খন্দকার আপন হোসাইন

  ২৩ মার্চ, ২০২৪

বিশ্লেষণ

জলদস্যুদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধির নেপথ্যে

মহাবিশ্বে বালুকণার চেয়েও অনেক বেশি গ্রহ-নক্ষত্র রয়েছে। ২০২২ সালের ১৫ ডিসেম্বর যুক্তরাজ্যভিত্তিক নেচার অ্যাস্ট্রোনমি জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির বাইরে পানিসমৃদ্ধ দুটি গ্রহ সম্পর্কে জানা যায়। গ্রহ দুটির নাম কেপলার ১৩৮-সি ও কেপলার ১৩৮-ডি। পৃথিবী থেকে ২১৮ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এ গ্রহ দুটিতে পৃথিবীর তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি পানি বরফ অথবা বাষ্পাকারে রয়েছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত জলরাশিবেষ্টিত একমাত্র গ্রহ হচ্ছে পৃথিবী। পৃথিবীর মোট আয়তনের ২৮ দশমিক ৬ ভাগ স্থল হলেও বাকি ৭১ দশমিক ৪ ভাগ জল। পাঁচটি বিস্তীর্ণ জলরাশিসমৃদ্ধ পৃথিবীতে উপসাগর, নদী, হ্রদ, খাল, বিলের অভাব নেই। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে সাগরে বিশাল বিশাল জলযান চলাচল করে।

প্রাচীন বিশ্বের প্রথম জলযান প্রায় ১০ হাজার বছর আগে চলেছে বলে জানা যায়। তুরস্কের উপকূলে ব্রোঞ্জ যুগের উলুবুরুন জাহাজের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়। এর মধ্যে আবিষ্কৃত সবচেয়ে প্রাচীন সামুদ্রিক নৌকাটি ১৩০০ খ্রিস্ট-পূর্বাব্দের বলে ধারণা করা হয়। ১২০০ খ্রিস্ট-পূর্বাব্দে ফিনিশিয়ানরা সমুদ্রের ঢেউয়ের সঙ্গে তাল মেলাতে বৃহৎ বণিক জাহাজ নির্মাণ করেছিল। নূহ (আ.) নির্মিত নৌকাটি পৃথিবীর প্রাণিকুলকে রক্ষা করেছিল। অথচ শতসহস্র নৌযান মাঝেমধ্যেই সমুদ্রের তালমাতাল উত্তাল তরঙ্গে ধরাশায়ী হয়। আক্রমণের শিকার হয় সাগরজলের নানা প্রাণীর কাছে। ১৭৫২ সালে লেখক বিশপ এরিক পন্টোপিডান ‘নরওয়ের প্রাকৃতিক ইতিহাসের উপকথা’ নামক একটি বই প্রকাশ করেন। বইটিতে তিনি সমুদ্রের জলদানব হিসেবে ‘ক্র্যাকেন’র বর্ণনা দিয়েছেন।

প্রচলিত গল্পানুসারে পৃথিবীতে অদ্যাবধি যত জলদানবের উপকথা সৃষ্টি হয়েছে তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ ভয়ংকর প্রাণী হচ্ছে ক্র্যাকেন। বৃহদাকার এই ক্র্যাকেন তার কালো শুঁড় নিয়ে জাহাজের তলদেশেই ওত পেতে থাকে। জাহাজের নাবিক, মাঝি, মাল্লারা কিছু বুঝে ওঠার আগেই এই বিশালদেহী ক্র্যাকেন জাহাজ ডুবিয়ে দেয়। সম্রাট প্রথম কন্সট্যান্টাইনের বাইজেন্টাইন শাসনের সময় কনস্টান্টিনোপলের বাসিন্দাদের একটি আতঙ্কের নাম ছিল বসফরাস প্রণালি। গায়ের রক্ত হিম করে দেওয়া ওই প্রণালির পানিতে ঘুরে বেড়াত অদ্ভুত ভয়ংকর এক জলদানব। ষষ্ঠ শতকের বাইজেন্টাইন ইতিহাসবিদ প্রকোপিয়াসের লেখা ‘হিস্টোরি অব দ্য ওয়ার্স অ্যান্ড দ্য সিক্রেট হিস্টোরি’ গ্রন্থে এই জলদানবটির বর্ণনা উঠে এসেছে। জলদানবটি ছিল পরফিরিওস নামক বিশালাকৃতির একটি তিমি। জলপথে কনস্টান্টিনোপোলে আসা-যাওয়ার সময় জাহাজের নাবিকরা প্রতিনিয়ত জলদানব পরফিরিওসের হামলার শিকার হতো।

