সিঙাড়া সত্যি ভালোবাসে এই কথা কখনো আসলামকে বলেছে কিনা। এই গত আট দিনের পরিচয়ে, টুকটাক এটা ওটা সাধারণ কথাবার্তার ফাঁকে? আর যদি বলেই থাকে আসলাম কেন সে কথা এত গুরুত্বের সঙ্গে মনে রেখেছে? যেখানে ১৯ বছর সংসার করার পর জাহিদ রুবিনার পছন্দ অপছন্দ ভালো লাগা না লাগার কথা সব বেমালুম ভুলে গেছে। এসব বিষয় তার কাছে আর কোনো গুরুত্ব বহন করে না এখন। রুবিনা একটা নিঃশ্বাস ফেলে ভাবে, কে কবে কত আগে তার পছন্দ অপছন্দের কথা ভেবে কিছু করেছিল!

- কী ভাবছেন এত প্রশ্ন করে আসলাম।

- নাহ কিছু না। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল রুবিনা।

- মন খারাপ লাগছে?

রুবিনা একটুভাবে। সত্যি কি তার মন খারাপ লাগছে? কে জানে, বুঝতে পারে না সে। তবে ভালো যে লাগছে না কিছু এটা বেশ বুঝতে পারে। মনটা খারাপ, হ্যাঁ, খারাপ তো বলতেই হয়। হয়তো হাসপাতালের এই গুমোট বিষণœ পরিবেশটাই মন খারাপ করিয়ে দেওয়া। আসলাম কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলে, ছুটি শেষ হয়ে এলো। অফিস থেকে ফোন করেছিল। কাল জয়েন করব।

- তাহলে?

- মা একাই থাকবে। কত দিন এভাবে থাকবে তার তো কোনো ঠিক নেই। অফিস কত দিন অপেক্ষা করবে?

অপেক্ষা! শব্দটা কেন যেন কানে লাগল রুবিনার। কিসের অপেক্ষা? মৃত্যুর? এই যে মানুষগুলো আইসিইউর শীতল নিস্তব্ধ ঘরে এক গাদা নল আর যন্ত্রপাতির মধ্যে শুয়ে আছে, বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই আর, তারা না মারা গেছে না বেঁচে আছে, তাদের ব্যথা-যন্ত্রণা-আনন্দণ্ডবেদনার অনুভূতি আছে কি নেই কেউ জানে না, তারাও কি বাইরের মানুষদের মতো নিজেদের মৃত্যুর জন্য নীরবে অপেক্ষা করে চলে? তাদেরও কি সময় কাটতে চায় না, ঘড়ির কাঁটা ধীর মনে হয়; তারাও কি প্রতিটা নতুন সকালে এই আধো চেতনার মাঝেই ভাবে পৃথিবীতে আরো একটি ভোর হলো, আরো একটি দিন আয়ু বাড়ল? বাড়ল অপেক্ষার মুহূর্ত? রুবিনা মনে মনে হাসল। আইসিইউর ভেতর দিন-রাতের কোনো হিসাব নেই। সব সময়ই প্রখর সাদা আলো জ¦লছে, যন্ত্রের ভোঁতা আওয়াজ একটানা বেজে চলেছে, মানুষগুলোর মাথার কাছে মনিটরে বয়ে চলেছে আঁকাবাঁকা রেখা আর নানা রকমের সংখ্যা। কখনো কোনো একজন জীবন মৃত্যুর মাঝের রেখাটি আলতো পায়ে পেরিয়ে গেলে অমনি হঠাৎ হই চই শুরু হয় ডাক্তার নার্স সবাই মিলে ছোটাছুটি শুরু করে দেয়, তারপর একে একে খুলে নেওয়া হয় সব যন্ত্রপাতি। বাইরে তখন কান্নার রোল পড়ে যায়, ভিড় জমাতে শুরু করে দূরের আত্মীয়স্বজনও যাদের এত দিন দেখা যায়নি। এরই মাঝে মাতব্বর গোছের লোকজন লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স, কাফনের কাপড়, লাশ ধোয়ানোর হুজুর ও আনুষঙ্গিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা দ্রুত সেরে নিতে তৎপর হয়ে ওঠে। পৃথিবীর সঙ্গে হিসেব চুকে গেলে সেই মানুষটিকে যত দ্রুত সম্ভব মাটিচাপা দিয়ে চোখের আড়াল করবার জন্য কারো চেষ্টার ত্রুটি থাকে না। মৃত্যু ব্যাপারটা অসহনীয় ও বিব্রতকর, এই অসহনীয় নাটকের যত তাড়াতাড়ি যবনিকাপাত করা যায় ততই স্বস্তি।

