রেজাউল করিম খোকন

  ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

বিশ্লেষণ

কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানি প্রসঙ্গ

ইউরোপীয় ইউনিয়ন কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের নামিদামি ব্র্যান্ডের বিক্রয়কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশে তৈরি’ ট্যাগ লাগানো পোশাকের আধিক্য নতুন কিছু নয়। তবে মধ্যপ্রাচ্য, ইইউ, এমনকি আফ্রিকা অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের সুপারশপে এখন ‘বাংলাদেশে তৈরি’ প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের দেখাও মেলে। এই প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যই নতুন রপ্তানি খাত হিসেবে আশা দেখাচ্ছে। কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য অথবা কৃষিজাত পণ্য দেশের শীর্ষ পাঁচ রপ্তানি খাতের একটি। করোনার পর ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রথমবার এই খাতের রপ্তানি এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। পরের বছর সেটি বেড়ে ১১৬ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। যদিও বিদায়ি অর্থবছরে রপ্তানি ২৭ শতাংশ কমে ৮৪ কোটি ডলারে নেমেছে। এমন প্রেক্ষাপটে কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়াতে চায় সরকার। গত মাসে নতুন সরকারের প্রথম বৈঠকে রপ্তানি বহুমুখীকরণ এবং নতুন বাজার অনুসন্ধান করে সেখানে প্রবেশে কীভাবে সহায়তা করা যায়, সে বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ করে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য; পাট ও পাটজাত পণ্য এবং কৃষিজাত পণ্য- এই তিনটি খাতকে তৈরি পোশাকশিল্পের বিকাশে যেভাবে সহায়তা দেওয়া হয়েছিল, প্রয়োজনে সে রকম সহায়তা দিয়ে যেন বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে বড় সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে এ খাতে। তার মধ্যে অন্যতম প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উৎপাদনের জন্য বিভিন্ন ধরনের উপকরণ উচ্চ শুল্ক দিয়ে আমদানি করতে হয়। এ ক্ষেত্রে রপ্তানিমুখী কারখানা বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধায় এসব উপকরণ শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানি করে। অন্য কারখানাগুলো এই সুবিধা না পেলেও নগদ সহায়তা পায়। যদিও উন্নয়নশীল দেশ হলে নগদ সহায়তা থাকবে না। ফলে ছোট-বড় সব রপ্তানিকারকের জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় উপকরণ আমদানির সুযোগ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ থেকে কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব, জার্মানি, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্যসহ ১৪৪টি দেশে কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি হয়। কৃষিজাত পণ্যের মধ্যে রয়েছে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, তাজা ও হিমায়িত সবজি, ফলমূল ইত্যাদি। আর প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের মধ্যে মসলা, চানাচুর, ঝালমুড়ি, বিস্কুট, সস, জেলি, আলুপুরি, পাঁপড়, নুডলস, চকলেট, বিভিন্ন ধরনের আচার, জুস, ফ্রুট ড্রিংক, চিপসসহ বিভিন্ন পণ্য। কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য খাতের সম্ভাবনা নিয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক বাজারের আকার ছিল ১৩ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন বা ১৩ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। আর গত বছর বাংলাদেশের প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের বাজার (দেশীয় চাহিদা ও রপ্তানি) ছিল ৪৮০ কোটি ডলারের। আর কৃষিপণ্যের বাজার ছিল ৪ হাজার ৭৫৪ কোটি ডলারের।