অন্যদিকে স্কটল্যান্ডের ইনভার্নেসের লকনেস হ্রদের কাল্পনিক জলদানব ‘নেসি’র ভয়ে ওই হ্রদে অনেক নাবিকই জাহাজ চালাতে অস্বস্তি বোধ করেছে। তার পরও কাল্পনিক কিংবা বাস্তব কোনো জলদানবই নাবিকদের সমুদ্র ভ্রমণ থামাতে পারেনি। জলযান সৃষ্টির আদি লগ্ন থেকেই নাবিকরা জলদানবের চেয়ে জলদস্যুদের বেশি ভয় করেছে। জলদানবরা মহাসাগরে প্রলয়ংকর তরঙ্গ সৃষ্টির মাধ্যমে তাণ্ডবলীলা করলেও তাদের মধ্যে নিষ্ঠুরতা, নির্মমতা, নৃশংসতা অনুপস্থিত। পক্ষান্তরে জলদস্যুদের বাহারি অস্ত্রের দাপটে একের পর এক জাহাজ ছিনতাই, জাহাজের মালামাল ডাকাতি, নাবিকদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ের মতো ঘটনার কাছে সমুদ্রের জলদানবদের তরঙ্গসৃষ্টি নিতান্তই জলকেলি। জলসীমায় জলদস্যুদের কুকর্মকে জলদস্যুতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জলদস্যুতা বলতে সাধারণত সমুদ্রে সংঘটিত ডাকাতি বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডকে বোঝায়।

মূলত আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে নির্দিষ্ট একটি অপরাধের নাম হচ্ছে জলদস্যুতা। জলদস্যুতার ইতিহাস প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছরেরও পুরোনো। প্রাচীন মিসরের ১৮তম রাজবংশের নবম ফেরাউন তৃতীয় আমেনহোতেপের (১৩৯১-১৩৫৩ খ্রিস্টপূর্ব) শাসনামলের এক দুষ্প্রাপ্য নথিতে জলদস্যুদের কথা উল্লেখ ছিল। পূর্ব আফ্রিকা উপকূলে যাত্রীবাহী জাহাজে জলদস্যুদের হামলার ঘটনা সেই নথি থেকে জানা যায়। নথিটির সম্ভাব্য সময়কাল ১৩৫৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব এবারডিনের এক গবেষণা থেকে জানা যায়, ১৬৫০ থেকে ১৭২০ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সাত দশক ছিল জলদস্যুদের স্বর্ণযুগ। ২০১০ সালে স্টিফেন টাল্টি ও ক্যাপ্টেন রিচার্ড ফিলিপসের লেখা একটি বই প্রকাশিত হয়। বইটির নাম ‘A Captain’s Duty: Somali Pirates, Navy Seals, and Dangerous Days at Sea’. বইটি ২০০৯ সালের ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যু আব্দুওয়ালি মুসার নেতৃত্বে মাস্ক আলাবামা জাহাজটি ছিনতাইয়ের সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা হয়েছিল।