তারা দুজনে নীরবে খাওয়া সারল। তারপর আসলাম বলল, চলুন উঠি। একটু পরই ভিজিটিং টাইম।

ভিজিটিং টাইম? হাসি পেল রুবিনার। যাকে ভিজিট করা সে তো আর চোখ মেলে তাকায় না। কথা বলে না, হাসে না। তবু তাকে ভিজিট করতে হয় বা দেখতে যেতে হয়। বেডের পাশে অসহায়ের মতো কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে আসতে হয় সবাইকে। বাইরে একটা ছোট কাচের ঘরে প্রতিদিন রোগীর সর্বশেষ অবস্থার খুঁটিনাটি কাউন্সিলিং করেন একজন ডাক্তার। সেই একই রুটিন কথাবার্তা, কোনো নতুনত্ব নেই তাতে। কোনো আশা নেই, কোনো নিরাশাও নেই। কিন্তু আজ পাতলা ওয়ান টাইম গাউন আর মুখে মাস্ক পরে সেই শীতল নিস্তব্ধ ঘরে প্রবেশ করে একটু চমকে গেল রুবিনা। জাহিদের পাশের বেডে পর্দার ওপাশে নিথর দাঁড়িয়ে আছেন সেই বিলাপরত মহিলাটি। এখন তিনি আর কাঁদছেন না। কেবল নীল চাদর একটুখানি সরিয়ে দুটো ছোট ফর্সা পায়ের ওপর পরম মমতায় হাত বুলিয়ে চলেছেন। বুকটা কেমন করে উঠল রুবিনার। বেডে নিথর শুয়ে থাকা কিশোরী মেয়েটি মুনমুনের চেয়ে একটু ছোট হবে। মুনমুনকে আজ একটা ফোন করা দরকার।

বাইরে রাখা বিনে ওয়ান টাইম গাউন আর মাস্ক ছুঁড়ে ফেলে আবার স্টিলের চেয়ারে এসে বসে রুবিনা। আসলাম এলো একটু পর। পাশে বসে জিজ্ঞেস করল কী খবর?

- একই রকম। আপনার মা?

- আজ নাকি একটু বেশি খারাপ। ডাক্তার বললেন আর কয়েক ঘণ্টা দেখবেন। খুব এ ফোর্ট দেবেন না আর। আর যদি চাই তবে ভেন্টিলেটর খুলে নিয়ে যেতে পারি।

- পরিবারের অন্যদের কি মত?

- কারো কোনো মত নেই। বড় ভাই আমেরিকায়। ছোট বোন অস্ট্রেলিয়ায়। বলেছে আমি যা ভালো বুঝি তাই যেন করি। কেবল শেষ সময়ে যেন জানাই, যাতে তারা আসতে পারে।

- জানিয়ে দিন তাহলে।

- কি দরকার? এত দিন যখন আসেনি, এখন আর এসে কী হবে? বাকি ঝামেলা আমি একাই সামলে নিতে পারব।

‘অপেক্ষা’র মতো ‘ ঝামেলা’ শব্দটাও একটু কানে লাগল রুবিনার। তবে তার চেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার, রুবিনার হঠাৎ মনে হলো যে আসলামের মায়ের আজই কিছু হয়ে গেলে কাল থেকে তাদের আর দেখা হবে না! কথাটা ভেবে অপরাধবোধ হতে থাকল ওর। কী সব ভাবছে সে এই মুহূর্তে! জীবনের কত বিচিত্র মুহূর্তে যে কত মানুষের সঙ্গে বিচিত্র সব সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়!

