জান্নাতুল মাওয়া সাবিরা

  ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

মুক্তমত

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাধা

বাংলাদেশ বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ। বর্তমানে বাংলাদেশে একটি উন্নয়নশীল দেশে কাতারে অবস্থিত। তবে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে আর্থসামাজিক ও অনেক সমস্যার মূলে রয়েছে জনসংখাধিক্য। এ জন্যই বাংলাদেশে জনসংখ্যাকে সামাজিক অথবা অথনৈতিক উভয় ক্ষেত্রেই এক নম্বর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে এ কথা সত্য, এই জনসংখ্যাকে সম্পদে রূপান্তরিত করতে পারলে তা হবে উন্নয়নে সহায়ক। যদিও জনসংখ্যা একটি সক্রিয় উপাদান। দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ এবং জনসম্পদ- উভয়ের সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক গতি ত্বরান্বিত করা সম্ভব। কেননা জনসম্পদ ও কর্মদক্ষতার উৎস হলো জনসংখ্যা।

বাংলাদেশের জনসংখ্যা ২০২২ জনশুমারি অনুযায়ী জুন, ২০২২ পর্যন্ত ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। এখানে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ১ হাজার ১১৯ জন, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ (কিছু দ্বীপ ও নগর রাষ্ট্র বাদে)। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। পুরুষ ও নারীর অনুপাত ১০০ দশমিক ৩ : ১০০। দেশের অধিকাংশ মানুষ শিশু ও তরুণ বয়সি। এখানকার পুরুষ ও মহিলাদের গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৩ বছর। জাতিগতভাবে বাংলাদেশের ৯৮ শতাংশ মানুষ বাঙালি। বাকি ২ শতাংশ বিহারি বংশোদ্ভূত অথবা বিভিন্ন উপজাতির সদস্য। পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় ১৩টি উপজাতি রয়েছে। এদের মধ্যে চাকমা উপজাতি প্রধান। পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরের উপজাতিগুলোর মধ্যে গারো ও সাঁওতাল উল্লেখযোগ্য।

তবে জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ। আর এক তথ্য মতে, ১৬ কোটি ৯৮ লাখ। আর এ থেকে বোঝা যায়, জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান হার।

একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে জনসংখ্যার গুরুত্ব রয়েছে, তবে এ ক্ষেত্রে জনসংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকলে তা আবাসন ও পেশার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা সৃষ্টি করে। ধরে নেওয়া যাক, কোনো দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ প্রচুর পরিমাণে রয়েছে, তবু সীমিত পরিমাণ জনসংখ্যা না থাকার কারণে সেখানে প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার যেমন সম্ভব হয় না, তেমনি অতিরিক্ত জনসংখ্যা দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কারণ এখানে একটা জিনিস লক্ষ করা যায়। প্রাকৃতিক সম্পদ অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক ধরনের নিয়ামক। কিন্তু অতিরিক্ত জনসংখ্যার কারণে তার যথাযথ ব্যবহার সম্ভব হয় না। একদিকে মানুষ তার যথাসম্ভব ব্যবহার করছে, তো অন্যদিকে প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষতি করছে। অন্যদিকে পরিবেশ দূষণের কাজ তো অহরহ চলছেই। আর এটিই অধিক পরিমাণ।

জনসংখ্যা ও ভূমির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি সম্পর্ক হলো এই যে, যখন দেশের ভূমির ওপর অধিক জনসংখ্যার চাপ পড়ে, ঠিক তখনই মাথাপিছুর পরিমাণ কম হয়, উৎপাদন ও সঞ্চয় হ্রাস পায় এবং ভোগ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে জনসংখ্যার তুলনায় জমি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ বেশি থাকলে মাথাপিছু উৎপাদন বৃদ্ধি পায় আয় ও সঞ্চয় বেড়ে যায়।

বর্তমানে সরকারের গৃহীত সব ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ও অর্থনৈতিক মুক্তি অথবা প্রবৃদ্ধি অর্জন এর কোনোটির সফল বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, যদি না সরকার এ দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও সর্বত্র সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার পদক্ষেপ গ্রহণ না করেন? দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও সুশাসন বাস্তবায়নের মাধ্যমেই দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা এর বিশাল জনগোষ্ঠী, যা তার ভৌগোলিক আয়তন ও প্রাকৃতিক সম্পদের তুলনায় কল্পনাতীতভাবে বিশাল। বর্তমানে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে সরকারের গৃহীত নানামুখী উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, সেই সঙ্গে পরিবেশের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ আমাদের রাজধানী ঢাকা। বর্তমানে সরকারের গৃহীত সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও অর্থনৈতিক মুক্তি যাই বলি না কেন, এর কোনোটিই অর্জন করা সম্ভব নয়, যদি না দেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি।

ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে মানুষের মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থানসহ রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে জনসাধারণ। ফলে সমাজে বাড়ছে দারিদ্র্য, বেকারত্ব, বাসস্থান সংকট, খাদ্য সমস্যা, অপরাধ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, অপুষ্টি, পতিতাবৃত্তি, ভিক্ষাবৃত্তি, মাদকাসক্তি, নিরাপত্তাহীনতাসহ আরো নানা সামাজিক সমস্যা। তবে ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে যেসব পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল, তা সত্যিই প্রংশসার দাবিদার। এখন যদি সরকার দেশের ক্রমবর্ধমান ভয়াবহ জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে, তবেই জাতিকে অর্থনৈতিকভাবে মুক্তি করা সম্ভব হবে, অন্যথায় নয়।

আমাদের মনে রাখতে হবে, জন্মনিয়ন্ত্রণ ও পরিকল্পিত ছোট পরিবার সৃষ্টির মাধ্যমেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব। তাই এ দেশের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সরকার, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট মহল ও বিশেষ করে জনগণকে আরো অধিক সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি অধিক জনসংখ্যা রোধকল্পে ঘরে ঘরে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এরপরও যদি সরকার তথা জনগণ এই আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারে, তবে এ দেশের জনগণ চরমভাবে বিপর্যস্ত হবে, সেই সঙ্গে দেশের যাবতীয় কার্যক্রম একসময় স্থবির হয়ে পড়বে। তাই সরকার তথা দেশবাসীকে যত দ্রুত সম্ভব দেশে বিরাজমান সিংহভাগ সমস্যা সমাধানে জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close