মোহাম্মদ আবদুর রহমান

  ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

দৃষ্টিপাত

মুসলিম বিশ্বের রাজনৈতিক বিভাজনে ভুগছে ফিলিস্তিন

ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে যারা জানি, তারা অবশ্যই লক্ষ করেছি যে, মুসলমানদের রাজনৈতিক ইতিহাস কতটা সমৃদ্ধ। মুহাম্মদ (সা.)-এর মদিনা ইসলামি রাষ্ট্র থেকে শুরু করে খেলাফত ছিল মুসলমানদের রাজনৈতিক ইতিহাসের স্বর্ণযুগ। খেলাফতের শেষ দিকে বিভিন্ন মতানৈক্যের কারণে তৈরি হয় রাজনৈতিক বিভাজন, তারপর উমাইয়া, আব্বাসীয় ও সর্বশেষ উসমানীয়রা খেলাফতের হাল ধরলেও মূল খেলাফত এর আগেই শেষ হয়েছিল চতুর্থ খলিফা আলী (রা.)-এর মধ্য দিয়ে। পরে উসমানীয়দের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে মুসলমানরা চূড়ান্তভাবে খেলাফতের সব চিহ্ন হারিয়ে ফেলে এবং চূড়ান্ত বিভক্তিও ত্বরান্বিত হয়। সেই বিভক্তির পর থেকে আজও মুসলমানরা একতাবদ্ধ হয়ে কোনো বিপক্ষ শত্রুর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারছে না। যার সমসাময়িক উদাহরণ হতে পারে ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানে মুসলিম বিশ্বের একতাবদ্ধভাবে কোনো শক্তিশালী পদক্ষেপ চোখে না পড়া। পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে মুসলমানরা কোনোভাবেই একতাবদ্ধভাবে কোনো পদক্ষেপ নিতে ভাবার আগেই চলে আসে নিজ দেশের স্বার্থের কথা অথবা অন্য মুসলিম রাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কথা। মুসলিম বিশ্বের মুসলমানরা অথবা নিপীড়িত ফিলিস্তিনিরা কার দিকে তাকিয়ে আছে? সৌদি আরবের দিকে, ইরানের দিকে, নাকি তুরস্কের দিকে? রাজনৈতিকভাবে ও সামরিকভাবে শক্তিশালী হলেও এদের মধ্যে নেই কোনো একতাবদ্ধ হয়ে বিপক্ষ শক্তির সঙ্গে লড়াই করার মনমানসিকতা। নিজ দেশ এবং নিজস্ব ভূখণ্ড অথবা নিজস্ব জনগণের কথা ভেবেই বৃহত্তর মুসলিম জনগোষ্ঠীর কথা এড়িয়ে যাচ্ছে সবাই। মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের জোট ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (OIC) থাকলেও নেই তাদের কোনো সামরিক শক্তি, নেই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। যদি ন্যাটোর (NATO) সঙ্গে তুলনা করা হয়, তাহলে ওআইসির দুর্বলতা ভালোভাবে বোঝা যাবে। প্রকৃতপক্ষে মুসলিম বিশ্বকে ভোগাচ্ছে মুসলিম বিশ্বের নেতাদের সদিচ্ছা, শুধু মুখ দিয়ে প্রতিবাদ করেই নিজেদের দায়িত্ব পালন করা হয়ে গেছে মনে করে চুপ হয়ে যান তারা। অথচ মুসলিম বিশ্ব তাকিয়ে থাকে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান অথবা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান অথবা ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনির দিকে। কেউ কেউ পাকিস্তানের ইমরান খানকেও এই কাতারে দাঁড় করিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি এখন নিজেই রাজনৈতিক সংকটে আছেন।

বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ। ৭ অক্টোবর থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, অথচ এই ইস্যু সমাধানে কোনো আশার পথ দেখা যাচ্ছে না। তাহলে মুসলিম বিশ্বের নেতারা আসলে করছেন কী? বর্তমানে লিবারেলিজমের দুনিয়ায় সরাসরি যুদ্ধে যাওয়ার চেয়ে কূটনৈতিক উপায়ে যেকোনো সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে থাকেন সবাই। মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো অভিযোগগুলো সংবাদমাধ্যমে উঠে এলেও পশ্চিমা বিশ্ব তেমন কোনো নজর দিচ্ছে না, আন্তর্জাতিক আদালত ইসরায়েলকে গণহত্যা বন্ধে নির্দেশ দিলেও এর কোনো প্রয়োগ হচ্ছে না, যুদ্ধ যেন তার স্বাভাবিক গতিতেই চলছে, আর মানবেতর জীবনযাপন করছে ফিলিস্তিনিরা। তাহলে কি এর সমাধান হবে না? দুই রাষ্ট্রভিত্তিক বিবিধ সমাধানের কথা অনেকে বললেও এর কার্যকরণ দেখা যাচ্ছে না এখনো। তাহলে কার্যকর পদক্ষেপ আর কী হতে পারে? ধর্মীয় বিশ্বাসের মধ্যে ভিন্নতা থাকলেও মুসলিমদের রাজনৈতিক বিভাজন এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভোগান্তির কারণ। আজকের সৌদি আরব, ইরান, মিসর, তুরস্ক ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো যদি এক হয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে, তাহলেই ফিলিস্তিন আবার স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখবে। ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে ইরান শিয়া রাষ্ট্র হলেও তারা কিন্তু সুন্নি বিশ্বাসের ফিলিস্তিনের পাশে আছে, সঙ্গে আছে ইয়েমেনও। তাহলে তো ফিলিস্তিন ইস্যুতে মুসলিম বিশ্বের রাজনৈতিক বিভাজন ভুলা সম্ভব। মুসলিম বিশ্বের নেতারা কি আদৌ রাজনৈতিক বিভাজন ভুলে এক হয়ে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াবে, নাকি মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসের সেই অনাগত ইমাম মাহদির অপেক্ষায় থাকতে হবে ফিলিস্তিনসহ বিশ্বের আরো বিভিন্ন স্থানের নিপীড়িত মুসলিমদের। হয়তো তত দিনে খুন হবে আরো হাজারো লাভো নিরপরাধ মানুষ, বাতাসে পাওয়া যাবে রক্তের গন্ধ, আর মুসলিম বিশ্বের নেতারা মুখের বুলি ছুড়ে দিয়েই নিজেদের স্বার্থের দিকে তাকিয়ে থাকবে!

লেখক : শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close