reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

রাজধানীর দূষণ রোধে চাই সমন্বিত পদক্ষেপ

রাজধানীর পরিবেশদূষণ নিয়ে লেখালেখি কম হয়নি। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে একই অবস্থা বিরাজমান। উচ্চ আদালত থেকে শুরু করে পরিবেশবিদরা পরিবেশের উন্নয়নে বিভিন্ন নির্দেশ ও পরামর্শ দিলেও তার কোনো কার্যকারিতা নেই। সংশ্লিøষ্টদের যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে দূষণের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বলা যায়, প্রায়ই রাজধানীর বায়ুদূষণ বিশ্বের মধ্যে শীর্ষ তালিকায় থাকে। তাতে নগরবাসী নানা ধরনের মারাত্মক রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে। ধুলোবালি, কার্বন-ডাইঅক্সাইড, মনোঅক্সাইড, সিসাসহ অন্যান্য বিষাক্ত পার্টিক্যালস বাতাসকে ভারী করে তুলেছে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, শিশু ও বৃদ্ধ। তারা শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগে সহজেই আক্রান্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় সুস্থ মানুষও দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছে।

বলা সংগত, ঢাকায় অতিমাত্রায় বায়ুদূষণ নিয়ে উদ্বিগ্ন দেশের পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। এই দূষণ নতুন নয়, বহু দিনের। কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটেছে রাজধানী ঢাকা মহানগরীতে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ২০২৩ সাল ছিল আট বছরের মধ্যে সবচেয়ে দূষিত বায়ুর বছর। স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বায়ুমান সূচকে ঢাকার গড় নম্বর ছিল ১৭১, যা আগের বছর ছিল ১৬৩। ক্যাপস বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, ২০১৬ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আট বছরে ঢাকার বায়ুমান নম্বর চার বছর (২০১৬, ২০১৭, ২০১৯ ও ২০২০) সংবেদনশীল গোষ্ঠীর (শিশু, প্রবীণ) জন্য অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে ছিল। সর্বশেষ তিন বছরসহ বাকি পাঁচ বছর ছিল অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে। আর শক্তি ফাউন্ডেশন জানায়, ধুলাবালুর কারণে কাপড়টির রং কত দ্রুত বদলায়, তা দেখে বায়ুদূষণ পরিস্থিতি বোঝা যায়। শুধু ঢাকায় নয়, ভারতের নয়াদিল্লি, বেঙ্গালুরু, লখেœৗ, মুম্বাই ও লুধিয়ানা এবং নেপালের কাঠমান্ডুতে এর আগে এভাবে বায়ুদূষণ পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা হয়েছে। গতকাল প্রতিদিনের সংবাদে প্রকাশিত ‘রাজধানীতে বায়ুদূষণ অতিমাত্রায়’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকায় বায়ুর মান বেশি খারাপ থাকে শীতে। বর্ষায় মোটামুটি গ্রহণযোগ্য থাকে। ২০১৯ সালের মার্চে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকার বায়ুদূষণের তিনটি প্রধান উৎস হলো- ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলো। বায়ুদূষণের এই পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক একিউআই সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সেটা সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং সতর্ক করে। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরোনো বাস উঠিয়ে নেওয়া, যানবাহনে কম দূষণকারী জ্বালানির ব্যবহার, দূষণকারী ইটভাটা বন্ধ করা, নির্মাণসামগ্রীর সঠিক ব্যবস্থাপনা ও শহরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর জোর না দিলে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।

বলা বাহুল্য, বায়ুদূষণ যেভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে, তা একক কোনো সংস্থার পক্ষে সম্ভব নয়। দরকার বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত পদক্ষেপ। পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি বিজ্ঞানভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। ঢাকার বায়ুদূষণ যে বাড়ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। দূষণের উৎসগুলোর মধ্যে আছে দূষিত বায়ুপ্রবাহ, রান্নার ধোঁয়া, কলকারখানার ধোঁয়া, যানবাহনের দূষণ। এই উৎসগুলো যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে হবে। পরিবেশদূষণের ক্ষতি তাৎক্ষণিকভাবে উপলব্ধি করা যায় না। এর নেতিবাচক প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। নীরব ঘাতক হয়ে মানুষকে অসুস্থতার দিকে ঠেলে দেয়। এই নীরব ঘাতক প্রতিহত করতে সরকার বাস্তব ও কার্যকর পদক্ষেপ নেবে- এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close