- আপনার মেয়েকে খবর দিয়েছেন? আসলাম প্রসঙ্গ পালটায়।

- হুম। ওর কাগজপত্র এখনো হয় নিতো। দেশে আসতে একটু ঝামেলা। তারপরও চেষ্টা করছে।

- আসবে?

- পরশু কাতার এয়ারওয়েজে বুকিং দিয়েছে।

- ও এলে আপনি একটু রেস্ট পাবেন।

- রেস্ট? রেস্টেই তো আছি। দিনের বেশির ভাগ সময় এখানে বসে থাকি। কত কিছু দেখি। কোনো কাজ নেই তো আমার।

- তা অবশ্য ঠিক বলেছেন। হাসপাতাল একটা মজার জায়গা। কত রকমের মানুষ। কত রকমের কান্না। কত রকমের দুঃখ শোক। আচ্ছা, বাড়িতে থাকলে কী করতেন?

- রেস্টই নিতামণ্ড রুবিনা হাসল এবার- কোনো কাজ নেই বাড়িতেও। ওই বসে থাকাই। দিনমান বসে থাকা।

- বন্ধুবান্ধব নেই?

- নাহ। ছিল, যোগাযোগ নেই।

- ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিল?

আসলামের প্রশ্ন শুনে বড় বড় চোখে তাকাল রুবিনা। একজন প্রায় অচেনা লোকের মুখে এই প্রশ্ন শুনে কি তার রেগে যাওয়া উচিত? এটা অভদ্রতা নয় কি? কিন্তু রুবিনার খারাপ লাগছে না। বরং বুকটা কেন যেন হু হু করছে। চোখ ভরে পানি আসছে। কান্না চাপার চেষ্টা করছে সে। আসলাম বিব্রত হয় সরি।

রুবিনা নিজেকে সামলে নিয়ে বলে, ‘না ঠিক আছে।’ তারপর গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। সে কত দিন আগের কথা, জাহিদ বলত, তুমি আমার সিন্ডারেলা। এক পাটি জুতো হাতে অনেক কষ্টে খুঁজে পেয়েছি তোমাকে, কখনো আর হারাতে দেব না। আহা, সে কতকাল আগের কথা। এখন সম্পর্কটা সুতোর মতো ঝুলে আছে। যে যার মতো। কারো কোনো অভিযোগ নেই। মনোমালিন্য নেই। রুটিন মাফিক কথা বলা, চা খাওয়া, এক সঙ্গে সেজেগুজে নেমন্তন্ন খেতে যাওয়া কিংবা ফিরে এসে কাকে কেমন লেগেছে তা নিয়ে টুকটুাক কথাবার্তা সেরে মুখে ক্রিম ঘষে শুয়ে পড়া। রুবিনার সেই এক পাটি জুতো কোথায় কবে হারিয়ে গেছে জাহিদ আর তা কখনো খুঁজতে যায়নি।

- তাহলে এরপর কী করবেন? -আসলাম কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবার প্রশ্ন করে।

- এরপর মানে? -রুবিনা আবার অবাক চোখে তাকায়। কী আশ্চর্য! এ রকম পরিস্থিতিতে, এ রকম পরিবেশে, যেখানে লোকটার নিজের জন্মদাত্রী মা কিডনিসহ নানা জটিলতায় মৃত্যুশয্যায়, যাকে কিনা ডাক্তাররা যেকোনো মুহূর্তে যন্ত্র খুলে কবরে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সে জিজ্ঞেস করছে এর পর রুবিনা কী করবে? মানে প্যানক্রিয়াস ক্যানসারের টারমিনাল স্টেজে মৃত্যুপথযাত্রী তার স্বামী জাহিদের মৃত্যুর পর সে কী করবে বলে পরিকল্পনা করে রেখেছে? লোকটার সাহস তো কম নয়। অসভ্যতারও সীমা নেই দেখছি। রুবিনার মুখ শক্ত হয়ে আসে। আর ঠিক এই সময় কাচের দরজার পাস থেকে গার্ডটি আসলামের দিকে চেয়ে ডাক দেয় বেড সিক্সের রাশিদা বেগম, আপনার মা না? স্যাররা ভেতরে আপনাকে ডাকছেন।

