মিথিলা ফারজানা

  ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

মুক্তমত

কোমলপানীয় পানে সংকুচিত হচ্ছে মস্তিষ্ক

কোমলপানীয় কিংবা সফট ড্রিংকস, যা আমরা অনায়েসেই পান করে থাকি। দেখা যায়, প্রচণ্ড গরমে সবচেয়ে বেশি পান করা হয় কোমলপানীয়। কিন্তু আপনি কি জানেন এ কোমলপানীয় আপনার ব্রেইন সেল কিল করতে পারে? আপনার মেমোরি লসের কারণ হতে পারে? হ্যাঁ, কোমলপানীয় আমাদের ব্রেইন সেলগুলোকে আস্তে আস্তে ধ্বংস করে দেয় এবং ব্রেইনকে সংকুচিত করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিত্তে বলা হয়েছে- শারীরিক কঠোর পরিশ্রমের পর কোমলপানীয় পান করলে ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের অভাব ঘটতে পারে। অধিকাংশ কোমলপানীয় ফসফরাস, ক্যালসিয়াম এবং হাড়ের ক্ষতিকে দ্রুত করে দেয়। কোমলপানীয়তে এসপারটেম, এসিসালফেম ও স্যাকারিন ব্যবহার করা হয়। এগুলো স্মৃতিবিনষ্ট, মৃগীর খিঁচুনি, বমিভাব, ডায়রিয়া, অস্পষ্ট দৃষ্টি, ব্রেইন ক্যানসার, মূত্রাশয়ের ক্যানসার সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। এসব গ্রহণে লিভার সিরোসিসের মতো জটিল রোগ হতে পারে।

দুই বছর আগে ইন্টারনেটে ভাইরাল হওয়া একটা ভিডিও অনেকেই দেখে থাকবেন, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কোকাকোলার বোতল সরিয়ে পানি খেতে বলেছিলেন। তিনি আমাদের একটি গোপন মেসেজ দিতে চেয়েছিলেন। পানির অপরিহার্য কিছুই নেই। কেননা পানির অপর নাম জীবন।

বস্টন ইউনিভার্সিটির অফিশিয়াল ডেটা থেকে পাওয়া তথ্য মোতাবেক আপনি যদি রেগুলার সফট ড্রিংকস পান করেন আপনার ব্রেইন সাইজ ছোট হয়ে যেতে পারে। বস্টন ইউনিভার্সিটি, যা টপ ১০০ ইউনিভার্সিটিতে রয়েছে, Framingham Hear study-এর মাধ্যমে ডেটা সংগ্রহ করে Matthew PASE (Phd) এবং তার টিম রিসার্চ করেন ৪ হাজার মানুষের ওপর। যারা প্রতিদিন দুবার কোল্ড ড্রিংক পান করতেন, তাদের ব্রেইনের সাইজ এমআরআই রিপোর্টে আগের চেয়ে ছোট। এর সঙ্গে হিপ্পোক্যাম্পাসের সাইজও ছোট হয়ে গেছে এবং তাদের আগের তুলনায় মেমোরি দুর্বল। মানুষসহ অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর মস্তিষ্কের দুই পাশে দুটি হিপোক্যাম্পাস বর্তমান। এটি স্বল্পস্থায়ী স্মৃতির তথ্যসমূহকে একত্র করে দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিতে পরিণত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হিপোক্যাম্পাসের অবস্থান ব্রেইনের মেডিয়াল টেমপোরাল লোবে। কোমলপানীয় পানে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এ গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যারা ৪৫ থেকে ৬০ বছরের বয়স মধ্যে তাদের স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কাও বেড়ে যাচ্ছে।

জনপ্রিয় কোমলপানীয়তে ফসফরিক অ্যাসিড থাকে। হারপিকের মধ্যে ও ফসফরিক অ্যাসিড থাকে। এ অ্যাসিড দিয়ে সাধারণত পরিষ্কার করা হয়। কোমলপানীয়তে ফসফরিক অ্যাসিড, ক্যাফেইন, কার্বন-ডাইঅক্সাইড, কৃত্রিম চিনিসহ নানা ধরনের রাসায়নিক উপাদান মিশ্রণ করা হয়। অনেকেই মনে করেন, খাদ্য হজমে কৃত্রিম পানীয়ের ভূমিকা রয়েছে। আদতে এসব কোমলপানীয় সাময়িক স্বস্তি দিলেও এটি প্রকৃতপক্ষে পাকস্থলীর ভারসাম্য নষ্ট করে।

এছাড়া চিনিযুক্ত কোমলপানীয় গ্রহণের ফলে অতি স্থূলতাজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। আরো রয়েছে টাইপ-২ ডায়াবেটিস, দাঁতের গর্তজনিত ক্ষত এবং অপুষ্টিজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ারও আশঙ্কাও রয়ে যায়। এ ছাড়া শরীরের ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমিয়ে দেয় কোমলপানীয়। ফলে হাঁড়েও ক্ষয় হয়। গবেষণাগারে প্রাপ্ত ফলাফলে এ ধরনের অসুস্থতায় চিনিযুক্ত উপাদানের ব্যবহার ও প্রয়োগকেই দায়ী করা হয়েছে। কিছু কিছু কোমলপানীয়তে অত্যাবশকীয় উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয় ক্যাফেইন। ক্যাফেইনের ব্যবহারের ফলে অনিদ্রাজনিত রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

অন্য একটি গবেষণার ভিত্তিতে দেখা যায়, এসব পানীয় যাতে জমে না যায় কিংবা বরফ না হয়ে যায় সেজন্য এসব পানীয়তে ইথিলিন গ্লাইকল ব্যবহার করা হয়। ইথিলিন গ্লাইকল নামক রাসায়নিক উপাদানটি শরীরে নানা ধরনের বিরূপ প্রভাব ফেলে, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কিডনিতে পাথর হওয়া। কোমলপানীয় পানে ওজন বৃদ্ধির কথা অনেকে জেনে থাকলেও এর ব্যবহারের ফলে যে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও হ্রাস পায়, সে ব্যাপারে এখনো অনেকেই জানে না।

বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল দেখে বোঝাই যায় কোমলপানীয় নীরব ঘাতক হিসেবেই কাজ করে। আস্তে আস্তে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ও নানা রোগ সৃষ্টি করে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করছে।

লেখক : শিক্ষার্থী, জমজম ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, বরিশাল

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close