দেশে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের প্রায় এক হাজার কারখানা রয়েছে। তার মধ্যে ৯০ শতাংশই অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র। বাকি ১০ শতাংশ মাঝারি ও বড়। এর মধ্যে রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ২৫০ কারখানা। আমাদের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য উৎপাদনে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিনিয়ত শিখছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা মাঝেমধ্যে কারখানা পরিদর্শনে এসে কোনো ত্রুটিবিচ্যুতি পেলে উদ্যোক্তাদের জরিমানা করেন। এ ক্ষেত্রে তারা ত্রুটি চিহ্নিত করার পর তা সংশোধনের জন্য উদ্যোক্তাদের যদি সময় বেঁধে দেন এবং সেই সময় পর আবার পরিদর্শন করে যাচাই করেন, তাহলে তারা এগিয়ে যাবে। এ ছাড়া প্যাকেজিং বা মোড়ক পণ্য এবং বিভিন্ন ধরনের উপকরণ আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হয়, তাহলে কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত পণ্যের রপ্তানি দ্বিগুণ করা সম্ভব। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছর ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানির মধ্যে কৃষিজাত খাদ্যপণ্যের হিস্যা ছিল দেড় শতাংশ। বাংলাদেশ এক বিলিয়ন ডলারের কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি করলেও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত এ ক্ষেত্রে বেশ এগিয়ে আছে। ভারতের কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্যানুযায়ী, বিদায়ি ২০২২-২৩ অর্থবছর ভারত শুধু প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানি করেছে ৭৪০ কোটি ডলারের। তার মধ্যে আমের পাল্প ১৫, প্রক্রিয়াজাত করা সবজি ৬২, প্রক্রিয়াজাত করা ফল ও জুস ৫৯, নারকেলের পণ্য রয়েছে ১৫ কোটি ডলারের। বর্তমানে বিশ্বের ২০টি দেশে বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, পানীয় ও মসলা রপ্তানি করে চট্টগ্রামভিত্তিক কোম্পানি হিফস অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ। গত বছর প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানি ছিল ৩২ লাখ মার্কিন ডলার। দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানিকারক প্রাণ গ্রুপ। তারা জুস অ্যান্ড ড্রিংকস, স্ন্যাক্স, বিস্কুট, কালিনারি, কনফেকশনারি, ফ্রোজেন ফুডসসহ বিভিন্ন পণ্য ভারত, সৌদি আরব, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, ইউকে ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে। প্রাণ গ্রুপের বার্ষিক পণ্য রপ্তানি ৩০ কোটি ডলারের। তবে খুব সহজেই সেটিকে ৩০ বিলিয়নে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এক দশক আগে ড্রাই ফুড বা শুকনো খাদ্যপণ্য রপ্তানির বাজারে ছিল হাতে গোনা কয়েকটি শিল্পগোষ্ঠী। প্রাণ-আরএফএল, স্কয়ার গ্রুপ, এসিআই ফুডসসহ কয়েকটি শিল্প গ্রুপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এই বাজার। তবে বৈশ্বিক বাজারকে সামনে রেখে গত কয়েক বছরে রপ্তানিতে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন শিল্প গ্রুপ। এসব শিল্প গ্রুপ এত দিন দেশের বাজারে খাদ্যপণ্য বাজারজাত করে আসছিল। দেশীয় বাজারের পাশাপাশি এখন রপ্তানিতে নজর দিয়েছে তারা। আবার দেশে ডলার-সংকট তৈরি হওয়ায় গ্রুপগুলো রপ্তানি বাড়াতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এখনো কোম্পানিগুলোর অন্যতম লক্ষ্য বিদেশে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশিদের বাজার। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, এক দশক আগে ২০১২-১৩ অর্থবছরে শুকনো খাদ্যপণ্যের রপ্তানি ছিল ৪ কোটি ৫২ লাখ মার্কিন ডলারের। ১৭২ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বিশ্বের ৪৩টি দেশে খাদ্যপণ্য রপ্তানি করে। এক দশকের ব্যবধানে ২০২২-২৩ অর্থবছরে শুকনো খাদ্যপণ্য রপ্তানি বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ কোটি ডলারে। বর্তমানে বিশ্বের ৯৩টি দেশে এসব খাদ্যপণ্য রপ্তানি করে ২১২টি প্রতিষ্ঠান। রপ্তানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিস্কুট, কেক, মুড়ি, সেমাই, নুডলস, রুটি-পরোটা ইত্যাদি।

খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে দীর্ঘ সময় ধরে এককভাবে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। গত অর্থবছরও রপ্তানি হওয়া শুকনো খাদ্যপণ্যের ৪৯ শতাংশ একাই রপ্তানি করেছে গ্রুপটি। গত এক দশকে শুকনো খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে যুক্ত হয়েছে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, আবুল খায়ের গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, ইস্পাহানি গ্রুপ, বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ, টি কে গ্রুপ, আকিজ রিসোর্সেস ও সামুদা গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠান। এসব বড় গ্রুপের পাশাপাশি ছোট ও মাঝারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও এসব পণ্য রপ্তানি করে আসছে। মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ (এমজিআই) দেড় বছর ধরে খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে নজর দিয়েছে। গ্রুপটি তিন বছর আগে মেঘনা অর্থনৈতিক অঞ্চলে মেঘনা নুডলস অ্যান্ড বিস্কুট কারখানা নামে খাদ্যপণ্য তৈরির কারখানা চালু করেছে। এ কারখানা থেকে রপ্তানি শুরু হয়েছে গত অর্থবছর। বড় শিল্প গ্রুপের মধ্যে এক বছর আগে শুকনো খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে যুক্ত হয়েছে টি কে গ্রুপ। গ্রুপটি দেশে পুষ্টি ব্র্যান্ডের খাদ্যপণ্য বাজারজাত করে আসছে। রপ্তানির শুরুতে গ্রুপটি মধ্যপ্রাচ্য ও ভারতে বিস্কুট, চানাচুর, সেমাইসহ নানা ধরনের খাদ্যপণ্য রপ্তানি করে। গ্রুপটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান সামুদা গ্রুপও খাদ্যপণ্য রপ্তানি শুরু করেছে। আগে দেশের বাজারেই শুকনো খাদ্যপণ্য বাজারজাত করে আসছিল তারা। এখন মূল্য সংযোজনের জন্যই বছরখানেক ধরে রপ্তানিতে যুক্ত হয়েছে। মূলত প্রবাসী বাংলাদেশিদের লক্ষ্য করেই তাদের এই রপ্তানি। সিটি গ্রুপ আগে কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি করলেও শুকনো খাদ্যপণ্য রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গত অর্থবছর থেকে। বিস্কুট, মুড়িসহ নানা রকমের শুকনো খাদ্যপণ্য রপ্তানি করছে গ্রুপটি। আকিজ রিসোর্সেস লিমিটেডও এক বছর আগে শুকনো খাদ্যপণ্য রপ্তানি শুরু করেছে। মূলত খাদ্যশস্য, আটা, ময়দা, আলু ও দুধ এসব এক বা একাধিক উপকরণ দিয়ে তৈরি হয় শুকনো খাদ্যপণ্য। খাদ্যপণ্য তৈরির কাঁচামালের বড় অংশই দেশে উৎপাদিত হয়। খাদ্যপণ্য তৈরির প্রধান উপকরণ গম এখনো আমদানিনির্ভর। বাকিগুলো দেশেই উৎপাদিত হয়।

রপ্তানিতে কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্যের একটি উপখাত হলো শুকনো খাদ্যপণ্য। কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজত পণ্যের রপ্তানি বিলিয়ন ডলার থেকে কমে গত অর্থবছর ৮৪ কোটি ৩০ লাখ ডলারে নেমে আসে। এর মধ্যে শুকনো খাদ্যপণ্য রপ্তানি ছিল ২০ কোটি ডলার। এই খাতের রপ্তানি বাড়ছে। শুকনো খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক বাজার অনেক বড়। সে তুলনায় এই খাতে বাংলাদেশের অবস্থান এখনো নিচের সারিতে। তবে বড় শিল্প গ্রুপগুলো এই খাতের রপ্তানিতে যুক্ত হওয়ায় এই খাতে রপ্তানি আয় বাড়ার সম্ভাবনা দেখছেন উদ্যোক্তারা। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্রের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে শুকনো খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক বাজার ছিল ৯ হাজার ৭৭১ কোটি ডলারের। ২০২২ সালে বৈশ্বিক তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৬৪তম। এক দশক আগে ২০১৩ সালে শুকনো খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৭৭তম। দেশের বড় শিল্প গ্রুপগুলো খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে এমন সময়ে জোর দিয়েছে, যখন রপ্তানিতে নগদ সহায়তা কমিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ-সংক্রান্ত জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশ হবে। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার বিধিবিধান অনুসারে কোনো ধরনের রপ্তানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা দেওয়া যায় না। তবে এলডিসি থেকে উত্তরণের পর একবারে নগদ সহায়তা প্রত্যাহার করা হলে রপ্তানি খাত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, কৃষিপণ্য ও প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যে নগদ সহায়তা ২০ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ আগে ১০০ টাকার পণ্য রপ্তানি করলে ২০ টাকা প্রণোদনা পেতেন রপ্তানিকারকরা। এখন পাবেন ১৫ টাকা। প্রণোদনা কমানোর কারণে উদ্যোক্তারা হোঁচট খাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, শুকনো খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশ এখনো বিশ্বে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারেনি। গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে। এ কারণে এই খাতের উদ্যোক্তাদের সরকারের সহযোগিতা দরকার।

রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে জোর দিতে হবে। খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক বাজার অনেক বড়। তবে সীমাবদ্ধতাও আছে। উদ্যোক্তারা এগিয়ে এলে ও সরকারি সহায়তা দেওয়া হলে এটি রপ্তানির সম্ভাবনাময় খাত হয়ে উঠবে। প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশে অনেক শিল্প-কারখানা গড়ে উঠবে। তার জন্য কয়েকটি ফসলকে টার্গেট করে উৎপাদন বাড়াতে হবে। তা ছাড়া শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল আনার জন্য ছোট, মাঝারি ও বড় কারখানাকে সুযোগ দিতে হবে। এটি করা গেলে উদ্যোক্তাদের নগদ সহায়তার কোনো প্রয়োজন হবে না। কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের রপ্তানিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা অসীম। তবে আমরা এখনো সম্ভাবনার ১ শতাংশও কাজে লাগাতে পারিনি। শুকনো খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক রপ্তানির বাজার বিশাল। বড় শিল্প গ্রুপগুলো শুকনো খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে নজর দিয়েছে, এটি ইতিবাচক দিক। এতে সামনে রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আরো বাড়তে পারে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংস্থার বিধিবিধানের কারণে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ হলে নগদ সহায়তা দেওয়া যায় না। এ জন্য এই খাতে বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় ছোট-মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলোও যাতে টিকে থাকতে পারে, সে জন্য ভারতের মতো কৌশল নেওয়া যায়। যেমন : সরাসরি প্রণোদনা না দিয়ে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা, রপ্তানি বাজার ধরার জন্য সহযোগিতা করা যায়। রপ্তানি আয় বাড়াতে নানামুখী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের মধ্যে রপ্তানি বাণিজ্যকে সীমাবদ্ধ না রেখে বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানির উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পৃথিবীর কোন দেশে কোন ধরনের পণ্যের পণ্য চাহিদা রয়েছে তা জানতে হবে। এ জন্য বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। বিভিন্ন দেশের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। এ জন্য আমাদের রপ্তানিকারকদের নিজস্ব উদ্যোগের প্রয়োজন রয়েছে। বর্তমানে যেসব দেশের সঙ্গে আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য চালু রয়েছে, তার বাইরে আরো নতুন দেশে বাজার খোঁজার চেষ্টা জোরালো করতে হবে। রপ্তানি বাণিজ্যের বিকাশ ঘটাতে হলে আমাদের উৎপাদিত পণ্যের মান উন্নত করতে হবে। আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার কারণে বাংলাদেশি বিভিন্ন ধরনের পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে বিভিন্ন দেশে। বিশেষ করে খাদ্য ও কৃষিজাত শিল্পপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের পণ্য আন্তর্জাতিক খ্যাতি পাওয়ায় এর বাজার বিস্তৃতির উজ্জ্বল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ এবং নতুন বাজার সৃষ্টির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। সময়োপযোগী, কার্যকর, বাস্তবমুখী পরিকল্পনা গ্রহণ একান্ত প্রয়োজন এ জন্য। সরকারি দপ্তরগুলো হয়রানি আমলতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা এবং জটিলতা অনেক সময় রপ্তানিমুখী শিল্প খাতগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এ ধরনের হয়রানি, দীর্ঘসূত্রতা, প্রশাসনিক জটিলতা দূরীকরণে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কৃষিপণ্য রপ্তানিতে বিদ্যমান বাধা দূর করতে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করে তা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে। এর মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতি ভিন্ন উচ্চতায় পৌঁছে যাবে সন্দেহ নেই। এটা অর্থনীতিতে নতুন গতি এনে দিতে পারে।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার, কলাম লেখক

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close