reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

চিকিৎসকের গাফিলতিতে আর কত মৃত্যু?

রাজধানীর মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার জেএস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে আহনাফ তাহমিদ (১০) নামের এক শিশুর খতনা করাতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে। স্বজনদের অভিযোগ, লোকাল অ্যানেস্থেসিয়া (আংশিক অচেতন) দেওয়ার কথা থাকলেও আহনাফকে দেওয়া হয় ফুল অ্যানেস্থেসিয়া। কিন্তু শিশুটির আর জ্ঞান ফিরে আসেনি।

এর আগে আয়ান আহমেদ নামে আরো এক শিশুর এভাবে মৃত্যু হয়েছিল। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর সাঁতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খতনার জন্য অজ্ঞান করা হয়েছিল আয়ানকে। খতনা করানোর পর ১১ ঘণ্টায়ও তার সংজ্ঞা না ফিরলে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে এনে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। সাত দিন সেখানে থাকার পর গত ৭ জানুয়ারি আয়ানকে মৃত ঘোষণা করা হয়। শিশুটির পরিবারের অভিযোগ ছিল, আংশিক অচেতন করে খতনা করানোর কথা থাকলেও চিকিৎসকরা আয়ানকে পুরোপুরি অজ্ঞান করেছিল। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ধানমন্ডির ল্যাবএইড হাসপাতালে মৃত্যু হয় এক তরুণের। সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, এন্ডোস্কোপি করাতে গিয়ে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাহিব রেজা (৩১) নামে ওই তরুণের মৃত্যু হয়। তার স্বজনদের অভিযোগ, ল্যাবএইড হাসপাতালে পরীক্ষার রিপোর্ট না দেখেই রাহিবকে অ্যানেস্থেসিয়া দেওয়া হয়েছিল। শারীরিক জটিলতার মধ্যেই এন্ডোস্কোপি করা হয়। যে কারণে তার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় এবং একপর্যায়ে শারীরিক অবস্থা আরো জটিল হয়ে মারা যান তিনি। ১৩ ফেব্রুয়ারি ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু হয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাহেদ আহমদ (৪০)। সিলেটের মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে তার ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে মারা যান বলে অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা। এই ঘটনাগুলো সাম্প্রদিক সময়ের।

ভুল চিকিৎসা বা চিকিৎসায় গাফিলতিতে মৃত্যুর এমন ঘটনা দেশে হরহামেশাই হচ্ছে। কিন্তু প্রতিকারের উদ্যোগের জায়গাটি প্রায় শূন্যই বলা চলে। আহনাফের মৃত্যুর পর জানা গেল, প্রতিষ্ঠানটির ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনার লাইসেন্স থাকলেও চিকিৎসা সেবা দেওয়ার লাইসেন্স ছিল না। লাইসেন্স ছিল না সাঁতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেরও, যেখানে আয়ানের মৃত্যু হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে কত মানুষের প্রাণ যাবে? আর কতই বা একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে? ভুল চিকিৎসা বা অপচিকিৎসায় যখন কারো মৃত্যু হয়, তখন জানা যায়, ওই হাসপাতালটির লাইসেন্স নেই। ভাবতে অবাক লাগে যে খোদ রাজধানীর অলি-গলিতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অবৈধ চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান, যেগুলো অসুস্থ মানুষকে সুস্থ করার পরিবর্তে মেরে ফেলে। নামিদামি হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধেও ভুল চিকিৎসার অভিযোগ কম নয়। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দেশের চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্র অতীতের তুলনায় উন্নত হলেও তা ধরে রাখার ব্যর্থতাই এখন মাথাব্যথার বিষয়। স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় যত, সেবার মান ততটা উন্নত নয়। চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবসাটাই যেন এখন মুখ্য হয়ে গেছে।

আহনাফের মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। ওই ঘটনায় তিনি ‘অত্যন্ত মর্মাহত’ বলে গত বুধবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী। আমরা মন্ত্রীর কথায় আস্থা রাখতে চাই। ভুল চিকিৎসা বা চিকিৎসায় গাফিলতিতে মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুতই তিনি ব্যবস্থা নেবেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। একই সঙ্গে চিকিৎসা খাতে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা রোধেও কঠোর ব্যবস্থা নেবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close