অবশ্য ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালে ক্যাপ্টেন ফিলিপস নামে একটি আমেরিকান থ্রিলার মুভি নির্মিত হয়। মূল ঘটনা হলো জলদস্যুরা ছোট দুটি স্পিডবোট নিয়ে এমভি মাস্ক আলাবামা জাহাজটি আক্রমণ করে। জাহাজটি আটক করে নিজেদের আয়ত্তে নিলেও জলদস্যুরা পুরোপুরি এর নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি। একপর্যায়ে তারা ক্যাপ্টেন ফিলিপসকে বন্দি করে মুক্তিপণ দাবি করে। অনেকটা একই রকমভাবে গত ১২ মার্চ ২০২৪-এ সোমালীয় জলদস্যুরা বেশ কিছু ছোট ছোট স্পিডবোট নিয়ে আচমকা বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহতে উঠে পড়ে। ভারত মহাসাগরের সোমালিয়ান উপকূল থেকে ৫৫০ নটিক্যাল মাইল দূর থেকে এসে জিম্মি করে নেয় জাহাজটি। দ্রুততার সঙ্গে ক্যাপ্টেনসহ ২৩ ক্রুকে গান পয়েন্টে নিয়ে জিম্মি করে ফেলে এবং জাহাজটি নিজেদের সুরক্ষিত জলসীমায় নিয়ে যায়। সোমালীয় জলদস্যুদের দ্বারা বাংলাদেশের

জাহাজ জিম্মির এ ঘটনা এবারই নতুন নয়। এর আগে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর ভারত মহাসাগরের লাক্ষাদ্বীপ থেকে মাত্র ৩০০ নটিক্যাল মাইল দূরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে

পড়ে জিম্মি হয়েছিল বাংলাদেশি মালিকানাধীন জাহাজ এমভি জাহান মনি।

দারিদ্র্য, অরাজকতা, আইনের শাসনের অভাবের পাশাপাশি গৃহযুদ্ধের ফলে সৃষ্ট অস্থিতিশীলতা, সহিংসতার বিরূপ প্রভাবই সাধারণ সোমালিয়ানদের জলদস্যুতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে বাধ্য করেছে। ১৯৯৫ সাল থেকে সোমালীয় জলদস্যুদের প্রত্যক্ষ বিচরণ শুরু হয়। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এদের অপতৎপরতা বাড়তেই থাকে। লোহিত সাগর, আরব সাগর, ভারত মহাসাগরের নীল জলরাশির সমুদ্রে সোমালীয় জলদস্যুদের অবাধ কর্তৃত্ব। এক গবেষণায় দেখা গেছে, জলদস্যুরা জিম্মি করা জাহাজের মাধ্যমে ছয় ধরনের সুবিধা নিয়ে থাকে। এ সুবিধাগুলো হলো ক. মূল্যবান মালামাল লুটপাট, খ. মুক্তিপণ আদায়, গ. অস্ত্র ও মাদক পরিবহন, ঘ. সামরিক ও রাজনৈতিক দাবি আদায়ের চেষ্টা, ঙ. রাজবন্দিদের মুক্তি, চ. জাহাজটি ব্যবহার করে সমুদ্রের অন্যান্য জাহাজে হামলা। সোমালিয়া উপকূলে জলদস্যুতার সূত্রপাত হয়েছিল মূলত অবৈধভাবে মাছ ধরাকে কেন্দ্র করে। ডিআইডব্লিউ এবং মার্কিন হাউস আর্মড সার্ভিসেস কমিটির গবেষণা থেকে জানা যায়, বিদেশি অনেক জাহাজ অযথাই সোমালীয় জলের মধ্যে বিষাক্ত বর্জ্য ডাম্পিং করত। ফলে সেখানকার পানি দূষিত হয়ে যাচ্ছিল। মাছ মরে ভেসে উঠত। স্থানীয়দের পরিবেশ বসবাসের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছিল। এর প্রতিবাদে স্থানীয় জেলেরা সশস্ত্র দলে বিভক্ত হয়ে বিদেশি জাহাজ এ অঞ্চলে প্রবেশ বন্ধ করার চেষ্টা করে।