আসলাম একটা নিঃশ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়ায়। সময় হয়েছে বোধ হয়। ভালোই হয়েছে। মা কষ্ট পাচ্ছিলেন খুব। আর আসলামও অপেক্ষা করতে করতে আর কদিন পর বোধ হয় ধৈর্য হারিয়ে ফেলত। মা তাকে বিরক্ত হওয়ার সুযোগ দিতে চাচ্ছেন না। যাক, ভালোই হলো। আর অফিস কামাই দিতে হবে না। রুবিনার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বিদায় নিয়ে আসলাম - আসি তাহলে। ভালো থাকবেন।

রুবিনা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বসে রইল কিছুক্ষণ। ওপাশে কিশোরী মেয়েটির মা এখন আবার বিলাপ করে কান্না শুরু করেছেন। তার কলেজপড়ুয়া মেয়েটি মায়ের সঙ্গে রাগ করে অনেক ঘুমের ওষুধ খেয়ে ফেলেছিল। সারাটা দিন হতভাগ্য মা সেই ঘটনা মনে করে আফসোস করে চলেছেন। কেন তিনি সেদিন মেয়েকে ওভাবে বলতে গেলেন। কেন তিনি মেয়ের মনটা বুঝতে পারেননি। কেন একটা সামান্য ঘটনা তার জীবনটাকে এভাবে তছনছ করে দিল। ভদ্র মহিলার বিলাপ আর কান্নার ধ্বনি শুনতে শুনতে রুবিনার কী যে হয়, সে উঠে দাঁড়ায়। জীবন্মৃত হয়ে বেঁচে থেকে কী লাভ? কী হবে জীবন ভর আফসোস সঙ্গে নিয়ে বেঁচে? এই ঠুনকো জীবন, যে অপাংক্তেয় জীবনের দেখা পেয়েছে সে এই গত ১১ দিনে, শীতল আর স্পন্দনহীন এই জীবন, যে জীবনের খানিকটা দূরে আপনজনরা নীরবে অপেক্ষা করে চলে মৃত্যুর, কঠোর শুষ্ক ক্রন্দনহীন প্রেমহীন সেই অপেক্ষা, সে রকম একটা জীবনের কথা ভেবে বিচলিত হয়ে ওঠে সে। সে দ্রুত উঠে আসলামের পিছু নেয়, প্রায় দৌড়ে গিয়ে কাঁচের দরজার সামনে পৌঁছে যায় সে। কিন্তু দরজায় দাঁড়ানো গার্ড থামিয়ে দেয় তাকে। পর মুহূর্তেই সাদা চাদরে ঢাকা একটা ডেডবডিসহ ট্রলি নিয়ে ওয়ার্ডবয়রা বেরিয়ে আসে দরজা দিয়ে, পেছন পেছন নতমুখে হেঁটে এসে আসলাম, রুবিনার দিকে চোখ পড়ে না তার এখন। দরজার সামনে পর মুহূর্তেই একটা অকারণ ভিড় জমে যায়। অন্যান্য রোগীদের স্বজনরা ভীত চিন্তিত মুখে ভিড় জমায় কাচের দরজার সামনে। কেউ কেউ অকারণেই কেঁদে ওঠে। কেউ কেউ সমবেদনায় আহা উহু করতে থাকে। কেউ আবার ‘আহা সরো সরো’ বলে ডেডবডির পথ পরিষ্কার করে দিতে চেষ্টা করে। রুবিনা এই ডামাডোলে আসলামের কাছ অবধি আর পৌঁছাতে পারে না। ডেডবডি ওঠানোর বিশেষ লিফটে ট্রলির পাশে পাশে আসলাম উঠে পড়লে ধীরে এক সময় রুবিনার চোখের সামনেই বন্ধ হয়ে যায় লিফটের দরজা। ওপরে জ্বলজ্বল করতে থাকা সংখ্যাটি ৫, ৪, ৩, ২, ১ হয়ে নেমে যায় পাতালে। তারপর স্থির হয়ে যায় চিরতরে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close