মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ূবী

  ০৯ এপ্রিল, ২০২৪

মুক্তমত

রমজানের শিক্ষা জীবন জুড়ে থাকুক

আর মাত্র এক দিন পর বরকতের মাস বিদায় নেবে। দীর্ঘদিনের সিয়াম সাধনায় ক্লিষ্ট শরীর নিয়ে মুমিন বান্দারা যখন মহান প্রভুর কাছে আখিরাতের কল্যাণ প্রার্থনা করবেন, তখন তিনি তাদের প্রতি অনুকম্পার দৃষ্টিতে তাকাবেন। আর তাদের জন্য বরাদ্দ করবেন জান্নাতের নেয়ামতরাজি। আল্লাহতায়ালার হুকুম পালন করতে গিয়ে মুমিনের যে দৈহিক দুর্বলতা সৃষ্টি হয়, তা তাকে আখিরাতমুখী করে তোলে।

মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের ঘ্রাণের চেয়ে প্রিয়। তিনি আরো ইরশাদ করেন, শহীদের রক্ত থেকে কিয়ামতের ময়দানে ঘ্রাণ ছড়াবে এবং আরাফাতের ময়দানে হাজিদের ধূলি-মলিন চেহারা ও এলোমেলো চুল দেখে আল্লাহতায়ালা তাদের নিয়ে গর্ব করবেন। দয়াময় প্রভুর হুকুম পালনের দৈহিক ছাপও আল্লাহর পছন্দ। তাই সারা দিন পানাহার বর্জনের ফলে শরীরে যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, তা আল্লাহর দয়া উদ্রেক করে।

রমজান মাস যখন শেষ হয়ে আসে, তখন দৈহিক দুর্বলতা বাড়তে থাকে। এভাবে ইন্দ্রিয়ের তাড়না ও প্রাবল্য নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কারণে তার মধ্যে বিনয়, নম্রতা, শিষ্টাচার ও নিরহংকারের মতো গুণাবলির উন্মেষ ঘটবে বলে আশা করা যায়। তার মধ্যে আখিরাতের চিন্তা জোরদার হয়।

আম্বিয়ায়ে কেরাম মানুষকে এ ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছেন। কিন্তু মানুষের সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্য তাকে দুনিয়ার কাজে মশগুল রাখে। তবুও সব সময় না হলেও মাঝেমধ্যে কিছু সময়ের জন্য আখিরাতের চিন্তায় মশগুল হতে হবে। আধ্যাত্মিক সাধকরা তাদের শিষ্যদের এ অনুশীলন করান। তাদের ভাষায় এটাকে বলা হয় মোরাকাবা।

এ প্রসঙ্গে সাহাবায়ে কেরামের একটি ঘটনা উল্লেখযোগ্য। এক দিন হজরত হানজালা (রা.) চিন্তা করলেন, আমরা যখন আল্লাহর রাসুলের দরবারে থাকি এবং তিনি আমাদের সামনে জান্নাত ও জাহান্নামের আলোচনা করেন, তখন আমরা যেন তা চাক্ষুষ দেখতে পাই, কিন্তু যখন তার দরবার থেকে উঠে আসি এবং পরিবার ও সম্পদের সংস্পর্শে আসি তখন অনেক কিছুই ভুলে যাই।

নিশ্চয়ই এটা ইমানের আলামত নয়, বরং মুনাফেকির আলামত। তিনি ভয় পেয়ে গেলেন এবং আল্লাহর রাসুলের কাছে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হলেন। পথে দেখা হলো হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)-এর সঙ্গে। চোখে-মুখে অস্বাভাবিকতার ছাপ দেখে হজরত আবু বকর (রা.) কারণ জিজ্ঞেস করলেন।

হজরত হানজালা (রা.) জানালেন, তিনি মুনাফেক হয়ে গেছেন। হজরত আবু বকর (রা.) আশ্চর্য হলেন। হজরত হানজালা (রা.) তখন নিজের মনোভাবটি বললেন। হজরত আবু বকর বললেন, একই অবস্থা তো আমারও। এই বলে তারা উভয়ে আল্লাহর রাসুলের দরবারে উপস্থিত হলেন এবং নিজেদের বৃত্তান্ত খুলে বললেন।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করলেন, আমার কাছে থাকার সময় তোমাদের যে মনোভাব হয়, তা যদি সব সময় থাকত, তাহলে তোমাদের পথচলার সময় এবং বিছানায় অবস্থানের সময়ে ফেরেশতারা তোমাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করত। তবে তোমরা মাঝে মাঝে (আমার কাছে এলে যে মনোভাব হয়) এই মনোভাব সৃষ্টির চেষ্টা করবে। (মুসলিম শরিফ)

মোটকথা, দীর্ঘ একটি মাস সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ক্ষুধা, পিপাসা ও প্রবৃত্তির চাহিদা দমনের যে সুফল অর্জিত হয়েছে এবং আল্লাহতায়ালার নির্দেশের সামনে আপন সত্তাকে বিলীন করে দেওয়ার যে শিক্ষা লালন করা হয়েছে, তা সজীব রাখতে হবে সারা বছর। মাহে রমজানে যেসব সদভ্যাস গড়ে উঠেছে, যেসব নেক কাজ পালন করা হয়েছে, বিশেষভাবে নফল ইবাদতের প্রতি মনোযোগ দেওয়া হয়েছে, রমজানের পরও সেগুলো অব্যাহত রাখতে পারা বড়ই সৌভাগ্যের বিষয়।

তাকওয়া, তাওয়াক্কুল ও খোদাপ্রেমের দীক্ষা রমজানের বহুল আলোচিত বিষয় হলেও এগুলোর সম্পর্ক শুধু এ মাসের সঙ্গে নয়, সারা জীবন এসব মহৎ গুণ চর্চা করা সৌভাগ্যের চাবিকাঠি। সিয়াম সাধনার মাস অতিক্রান্ত হলেও সিয়ামের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ও শিক্ষা বছরের সব কটি মাসে অনুসরণ করতে হবে।

লেখক : খতিব, গাউসুল আজম জামে মসজিদ, সেক্টর-১৩, উত্তরা, ঢাকা

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close