পরে বিকল্প আয় হিসেবে তারা মুক্তিপণ আদায়ের উদ্দেশ্যে বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ ছিনতাই করা শুরু করে। বিশ্ব জনমনে সোমালিয়ার জলদস্যুদের প্রতি তীব্র ঘৃণা সঞ্চিত থাকলেও নিজ দেশের জনসাধারণের কাছে তারা জাতীয় বীর। কারণ সোমালিয়ার জলদস্যুরা সমগ্র বিশ্বের আতঙ্ক হলেও জিম্মি করা জাহাজের বিনিময়ে প্রাপ্ত মুক্তিপণের টাকা সোমালিয়াতেই খরচ হয়। ১৯৬০ সালে ইতালিয়ান ঔপনিবেশিক নিয়ন্ত্রণ থেকে জন্ম নেওয়া সোমালিয়ার বার্ষিক জিডিপি ও গড় মাথাপিছু আয় নির্ধারণে জলদস্যুদের অপকর্মের টাকা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সোমালীয় অর্থনীতির চালিকাশক্তি জলদস্যুতা। সুতরাং জলদস্যুদের যাবতীয় কর্মকাণ্ডে সোমালীয় সরকারের পরোক্ষ সমর্থন আছে এ কথা সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়। জলদস্যুদলে নিযুক্ত হতে সোমালিয়ার তরুণ, যুবকরা অতি আগ্রহী এ রকম তথ্যও পাওয়া যায়।

উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, ২০০৫ সালে সোমালিয়ার নিকটবর্তী সমুদ্র অঞ্চলে ১৬৭টি জাহাজ জলদস্যুদের আক্রমণের শিকার হয়েছে। ২০০৬ সালে ১৫৬টি, ২০০৭ সালে ১৪৯টি, ২০০৮ সালে ১৪১টি, ২০০৯ সালের প্রথম ৬ মাসেই ১৩৫টি, ২০১০ সালে ১৮৯টি, ২০১১ সালে ২১২টি জাহাজ সোমালীয় জলদস্যুদের কাছে অসাহায়ত্ব বরণ করেছে। ২০১৩ সালে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জলদস্যুতার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে বছরে প্রায় ১৮ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়। মেরিটাইম সিকিউরিটি ফার্ম ড্রায়ার্ড গ্লোবালের তথ্যানুযায়ী, হর্ন অব আফ্রিকা উপকূল থেকে ভারত উপকূল পর্যন্ত শিপিং অঞ্চলটিতে ২৫টি দেশের নৌবাহিনী সক্রিয় করা হয়েছে। ১৯৮২ সালে জলদস্যুতা দমনে জাতিসংঘ ১০১ ও ১০২ নম্বর আর্টিকেল অনুমোদন করে। সমুদ্রে জলদস্যুতা এবং সশস্ত্র ডাকাতি দমনে প্রয়োজনীয় পদ্ধতি ব্যবহার করে ইউএস নেতৃত্বাধীন টাস্কফোর্স ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের যৌথ নৌ-অপারেশন আটলান্টার পর জলদস্যুতা ১৩ শতাংশের নিচে চলে আসে। ২০১৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জলদস্যুর হামলা কম হলেও ইদানীং আবার জলদস্যুতা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। জলদস্যুতা চিরতরে বন্ধ করতে হলে সর্বাগ্রে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্যসহ বিশ্বের সবচেয়ে সক্ষম নৌবাহিনীর দ্বারা সমন্বয় করে জলদস্যুবিরোধী বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করতে হবে। ব্যয়বহুল আত্মসুরক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে।

জলদস্যুদের বিচার ও কারাদণ্ড প্রদানে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। জলদস্যুদের নামপরিচয় সংগ্রহ করে শাস্তির আওতায় আনতে সোমালিয়া সরকারকে চাপ দিতে হবে। আঞ্চলিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে জলদস্যুদের বন্দি করতে হবে। এ ছাড়া সমুদ্রে চলাচলকারী জাহাজের সুরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। সব জাহাজেই কাঁটাতারযুক্ত প্রতিবন্ধক স্থাপন করতে হবে। জাহাজে গরম পানির জলকামান প্রস্তুত রাখতে হবে। প্রতিটি জাহাজে

সক্রিয় সাউন্ড গ্রেনেডের সরবরাহ বাড়াতে হবে। জলদস্যুদের স্পিডবোট থেকে জাহাজে ওঠা যায় এ রকম সব অংশে পিচ্ছিল করার ফোম থাকতে হবে। আত্মরক্ষার জন্য জাহাজের ক্রুদের সামরিক প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে। সর্বোপরি সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এতে করে জলদস্যুতা পুরোপুরি বন্ধ করা না গেলেও জলদস্যুদের অতর্কিত হামলা অবশ্যই বহুলাংশে হ্রাস পাবে।

লেখক : গবেষক ও সংগঠক

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close